বঙ্গনিউজ ডেস্ক : এবারে ২০২৪ সাল ছিল নির্বাচনের বছর। এ বছর বিশ্বে ৬০টির বেশি দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারত থেকে শুরু করে মহাশক্তিধর দেশ যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র পাকিস্তান ও বাংলাদেশেও নির্বাচন হয়েছে এ বছর। একনজরে কয়েকটি দেশের এবারের নির্বাচন সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

ভারত

গত ১৯ এপ্রিল থেকে ১ জুনের মধ্যে, কোটি কোটি ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার ৫৪৩ জন প্রার্থী নির্বাচন করতে ভোট দেন। এরপর গত ৪ জুন ভোটের ফলাফল জানানো হয়।

সেদিন দেশটির নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২৪০ আসনে জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। ৯৯টি আসনে জয় পেয়েছে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস।

অন্য দলগুলোর মধ্যে সমাজবাদী পার্টি (এসপি) ৩৭টি, তৃণমূল কংগ্রেস ২৯টি, ডিএমকে ২২টি, তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) ১৬টি, জনতা দল (জেডি-ইউ) ১২টি, শিবসেনা (উদ্ভব) নয়টি, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপিএসপি) আটটি ও শিবসেনা (এসএইচএস) সাতটি আসনে জয় পেয়েছে।

দেশটিতে ৫৪৩ আসনের মধ্যে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ২৭২ আসন। বিজেপি তার জোটসঙ্গীদের নিয়ে সরকার গঠন করে। গত ৯ জুন টানা তৃতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন নরেন্দ্র মোদি।

রাশিয়া

চলতি বছরের ১৫ থেকে ১৭ মার্চ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। যদিও এই নির্বাচন নিয়ে বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বের অনেক অভিযোগ রয়েছে।

রাশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়, নির্বাচনে ভ্লাদিমির পুতিন ৮৭ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। এই জয়ের ফলে বর্তমান রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন আরও ছয় বছরের জন্য দেশটির ক্ষমতায় থাকছেন।

জয়ের পর পুতিন বলেন, রাশিয়ার গণতন্ত্র পশ্চিমা অনেক দেশের চেয়েও বেশি স্বচ্ছ। তবে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকৃতপক্ষে দেশটিতে কোনো যথার্থ বিরোধী প্রার্থীকে নির্বাচনে দাঁড়াতেই দেওয়া হয়নি।

পশ্চিমা দেশগুলো সেইসময় অভিযোগ করে, রাশিয়ায় ভোট অবাধ বা সুষ্ঠু কোনোটিই হয়নি।

জার্মানি এটিকে সাজানো-নির্বাচন বলে অভিহিত করে। দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়ার কর্তৃত্ববাদী শাসন সেন্সরশিপ, দমন ও সহিংসতার উপর ভর করে টিকে আছে।

এ ছাড়া ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, এটি স্বৈরশাসককে ক্ষমতায় রাখার নির্বাচন।

যুক্তরাজ্য

চলতি বছরের অক্টোবরে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও গত ৪ জুলাই যুক্তরাজ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দেশটিতে এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির ব্যাপক ভরাডুবি হয় এবং বিরোধী দল লেবার পার্টি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়।

বিবিসি জানায়, লেবার পার্টি ৪১২টি আসনে জিতেছে এবং কনজারভেটিভরা ১২১টি আসন পেয়েছে। ৫ জুলাই সরকারি ফলাফল ঘোষণার আগেই কিয়ার স্টারমারকে ফোন করে অভিনন্দন জানান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক।

বিজয়ের পরপরই বাকিংহাম প্রাসাদে ডাক পান স্টারমার। সেখানে ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস স্টারমারকে যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন।

পাকিস্তান

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম দেশ পাকিস্তানে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশটির ১৬তম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি ফলাফল জানানো শুরু হয়।

পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের (এনএ) বা দেশটির সংসদের নিম্নকক্ষের ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, নির্বাচনে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১০১টি আসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ৭৫টি আসন এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি ৫৪টি আসন পায়।

মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তান ১৭টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম পাকিস্তান ৪টি, পাকিস্তান মুসলিম লীগ ৩টি, ইস্তেহকাম-ই-পাকিস্তান পার্টি ও বেলুচিস্তান ন্যাশনাল পার্টি দুইটি করে আসন পেয়েছে।

দেশটিতে সাধারণ নির্বাচনের একমাস গত ৩ মার্চ জাতীয় পরিষদে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে ভোটাভুটি হয়। ভোটাভুটিতে পিটিআই’র প্রার্থী ওমর আইয়ুবকে হারিয়ে পাকিস্তানের ২৪তম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শাহবাজ শরীফ। তিনি ২০১ সংসদ সদস্যের ভোট নিশ্চিত করেন। এর একদিন পরেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শাহবাজ শরীফ।

যুক্তরাষ্ট্র

চলতি বছর সারা বিশ্বজুড়ে যে দেশটির নির্বাচন ঘিরে সবার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল তা হলো যুক্তরাষ্ট্র। শুধু বিশ্বের নাগরিকদের নয় বিশ্বনেতাদের নজর ছিল যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন। গত ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনের আগে বিভিন্ন জরিপে বলা হয়েছিল, এবারের ভোটে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্রেট পার্থী কমলা হ্যারিসের মধ্যে তুমুল হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।

কিন্তু ফলাফল আসতে শুরু করলে চিত্র ভিন্ন হয়ে উঠে। এবারের মার্কিন নির্বাচনে ভূমিধস জয় পান ট্রাম্প। তিনি ৩১২টি ইলেক্টোরাল ভোট পেয়েছেন অন্যদিকে কমলা পেয়েছেন ২২৬। দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় পেতে দরকার ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোট।

ট্রাম্প এরইমধ্যে তার নতুন প্রশাসন সাজানো শুরু করেছেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণপদগুলোতে ট্রাম্প তার পছন্দের লোকগুলোকে নিয়োগ দিয়েছেন। আগামী ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।