সোমবার, ১৭ মার্চ ২০১৪
২৫ শতাংশ গার্মেন্টসে সাপ্তাহিক ছুটি নেই
Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » ২৫ শতাংশ গার্মেন্টসে সাপ্তাহিক ছুটি নেইবঙ্গ-নিউজঃ শ্রম আইনে সপ্তাহে একদিন ছুটির কথা বলা হলেও ২৫ শতাংশ গার্মেন্টের শ্রমিকরাই ছুটি পান না। ছুটির কথা বললেই মালিকরা চাকরিচ্যুতির হুমকি দেন। তাই বাধ্য হয়েই শ্রমিকদের ছুটির দিনেও কাজ করতে হয়।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশন জানায়, ২০০৬ সালের শ্রম আইন অনুযায়ী একজন শ্রমিককে সপ্তাহে একদিন ছুটি দেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু বেশিরভাগ কারখানার শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন, মালিকপক্ষ তাদের সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও কাজ করতে বাধ্য করছেন।
মাসে চারদিন সাপ্তাহিক ছুটি পাওয়ার কথা একজন শ্রমিকের। সেখানে অনেক ক্ষেত্রেই সাপ্তাহিক ছুটি পাচ্ছেন দুই দিন। এমনকি ছুটির দিনে কাজের জন্য ওভারটাইমও দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ আসছে এসব কারখানা থেকে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মিলেনিয়াম গার্মেন্টের শ্রমিক রুবিনা (ছদ্মনাম) বলেন, আমাদের কারখানায় প্রায় সাপ্তাহিক ছুটিই বাতিল করে দেয়ে মালিকপক্ষ। এই দিনের সাধারণ বেতন দিলেও ওভারটাইম আজ পর্যন্ত পাই নাই।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল বলেন, দেশের প্রায় ২৫ শতাংশ গার্মেন্ট মালিকই সাপ্তাহিক ছুটির বিষয়ে আইনানুগ নির্দেশনা মানছেন না। এটি রীতিমতো শ্রমআইন লঙ্ঘন। এ বিষয়ে নামমাত্র আইনি শাস্তি থাকায় মালিকপক্ষ উদাসীন হয়ে পড়েছেন শ্রমিকদের সাপ্তাহিক ছুটির বিষয়ে।
২০০৬ সালের শ্রম আইন অনুযায়ী সাপ্তাহিক ছুটি সংক্রান্ত জটিলতার মামলায় শাস্তি সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা জরিমানা। এই আইন কিছুটা সংশোধন করে শাস্তি হিসেবে আর্থিক ও কারাদণ্ডের ব্যবস্থা করা উচিত বলে মনে করেন মাহবুবুর রহমান ইসমাইল।
অন্যদিকে সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়া একটানা কাজ করে যাওয়ায় শ্রমিকরা দিন দিন কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলছেন বলে মন্তব্য করেন রেডিমেন্ট গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি লাভলী ইয়াসমীন।
লাভলী ইয়াসমীন বলেন, শ্রমিকদের সুস্থ থাকার জন্যও সাপ্তাহিক ছুটি প্রয়োজন। কারণ একটানা কাজ করার কারণে যে শ্রমিক ২০ বছর কাজ করতে পারতেন, সাপ্তাহিক ছুটি না থাকায় তিনি কর্মক্ষম থাকবেন ১২ বছর। যা এ শিল্পের জন্য ভবিষ্যতে ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াবে।
অন্যদিকে বাড়তি কাজের জন্য যে শ্রম প্রয়োজন তা মেটাতে মালিকপক্ষ যদি আরও শ্রমিক নিয়োগ দেন তবে অনেক বেকারের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করেন লাভলী ইয়াসমিন।
ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর পর এই সাপ্তাহিক ছুটি বন্ধের প্রবণতা মালিকদের মধ্যে আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে বলে জানা যায় বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশন সূত্রে।
তবে শ্রমিকদের এ ধরনের অভিযোগকে ‘সম্পূর্ণ অমূলক’ বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফাতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি মো. শহীদুল্লাহ আজীম।
কাজের চাপে, ছুটির রোস্টারে কিছুটা পরিবর্তন এলেও ছুটি দেওয়া হচ্ছে না বলে যে অভিযোগ, তা ঠিক নয় বলে দাবি করলেন শহীদুল্লাহ।
তিনি বলেন, অনেক সময় কাজের চাপ থাকায় বাড়তি কাজ করানো হয়, তবে সেটাও শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে। সেক্ষেত্রে অন্য কোনো দিন তাদের ছুটি দেওয়া হয়। আমাদের কাছে সপ্তাহিক ছুটি ইস্যুতে কোনো অভিযোগ আসে নি। এলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেবো।
সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করা হলেও শ্রমিকদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানা যায় ম্যাগ সোয়েটারস কারখানার শ্রমিকদের কাছ থেকে।
একজন শ্রমিক শ্রম আইন অনুযায়ী প্রতিবছর ১০৪ দিন ছুটি পাওয়ার অধিকার রাখেন। কিন্তু এসব ছুটি এখনো দেশের ৫০ শতাংশ গার্মেন্টেই বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না বলে জানা যায় শ্রমিক সংগঠনগুলোর সূত্রে।
শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের সাপ্তাহিক ছুটি ৫২ দিন, অর্জিত ছুটি ১৭ দিন, ক্যাজুয়াল লিভ ১০ দিন, মেডিকেল লিভ ১৪ দিন, উৎসব ১১ দিন। তবে নারী শ্রমিকরা বছরের সব মিলিয়ে ১১২ দিন ছুটি পাওয়ার অধিকার রাখেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০:৫১:০৮ ৪২৭ বার পঠিত