রবিবার, ২ মার্চ ২০১৪

প্রথম নারী ভিসি হলেন ড. ফারজানা

Home Page » জাতীয় » প্রথম নারী ভিসি হলেন ড. ফারজানা
রবিবার, ২ মার্চ ২০১৪



image_79867_0.jpgকাঞ্চন বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ দেশে প্রথম নারী উপাচার্য (ভিসি) হিসেবে দায়িত্ব পেলেন অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম। রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে নৃবিজ্ঞানের এ অধ্যাপককে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) নিয়োগ দেয়া হয়।
সিনেটের মনোনীত উপাচার্য প্যানেল থেকে তাকে ওই পদে নিয়োগ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়, অধ্যাপক ফারজানা চার বছরের জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। একই আদেশে অধ্যাপক এমএ মতিনকে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. আফসার আহমেদ বঙ্গ-নিউজ কে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, নিয়োগ সংক্রান্ত আদেশটি দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তাদের কাছে পৌঁছেছে।

এর আগে ২০ ফেব্রুয়ারি ভিসি প্যানেল নির্বাচনে সিনেট সদস্য না হয়েও সর্বাধিক ভোট পেয়ে দেশের ইতিহাসে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম।

ফারজানা ইসলাম প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবিরের অনুসারী হিসেবেও তার পরিচয় রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতিতে অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম সক্রিয় না হলেও সরকারের উচ্চপর্যায়ে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। শিক্ষক রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না থাকলেও হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নে বিগত কয়েক বছর ধরে কম্পান্ট কমিটির (যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল) আহ্বায়ক হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।

অধ্যাপক আনোয়ার বিরোধী আন্দোলনের কালানুক্রম

উপাচার্য আনোয়ার হোসেনের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষকদের একটি অংশ প্রায় নয় মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন করছেন। এই দীর্ঘ সময় ধরে পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষকেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সহ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও উপাচার্যকে দুই দফায় অবরুদ্ধ করেন। এছাড়া উপাচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, ক্লাস বর্জন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন অবরোধ, সিনেট-সিন্ডিকেটসহ অন্যান্য প্রশাসনিক সভা প্রতিরোধসহ নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা।

আন্দোলনের মুখে অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন গত ২৪ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচনের আগে জাকসু এবং উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন দিয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যাবেন বলে ঘোষণা দেন। সর্বশেষ ১২ জানুয়ারি তিনি পদত্যাগের কথা জানান।

২০১২ সালের ২০ মে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পান আনোয়ার হোসেন। এরপর ওই বছরের ২৫ জুলাই তিনি নির্বাচিত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর আগস্টে মীর মশাররফ হোসেন হলে পুলিশ প্রবেশের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনায় উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে শিক্ষক সমিতি। পরে সমিতি তাদের দাবি থেকে সরে আসে।

এছাড়া গত বছর ৯ ফেব্রুয়ারি প্রশাসনের অবহেলায় অসুস্থ শিক্ষার্থী আব্দুল মালেকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাঙচুর করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেয় শিক্ষক সমিতি। এরপর ভিসির পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন চলতে থাকে। শিক্ষক সমিতির দাবির মুখে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আনোয়ার হোসেন পদত্যাগের ঘোষণা দিলেও ছাত্রলীগের আশ্বাসে পরে তা প্রত্যাহার করেন।

এরপর গত বছর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের হাতে এক শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় তৃতীয়বারের মতো উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে শিক্ষক সমিতি। এপ্রিল থেকে শিক্ষক লাঞ্ছনার বিচার না হওয়া, গণমাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জামায়াত-শিবিরের দোসর বলে মন্তব্য করাসহ ১৭টি অভিযোগে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষক সমিতি। এর কয়েক মাস পরে সমিতির পরিবর্তে সাধারণ শিক্ষক ফোরামের ব্যানারে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষকেরা। সর্বশেষ ফোরামের ব্যানারে আন্দোলন স্থগিত করে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের ব্যানারে আন্দোলন শুরু হয়।

প্রায় নয় মাস ধরে চলমান সঙ্কট নিরসনে শিক্ষাসচিব, শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি হস্তক্ষেপ করে। কিন্তু নিরসন না হওয়ায় গত ৭ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ উপাচার্য এবং আন্দোলনকারী শিক্ষকদের নির্দেশনা দেন। রাষ্ট্রপতির নির্দেশনার পরও সঙ্কট নিরসন হয়নি। অবশেষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আনোয়ার হোসেন ১২ জানুয়ারি তার পদত্যাগের কথা নিশ্চিত করেন। ১৩ জানুয়ারি সোমবার তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।

এরপর রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ড. মতিনকে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব দেন এবং এক মাসের মধ্যে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের নির্দেশ মোতাবেক গত ২০ ফেব্রুয়ারি এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের পর তিন সদস্যের এক প্যানেল রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হলে তার মধ্যে থেকে আচার্য অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ বাংলাদেশের প্রথম নারী উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক ড. ফারজানাকে নিয়োগ দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭:২৮:২৫   ৫০০ বার পঠিত