মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০১৪

হংকং-দুঃখ ভুলতে বড় কিছুর অপেক্ষা

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » হংকং-দুঃখ ভুলতে বড় কিছুর অপেক্ষা
মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০১৪



53309564bbb4c-43.jpgবঙ্গ-নিউজ ডটকমঃমাশরাফি বিন মুর্তজাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না। না নেট প্র্যাকটিসে, না মাঠে। মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ল গুঞ্জন। তবে কি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাশরাফি নেই! বুকের ব্যথাটা তাঁর বেড়েছে নিশ্চয়ই।
ইনডোর অনুশীলনের ফাঁকে ফিজিও বিভব সিংকে পেতেই রহস্যের জট খুলল, ‘না, না, মাশরাফি ঠিকই আছে। তবে অন্যদের চেয়ে ওর প্র্যাকটিসের প্রোগ্রাম আলাদা। আজ (গতকাল) তার এমনিতেও বোলিং করার কথা ছিল না। ওয়ার্মআপ করেছে, পুনর্বাসন চলছে। সব ঠিক থাকলে কাল (আজ) খেলবে।’ পরে সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমও বললেন, ‘মাশরাফি ভাইয়ের অবস্থা যদি ফিফটি-ফিফটিও হয়, তাহলেও উনি খেলার জন্য প্রস্তুত থাকবেন। চোটটা আর না বাড়িয়ে বা ব্যথা সহ্য করে যদি খেলতে পারেন তো খেলবেন।’
মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচ শুরু আজ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়। তার আগে নতুন কোনো সমস্যা না হলে ব্যথানাশক ইনজেকশন নিয়ে খেলে ফেলবেন মাশরাফি। সঙ্গে আল আমিন তো থাকছেনই, অতিরিক্ত পেসার হিসেবে থাকতে পারেন জিয়াউর রহমানও। আঙুলে ব্যথা পেয়ে রুবেল হোসেন ছিটকে যাওয়ার পর জিয়া দলে এসেছেন। শোনা যাচ্ছে ফরহাদ রেজার জায়গা নেবেন। ক্রিস গেইলের বিপক্ষে যেহেতু সুখস্মৃতি আছে, অফস্পিনার সোহাগ গাজীরও খেলার ভালো সম্ভাবনা। সে ক্ষেত্রে ‘বিশ্রামে’ যেতে পারেন আবদুর রাজ্জাক বা নাসির হোসেন।সংবাদ সম্মেলনে বলা মুশফিকের কথাগুলো জুড়ে দিলে এসব সম্ভাবনা আরও বাস্তব হয়ে ফুটে উঠবে। ‘জিয়া ভাই এসেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সোহাগের ভালো স্মৃতি আছে। উইকেটে একটু সহায়তা থাকলে ওর খেলার সম্ভাবনা অনেক বেশি। জিয়া ভাইও খেলতে পারেন। লোয়ার অর্ডারে একজন বিগ হিটার বা ফিনিশার প্রয়োজন, সেদিক থেকে সব ঠিক থাকলে হয়তো দুজনই খেলতে পারেন’-বলছিলেন মুশফিক। দলে পরিবর্তন হতে পারে আরও একটা, সাব্বির রহমানের জায়গায় শামসুর রহমান অথবা মুমিনুল হক।
কিন্তু এক হারেই এত পরিবর্তন! পরিবর্তনগুলো নিশ্চিত না করলেও কাল অনুশীলন দেখতে এসে প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ বলছিলেন, ‘হংকংয়ের কাছে হেরেছে বলেই যে দলে ঢালাওভাবে পরিবর্তন আনতে হবে, আমরা তা মনে করি না। তবে হ্যাঁ, কোনো জায়গায় পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়লে অবশ্যই তা করা হবে।’
হংকং-ট্র্যাজেডির পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টেন পর্বের শুরুতে বাংলাদেশ আজ সতর্ক। পচা শামুকে পা কাটার দুঃখ ভুলতে বড় কোনো শিকারের আশায় আছে দল। ভারত, অস্ট্রেলিয়া বা পাকিস্তানের চেয়ে সম্ভাব্য শিকার হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজই বেশি কাঙ্ক্ষিত। টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে এই দলটার বিপক্ষে বাংলাদেশের অতীতও ভালো। চার ম্যাচে দুটি করে জয় দুই দলের। জোহানেসবার্গে ২০০৭ বিশ্বকাপের ম্যাচটা জিতেছিল বাংলাদেশ, ২০০৯ সালে সেন্ট কিটসে জেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০১১ সালে ঢাকায় বাংলাদেশ জেতার পর ২০১২ সালে ঢাকায় আবারও জেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জয়-হার-জয়-হার…এই ধারাবাহিকতা মানলে আজ তো বাংলাদেশের জয়ভাগ্য!
বাংলাদেশ দল অবশ্য ভাগ্যদেবীর আশায় বসে থাকছে না। ভাগ্য ছাড়া হাতে বাকি যে রসদ আছে, ক্যারিবীয় শত্রু ঘায়েলে সেসবকেই যথেষ্ট মনে করছেন অধিনায়ক, ‘নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারলে যত বড় দলই হোক, জেতা অসম্ভব নয়। আমরা হয়তো ওদের পাওয়ারের সঙ্গে পারব না, কিন্তু আমাদের সামর্থ্য-দক্ষতা দুটিই আছে, খেলাটাও হবে আমাদের কন্ডিশনে।’ কন্ডিশনের কথা বললে অবশ্য গত দুই দিনের দমকা হাওয়া আর হালকা বৃষ্টির কথাও এসে যায়। আজও আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এসব আছে বলে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের কন্ডিশন শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়াবে, সেটা সময়ের হাতেই তোলা। তবে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এখন পর্যন্ত হওয়া ম্যাচগুলোতে একটা জিনিস পরিষ্কার-দিনের ম্যাচের তুলনায় রাতের ম্যাচগুলোতে রান কম হচ্ছে। ব্যাপারটা খেয়াল করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোচ ওটিস গিবসনও। কাল ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে দলের প্রতিনিধি হয়ে এসে বললেন, ‘রাতে অনেক বেশি সুইং হচ্ছে, যেটা ভারতীয় বোলাররা করে দেখাল। ম্যাচের এগারো জন ঠিক করার সময় এটা আমাদের মাথায় থাকবে। রামপল এবং কটরেল আছে আমাদের দলে, দুজনই অসাধারণ বোলার।’
আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিংয়ের কথা বললে সবার আগে আসে ক্রিস গেইলের নাম। বিপিএলের সৌজন্যে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ‘গেইল দানবে’র সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে বাংলাদেশের দর্শকের। তবে মজার ব্যাপার হলো টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ সামনে দাঁড়ালেই কেমন যেন চুপসে যান গেইল! বাংলাদেশের বিপক্ষে দুটি টি-টোয়েন্টিতে তাঁর রান ০ আর ৬। তারপরও গেইল গেইল-ই। আগে পারেননি বলে আজও পারবেন না, এমন তো কোনো নিয়ম নেই! দানব হয়ে উঠতে পারেন যেকোনো ম্যাচেই। বাংলাদেশ দলের রণপরিকল্পনায় গেইল বধই তাই সবচেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে এবং এই পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হয়ে উঠতে পারেন অফ স্পিনার সোহাগ গাজীও, যদি তিনি থাকেন। টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে ২০১২ সালের সিরিজে মোট ১০ ইনিংস ব্যাট করে ৯ বার আউট হয়েছেন গেইল, তিন বারই সোহাগের বলে।
ক্রিস গেইল ব্যাপারটাকে পাত্তা দেন আর না দেন, বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের আড়ালে গেইল-সোহাগ লড়াইটা কিন্তু থাকেই।

বাংলাদেশ সময়: ১২:১৯:৫৪   ৫৩০ বার পঠিত