শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০১৪

স্বাচিপ নেতা কারাগারে রাজশাহীতে চিকিৎসকদের ধর্মঘট চলছে

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » স্বাচিপ নেতা কারাগারে রাজশাহীতে চিকিৎসকদের ধর্মঘট চলছে
শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০১৪



image_30257_0.jpgডেস্ক রিপোর্টঃতাঁরক্লিনিকে একের পর এক রোগী মরেছে ভুল চিকিত্সায়। সামান্য হাত ভাঙার ব্যান্ডেজ করাতে এসেও মারা গেছে শিশু। একইভাবে পা ভাঙার অপারেশন করতে গিয়ে ভুল চিকিত্সায় মেরে ফেলা হয়েছে ব্যবসায়ীকে। তার আগেও বিভিন্ন সময়ে মরেছে অন্তত ডজন খানেক রোগী। প্রতিটি মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ কামিয়েছে দুই পয়সা। কখনো কখনো মৃতের পরিবারকে আর্থিকভাবে ক্ষতিপূরণ দিয়ে মীমাংসা করে নেওয়া হয়েছে। এভাবে বারবারই নামমাত্র চিকিত্সা সেবা দিতে গিয়ে রোগী মেরে ফেলেও বহাল তবিয়তে থেকে গেছেন তিনি। কারণ তিনি স্বাধীনতা চিকিত্সক পরিষদ ও বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়শনের নেতা।
ডা. শামিউল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল নামের এই স্বাচিপ নেতার ক্লিনিকে রোগী মরতেই পারে। তবে এ নিয়ে কোনো মামলা করা চলবে না। এতদিন এই নিয়মই বহাল ছিলো। তবে সর্বশেষ সে নিয়ম ভেঙে ব্যবসায়ী আনোয়ারুল হক পিন্টুর পা ভাঙার অপারেশন করাতে গিয়ে মেরে ফেলার পর পিন্টুর স্ত্রী বাদী হয়ে ক্লিনিক মালিক ডা. শামিউল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুলসহ অজ্ঞাত তিন চিকিত্সককে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। তবে তাতে বাধ সাধেন আদালত।
প্রসঙ্গত, রাজশাহী মহানগর মুখ্য হাকিম আদালত গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই মামলার শুনানি শেষে ডা. শিমুলকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর প্রতিবাদে স্বাধীনতা চিকিত্সক পরিষদ ও বিএমএর পক্ষ থেকে রাজশাহীতে ওইদিন বিকেল ৪টা থেকে সকল বেসরকারি হাসাপাকাল, ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ডাকে। সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন ডেকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও ধর্মঘট ডাকা হয়। এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি নগরীর ডলফিন ক্লিনিকে অপারেশনের পর রোগী আনোয়ারুল হক পিন্টুর (৩৫) মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পিন্টুর স্ত্রী শারিমন আক্তার ওইদিন রাতেই ডা. শিমুলসহ অজ্ঞাত তিন চিকিত্সককে আসামি করে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা করেন।আজ সকাল ৯টার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিজের ভাইকে ভর্তি করানোর পর চিকিত্সক না থাকায় চিকিত্সা সেবা না পেয়ে মজিবুর রহমান নামের এক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একটি বেসরকারি হাসপাতালের মালিক ও চিকিত্সককে নিয়ে সরকারি হাসপাতালের অন্য চিকিত্সকরা যা শুরু করেছেন-তা যেন নৈরাজ্য। এ নৈরাজ্য চলতে পারে না। ওই ক্লিনিক মালকদের শাস্তি হওয়া দরকার।” তাঁকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনা নিয়ে চিকিত্সকরা রোগীদের জিম্মি করতে পারেন না। এর ইন্ধনদাতাদের বিরুদ্ধেও সরকারের পক্ষ থেকে এগিয়ে আসা উচিত বলে মন্তব্য করেন ওই রোগী।

সকাল ১০টার দিকে জিলিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিজের চিকিত্সার জন্য এসেছিলেন রাজশাহীর তানোরের শরিফুল ইসলাম। এসেই তিনি জানতে পারেন, আজ কোনো চিকিত্সক বসবেন না। কবে বসবেন তাও বলতে পারছেন না সেখানকার কর্মচারীরা। শুধু তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, “ডা. শিমুল জামিন না পেলে ধর্মঘট চলবে। ততদিন কোনো রোগী দেখা হবে না।” ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মচারীদের এমন কথা শুনে অনেকটা হতাশ হয়েই বাড়ি ফিরতে শুরু করেন শরিফুল ইসলাম। যাওয়ার সময় এ প্রতিবেককে বলেন, এভাবে কোনো দেশ চলতে পারে না। চিকত্সার নামে এ অব্যবস্থাপনা দূর হওয়া দরকার। কিছু কিছু চিকিত্সক তো এমনিতেই রোগীদের জিম্মি করে রাখেন। আবার একসঙ্গে রাজশাহীর হাজার হাজার রোগীকে জিম্মি করে রেখেছেন তাঁরা। যারা এভাবে রোগী জিম্মির সঙ্গে জড়িত তদের বিচার হওয়া দরকার।”

একই দাবি করেন, নগরীর মুক্তি ক্লিনিকে চিকিত্সা নিতে আসা রোগীর স্বজন আদিলুর রহমান। তিনি বলেন, “রোগী চিকিত্সা অবহেলায় মারা যাবে-আর তার বিচার পাওয়া যাবে না, বা বিচার হবে না-সেটা হয় না। ধর্মঘট ডেকে চিকিত্সা সেবা অচল করারও অধিকার কেউ রাখে না।”

এদিকে, আজ সকালে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ নগরীর বিভিন্ন ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, রামেক ছাড়া সবগুলো চিকিত্সাকেন্দ্রের সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রামেকে চিকিত্সা সেবা চলছে নামে মাত্র। ধর্মঘটের কারণে সেখানেও চিকিত্সকরা না থাকায় চিকিত্সা সেবা ব্যহত হচ্ছে। আবার বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও ঝুলছে তালা। এই অবস্থায় জরুরি রোগীরা এসে চরম বিড়ম্বনায় পড়ছেন। এভাবে চলতে থাকলে রোগী মৃত্যুহার হঠাৎ বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন চিকিত্সার সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বাংলাদেশ সময়: ১১:৩৬:০৫   ৩৬৮ বার পঠিত