রবিবার ● ২৬ জানুয়ারী ২০২৫
দেশে সেনাশাসন আসার কোনো প্রেক্ষিত নেই : উপদেষ্টা মাহফুজ
Home Page » জাতীয় » দেশে সেনাশাসন আসার কোনো প্রেক্ষিত নেই : উপদেষ্টা মাহফুজ
বঙ্গনিউজ : দেশে সেনাশাসন আসার কোনো প্রেক্ষিত নেই বলে জানিয়েছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সমন্বয়ক ও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, নতুন করে ওয়ান-ইলেভেনের কোনো শঙ্কা নেই, তাই দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) বিকালে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য একটি সুস্থ ও অবাধ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপহার দেওয়া। তবে শেখ হাসিনা এবং তার দোসরদের জন্য সে নির্বাচন নয়। কারণ, দেশের গণমানুষকে সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনাকে উৎখাত করেছি। তাই আগামী যে কোনো নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না।
মাহফুজ আলম বলেন, আওয়ামী লীগ দিল্লির কোলে আশ্রয় নিয়ে ফোঁস ফোঁস করছে। ফ্যাসিস্ট পরাজিত হলেও দিল্লিতে বসে ষড়যন্ত্র করছে। যারা বাংলাদেশের বিরোধী, জনগণের অধিকার বিরোধী তাদের এ দেশে আর পুনর্বাসন দেওয়া হবে না। যে কোনোভাবেই আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা হবে।
দেশে সেনাশাসন আসার কোনো প্রেক্ষিত নেই : উপদেষ্টা মাহফুজ
তাপমাত্রা কমা নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস
মাহফুজ আলম বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে বলব- সংস্কারগুলো করার জন্য সরকারকে সহযোগিতা করি। প্রতিষ্ঠান সংস্কার হলে উপকৃত হবে বাংলাদেশের জনগণ, উপকৃত হবে বৈষম্যবিরোধী জনগণ। আপনাদের সদিচ্ছা থাকলে সরকারকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবেন। সংস্কারের কাজ শেষ হওয়ার পর সুষ্ঠু, গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের দিকে এগোবো আমরা।
উপদেষ্টা বলেন, আমি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধিত্ব করছি, কোনো রকম রাজনৈতিক পক্ষপাত করতে চাই না। রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো রাজনৈতিক দল রাজনৈতিকভাবে করবেন। বাংলাদেশপন্থি কারও সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। কিন্তু দিল্লির তাঁবেদারি করার কোনো প্রচেষ্টা হলে তাদের সঙ্গে বিরোধ হবেই হবে।
মাহফুজ আলম বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে লক্ষ্মীপুরে যারা শহীদ হয়েছেন আমরা তাদের পাব না। কিন্তু তাদের যে স্পিড, চেতনা, তা আমাদের রক্তের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হবে। আমরা তাদেরই উত্তরসূরি। তারা যে স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জীবন দিয়েছেন সে ধারণা থেকে আমাদের পথচলা।
৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা একটি রাষ্ট্র গঠনের সুযোগ পেয়েছিলাম, কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, আমাদের মধ্যে ঐক্যের ঘাটতি রয়ে গেছে। আমরা এখনো বুঝতে পারিনি, আওয়ামী লীগ শুধু রাজনৈতিকভাবে পরাজয়বরণ করে তারা শেষ হয়ে যায়নি বরং দিল্লির কোলে আশ্রয় নিয়ে তারা ফোঁস-ফোঁস করছে।
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, আমি বলতে চাই এটা আমাদের প্রজন্মের লড়াই। এটা আমাদের ফ্যাসিবাদী বিরোধী শক্তির ও রাজনীতির স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার লড়াই। কোনোভাবে যদি আবার আওয়ামী লীগ ভারতের কোল থেকে আমাদের দিকে চোখ রাঙ্গায় আমরা কি বসে থাকব? তখন উপস্থিত জনগণ বলে, না না না। আমরা বসে থাকব না, আমরা শহীদদের শাহাদাতের পথ ধরে রক্ত দেব।
আমরা শুধু ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগের শাসনব্যবস্থা উৎখাত করে সন্তুষ্ট নই। আওয়ামী লীগের যতদূর আছে রাষ্ট্রীয় সেক্টরে, সমাজে, সংস্কৃতিতে- প্রত্যেকেরই আমরা বিচার করব। তাদের বিচার করেই আমাদের শহীদের যে আকাঙ্ক্ষা আছে সেদিকে আমরা এগোবো।
বিচারের সঙ্গে সঙ্গে আমরা সংস্কারের কথা বলছি এমনটি জানিয়ে এ উপদেষ্টা বলেন, সংস্কার কমিশন থেকে যেগুলো রিপোর্ট এসেছে, রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে সংস্কারগুলো না করলেই নয়, নির্বাচনের পূর্বে সে সব সংস্কার করতে চাই। সংস্কার শুধু মুখের বুলি নয়।
যেসব প্রতিষ্ঠান আপনাকে টিকিয়ে রেখেছিল সে প্রতিষ্ঠানগুলো একইরকম রেখে আমরা নির্বাচনে যেতে পারি না। যেসব প্রতিষ্ঠানে হাসিনার দালালরা আছে তাদের বিচার করেই আমাদের নির্বাচনের দিকে এগোতে হবে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- রামগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ দিদারুল ইসলাম, উপজেলা জামায়াত আমির নাজমুল হাসান পাটোয়ারী, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অপু সাহা, মুক্তিযোদ্ধা মন্টু মিয়া, ইসলামী আন্দোলন রামগঞ্জ শাখার সভাপতি ডা. রফিকুল ইসলাম, নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুর রহমান তুহিন, জয়নাল আবেদীন শিশির প্রমুখ।
এর আগে লক্ষ্মীপুরে যাওয়ার পথে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে এক পথসভায় মাহফুজ আলম বলেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করতে পারবে না। বাংলাদেশে দিল্লিপন্থিরা আর সুযোগ পাবে না। যদি আওয়ামী লীগ ফিরে আসে তাহলে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবে। আমরা বিএনপি-জামায়াত এবং সব ধরনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে ফ্যাসিবাদ ব্যবস্থাকে উৎখাত করেছি। এ দেশে ফ্যাসিবাদের ফিরে আসার আর সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, হাসিনা যেসব প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল সেগুলো সংস্কার না করে নির্বাচন দিলে প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে যাবে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে গেলে মানুষ কখনোই বৈষম্য ও নিপীড়নমুক্ত হতে পারবে না। তাই সংস্কার কমিশনের দেওয়া প্রতিবেদন এবং সব রাজনৈতিক এবং অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন দিয়ে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন করা হবে।
মাহফুজ বলেন, এ দেশ বাংলাদেশপন্থিদের হাতে থাকবে। বাংলাদেশে দিল্লিপন্থিদের আর স্থান হবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১১:১৮:৫৩ ● ৪৯ বার পঠিত