
মঙ্গলবার ● ২৯ এপ্রিল ২০২৫
ইউক্রেনে ‘যোদ্ধা’ পাঠানো সংস্থাকে মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণ বাতিল
Home Page » জাতীয় » ইউক্রেনে ‘যোদ্ধা’ পাঠানো সংস্থাকে মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণ বাতিলবঙ্গনিউজ ডেস্কঃ রাশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে টেকসই কর্মপন্থা নির্ধারণ শীর্ষক কর্মশালায় আমন্ত্রণ পেয়েছে ‘ড্রিম হোম ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেড’। কিন্তু ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের পাঠানোর অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে। গত ফেব্রুয়ারিতে হওয়া মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি।
আজ মঙ্গলবার প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ আলোচনা হওয়ার কথা। বিষয়টি জানাজানি হলে রোববার রাতে শেষ মুহূর্তে প্রতিষ্ঠানটির নাম বাদ দেয় মন্ত্রণালয়।
প্রলোভন ও প্রতারণার ফাঁদ পেতে বেশ কিছুদিন ধরে বাংলাদেশি নাগরিকদের রাশিয়া হয়ে ইউক্রেনে ‘যোদ্ধা’ হিসেবে পাঠাচ্ছে একটি চক্র। কয়েকজন বাংলাদেশি যুদ্ধক্ষেত্রে মারাও গেছেন। রাশিয়ায় যাওয়ার পর ভাড়াটে যোদ্ধা হওয়া বাংলাদেশিদের বড় অংশ গেছে এই ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে। পুলিশ ড্রিম হোম ট্রাভেলসের অংশীদার ফাবিহা জেরিন তামান্নাকে গ্রেপ্তার করেছে।
আজ মন্ত্রণালয়ের আলোচনায় অন্য যারা আমন্ত্রণ পেয়েছে তারা হলো– জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি), ওয়েজ আর্নার কল্যাণ বোর্ড, আইএলও, আইওএম, রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের সংগঠন বায়রা। এদের সঙ্গে রাশিয়া ও ইউক্রেনে মানব পাচারে অভিযুক্ত ড্রিম হোম ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেডকে আমন্ত্রণের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট অনেকে বিস্মিত হন। পরে আরেকটি নোটিশ জারি করে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ড্রিম হোম ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেডের নাম বাদ দেয়। তবে কারা এ ধরনের বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানকে রাশিয়ায় লোক পাঠানোর আলোচনায় যুক্ত করেছে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
গত রাতে জানতে চাইলে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ড্রিম হোম ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেডকে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টি ভুল ছিল। তারা ইউক্রেনে ‘যোদ্ধা’ পাঠানোর ঘটনায় জড়িত– বিষয়টি জানার পর তালিকা সংশোধন করা হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, রাশিয়ায় এখন অন্তত চার হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান প্রতারণা করে রাশিয়ায় লোক পাঠাচ্ছে। এসব বন্ধ করার চেষ্টা চলছে। রাশিয়ায় বৈধভাবে আরও বেশি লোক পাঠাতে সবার প্রস্তাব, পরামর্শ শুনতে চায় মন্ত্রণালয়।
সোমবার রাতে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান বলেন, ‘যোদ্ধা’ হিসেবে গড়ে তুলতে রাশিয়ার প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে আরও অনেকের সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশি এক তরুণ। সেখান থেকে তিনি পালিয়ে বাংলাদেশে আসেন। এর পর কীভাবে কোন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রাশিয়া গিয়ে প্রতারিত হয়েছিলেন, তা আমাদের জানান। ইউক্রেনের রণক্ষেত্রে তাদের পাঠানো হতো। এ ধরনের কয়েকজন ভুক্তভোগীর মাধ্যমে ড্রিম হোম ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেডের নাম বেরিয়ে আসে। যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠিয়ে তারা অনেককে নিঃস্ব করেছে। প্রতারণায় জড়িত বেশ কয়েকজনকে খোঁজা হচ্ছে।
সিআইডি সূত্র জানায়, ড্রিম হোম ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেডের মাধ্যমে ১০ জন সৌদি আরবে ওমরাহ ভিসায় যান। সেখানে ওমরাহ করানোর পর রাশিয়ায় নিয়ে গিয়ে তাদের বিক্রি করে দেওয়া হয়। তাদের দাস হিসেবে রাশিয়ার সৈনিকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেখানে তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ না দিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণে বাধ্য করা হয়।
সিআইডি গত ফেব্রুয়ারিতে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, প্রাথমিকভাবে তাদের কাছে তথ্য আছে, ইউক্রেনে যুদ্ধে নাটোরের সিংড়া থানার হুমায়ুন কবির নামে একজন নিহত। কেরানীগঞ্জের আমিনুল নামে আরেকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। পাচার হওয়া ১০ জনের মধ্যে নরসিংদীর পলাশ থানার বাসিন্দা আকরাম হোসেন প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যান। পরে নিজ ব্যবস্থাপনায় ২৬ জানুয়ারি দেশে ফিরে অন্যান্য ভুক্তভোগীর পরিবারে যোগাযোগ করেন।
সিআইডি বলছে, এ ঘটনায় আমিনুল নামে একজনের স্ত্রী ঝুমু আক্তার ঢাকার বনানী থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে নেপালে পালিয়ে যাওয়ার সময় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তামান্নাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মাসে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা বেতনে কাজের প্রলোভন দিয়ে তারা রাশিয়ায় লোক পাঠান। তামান্নার ভাই তুহিন এতে মূল ভূমিকা পালন করেন। তিনি বর্তমানে রাশিয়ায় অবস্থান করছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তরুণ আকরাম মিয়ার বাবা মোরশেদ মিয়া সমকালকে বলেন, পোল্যান্ডে নেওয়ার কথা বলে রাশিয়ায় আমার ছেলেকে নেওয়া হয়। এর পর ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয়। ১৩ এপ্রিল শেষবার ভিডিও কলে তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে। পরদিন মিরাজ নামে ময়মনসিংহের আরেক সহযোদ্ধা ফোন করে জানায়, আকরাম মারা গেছে। এখন আমি ছেলের লাশ চাই। যে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে, তাদের বলেছি– বাবা, ছেলের লাশটা অন্তত এনে দাও।
সুত্রঃ সমকাল
বাংলাদেশ সময়: ১০:৫৭:০৭ ● ২২ বার পঠিত