
মঙ্গলবার ● ৮ এপ্রিল ২০২৫
রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা বাড়ি আরাকান আর্মিরা পুড়িয়ে দিচ্ছে ?
Home Page » জাতীয় » রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা বাড়ি আরাকান আর্মিরা পুড়িয়ে দিচ্ছে ?বঙ্গনিউজ ডেস্কঃ বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার আলোচনার মধ্য কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আগুনের কুণ্ডলী ও ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টেকনাফ পৌরসভার নাইট্যংপাড়া, শাহপরীর দ্বীপসহ তিনটি সীমান্তসংলগ্ন ওপারে আগুনের কুণ্ডলী ও ধোঁয়া উড়তে দেখেন সীমান্তের বাসিন্দারা।
রোহিঙ্গা বলছে, রাখাইনে পেলে আসা তাদের পরিত্যক্ত বাড়িঘরগুলো আগুনে পুড়িয়ে দিচ্ছে আরাকান আর্মি। সম্প্রতি সময়ে মিয়ানমারে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা ফেরত যেতে রাজি হওয়ায় এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে তারা। যাতে রোহিঙ্গা বোঝে, সেখানকার পরিস্থিতি এখনো ভালো হয়নি।
তবে সীমান্তে মিয়ানমারে অভ্যন্তরে আগুনের ধোঁয়া দেখা গেছে উল্লেখ করে টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান বলেন, ‘সীমান্তে বিজিবি অনুপ্রবেশ ঠোকাতে সর্তক অবস্থানে রয়েছে। নতুন করে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না।’
মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টেকনাফ পৌরসভার নাইট্যংপাড়া, শাহপরীর দ্বীপের পূর্বে নাফ নদের ওপারে রাখাইনে মংডুর পেরাংপ্রুতে আগুনের ধোঁয়া দেখা গেছে। এ ছাড়া সোমবারও এসব এলাকায় আগুনের ধোঁয়া দেখা যায়। মূলত রাখাইনে জামতলি, পেরাংপ্রু ও মাংগালা এলাকায় রোহিঙ্গাদের পরিত্যক্ত বাড়িঘরগুলো আগুনে পুড়িয়ে দিচ্ছে বলে জানা গেছে।
সীমান্তের শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘সকালে নাফ নদীর ওপারে রাখাইনে আগুনে ধোঁয়া দেখা গেছে। এ সময় স্থানীয় লোকজন দেখতে ভিড় করে জেটিঘাটে। মূলত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন আলোচনা শুরু হওয়ায় এ ধরনের ঘটনা চোখে পড়ছে। যাতে রোহিঙ্গা ফিরে না যায়, তাই আগুন দিয়ে আতঙ্ক বাড়াচ্ছে।’
টেকনাফ সীমান্তের একজন বাসিন্দা বলেন, ‘ওপারে আগুনের কুণ্ডলী ও ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। তবে ঠিক ওপারে এখন কী হচ্ছে এপার থেকে বলা মুশকিল। এ ধরনের ঘটনা ঘটছে আবার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।’
এদিকে, বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৩ লাখের বেশি। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরে কয়েক মাসে। দীর্ঘ ৮ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। উল্টো গত কয়েক মাসে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয়শিবিরে ঠাঁই নিয়েছেন ৬০-৭০ হাজার রোহিঙ্গা।
সীমান্তে নজর রাখা সরকারি এক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রত্যাবাসনের আলোচনা শুরু হওয়ার থেকে নাফ নদীর ওপারে আগুনের কুণ্ডলী ও ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। এর আগে বেশ কয়েকদিন ধরে এমন ঘটনা দেখা যায়নি। খবর পেয়েছি সেখানে (রাখাইনে) পেলে আসা রোহিঙ্গা পরিত্যক্ত বাড়িঘরগুলো পুড়িয়ে দিচ্ছে। এছাড়া তাঁরা জঙ্গলগুলো আগুন দিয়ে পরিষ্কার করছে বলেও জেনেছি।’
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) সভাপতি মোহাম্মদ জুবায়ের বলেন, ‘রাখাইনে থাকা স্বজনদের মাধ্যমে জেনেছি, এখনও নির্যাতন বন্ধ হয়নি সেখানে (ওপারে)। মূলত আরাকান আর্মিও রোহিঙ্গাদের মেনে নিতে পারছে না। এছাড়া প্রত্যাবাসনের আলোচনা পর সেখানে (রাখাইনে) রোহিঙ্গাদের ঘর থেকে বাইরে এনে উত্তাপ রোদে বসিয়ে রাখছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।’
তিনি বলেন, ‘তাছাড়া নতুন করে রাখাইনে জ্বালাপোড়াও করছে আরাকান আর্মি। তারা আমাদের রেখে আসা বাড়িঘর গুলো পুড়িয়ে দিচ্ছে। যাতে ফিরে গেলেও (বাড়িঘরে) উঠতে না পারি। এটি মূলত রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে রাজি হওয়ায় বাড়িঘরে আগুন দিয়ে ভয়ভীতি ছড়ানো হচ্ছে।’
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, ‘নতুন করে রাখাইনে আরাকান আর্মির জ্বালাপোড়া হচ্ছে। যার ফলে সীমান্তে আগুনের কুণ্ডলী ও ধোঁয়া উড়তে দেখা যাচ্ছে। এতে নতুন করে অনুপ্রবেশের শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে সীমান্তে আমাদের আইন শৃঙ্খলা-বাহিনীর কাজ করে যাচ্ছে।’
জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘সীমান্তের ওপারে নতুন করে আগুনের কুণ্ডলী ও ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। তবে সীমান্ত দিয়ে যাতে কেউ অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেজন্য আমাদের বিজিবি-কোস্ট গার্ড সর্বোচ্চ সর্তক অবস্থানে রয়েছে।’
বাংলাদেশ সময়: ১৯:১০:৩৯ ● ৭৮ বার পঠিত