বৃহস্পতিবার ● ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
নেদারল্যান্ডসে আধুনিক প্রযুক্তিতে ক্যাপসিকাম
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » নেদারল্যান্ডসে আধুনিক প্রযুক্তিতে ক্যাপসিকামবঙ্গনিউজ ডেস্কঃ নেদারল্যান্ডসে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির মাধ্যমে উৎপাদন করা হচ্ছে ক্যাপসিকাম। পুরোপুরি নিরাপদ খাদ্য। সব কিছু চলছে যন্ত্র নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে। হার্ভেস্টিং থেকে শুরু করে প্যাকেজিং—সব করছে রোবট। সুস্বাস্থ্যের পূর্বশর্ত ভালো খাবার। ভালো খাবার উৎপাদনে প্রয়োজন জৈব কৃষি, যা নেদারল্যান্ডস নিশ্চিত করছে প্রযুক্তির মাধ্যমে। ২০২২ সালের এপ্রিল। নেদারল্যান্ডসে সাত দিনের সফরের তৃতীয় দিন।
সকালে নাশতা সেরে হোটেল থেকে বের হলাম। উজ্জ্বল রোদ। পরিষ্কার নীল আকাশ। নির্ধারিত গাড়িতে চড়ে রওনা হলাম অ্যাগ্রোপার্ক লিংগেজেনের দিকে।
এডে সেন্ট্রাল স্টেশন এলাকায় পৌঁছার পর যুক্ত হলেন আমাদের সেদিনকার হোস্ট পিটার স্মিটস। পায়ে চামড়ার বুট, পরনে জিন্স আর গায়ে সবুজাভ লেদারের হ্যারিংটন জ্যাকেট। ষাটোর্ধ্ব পিটার চলনে-বলনে যেন তরুণ। পিটারের সঙ্গে পরিচয় পর্ব শেষে গাড়ি আবার চলতে শুরু করল। পিটার জানিয়ে দিলেন, ‘আপনাদের সব কিছু প্রায় গাড়ি থেকেই দেখতে হবে।
জানেন, নেদারল্যান্ডস খাদ্য উৎপাদন ও বিপণনের ক্ষেত্রে জৈব নিরাপত্তা শতভাগ মেনে চলে। ফলে খাদ্য প্রসেসিং সেন্টার বা উৎপাদনকেন্দ্রের ভেতরে আপনাদের নিয়ে যেতে পারব না।’
পিটারের কথা শুনে আমরা হতাশ। যদি প্রসেসিং সেন্টার বা গ্রিনহাউসের ভেতরে যেতে না পারি, তবে ক্যামেরায় কী ধারণ করব? কিন্তু করার কিছু নেই। এ ব্যাপারে তারা খুব কঠোর।
পিটার আমাদের নিয়ে গেলেন বারেনড্রেখট এলাকায়। সেখানে বিশাল সব গ্রিনহাউস। পিটার বলছিলেন, এখানে কোনো গ্রিনহাউসই পাঁচ হেক্টরের কম নয়। সকালের রোদ পড়ে চিকচিক করে উঠছে একেকটা গ্রিনহাউস। সারি সারি অসংখ্য গ্রিনহাউস। ২০১৪-১৫ সালের দিকে এখানে এত বেশি গ্রিনহাউস নির্মাণের হিড়িক পড়ে যে নেদারল্যান্ডস পরিচিত হয়ে ওঠে গ্লাসহাউসের দেশ হিসেবে। পরে গ্রিনহাউস নির্মাণে নিয়ন্ত্রণ আনা হয়।
পিটার বলেন, ‘এখানে যে গ্রিনহাউসগুলো দেখছেন, কোনোটিই কিন্তু সাত হেক্টরের নিচে নয়। সবচেয়ে বড়টি ১২৫ হেক্টর জমির ওপর। সেচের জন্য ব্যবহার হচ্ছে বৃষ্টির পানি। ওই যে নালাগুলো দেখছেন, ওগুলোতে বৃষ্টির পানি ধরে রাখা আছে। ওখানকার পানিতে মাছ চাষও হচ্ছে। আর সোলার প্যানেলে উৎপাদন হচ্ছে বিদ্যুৎ। এখানে গ্রিনহাউসগুলো শুধু খাদ্যই উৎপাদন করছে না, বলা যায় একেকটা গ্রিনহাউস একেকটা পাওয়ারহাউস।’
তিনি বলেন, ‘এখানে যত গ্রিনহাউস দেখছেন, তারা তাদের বিদ্যুৎ চাহিদার শতকরা ৯০ ভাগ নিজেরাই উৎপাদন করে। বাকি ১০ ভাগ পূরণ হয় প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে। এখানকার গ্রিনহাউস উদ্যোক্তারা খুব খুশি, কারণ বিদ্যুতের জন্য তাঁদের খরচ করতে হয় না।’
আমি বললাম, ‘এখন তো শহর প্রসারিত হচ্ছে। গ্রামের কৃষিজমিগুলোতে হচ্ছে ঘরবাড়ি, কলকারখানা। বিশেষ করে আমি বাংলাদেশের কথা বলছি—শহরের বাড়িগুলোর ছাদে যদি কৃষি আয়োজন করা যায়, তাহলে তো শহর কিছুটা হলেও সবুজ হবে।’
পিটার একমত হলেন। কথা বলতে বলতে পৌঁছে গেলাম বেমোলে অবস্থিত ফির্মা ফান ডার হার্ঘ নামের গ্রিনহাউসে। এখানে প্রবেশের অনুমতি আমরা পেয়েছি। খুব সতর্কতার সঙ্গে গ্রিনহাউসে প্রবেশ করলাম। একটি হলুদ লাইন দেখিয়ে পিটার বললেন তা যেন অতিক্রম না করি। একটু এগিয়ে যেতেই দেখা হলো এক তরুণের সঙ্গে। নাম ইয়ন ফান ডের অলেখ। এই গ্রিনহাউসটির স্বত্বাধিকারী। ইয়ন জানালেন, ৮.৬ হেক্টর জমিতে প্রায় দুই লাখ ক্যাপসিকামগাছ ফলন দিচ্ছে। দেখলাম ফসল তুলছে রোবট।
ইয়ন বললেন, ‘একটি গাছ ফলন দেয় শুধু এক বছর। আমরা সাধারণত ডিসেম্বরে গাছ রোপণ শুরু করি। ফেব্রুয়ারিতে গাছগুলো বড় হয়ে ওঠে। তখন ফুল আসতে শুরু করে। ক্যাপসিকাম উৎপাদন শুরু হয় মার্চ থেকে। অক্টোবর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। এরপর আমরা নতুন করে গ্রিনহাউসকে প্রস্তুত করি। ’
হাই-টেক ফার্মিংয়ে বহুদূর এগিয়েছেন ইয়ন। সব কিছুই চলছে কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে। ইন্টারনেট অব থিংস ও এআই অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগের উত্কৃষ্ট উদাহরণ ইয়নের ফার্ম। কোনো কিছুরই অপচয় নেই এই গ্রিনহাউসে। সবই রিসাইকল হয়। সেচের পানি থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড—সব কিছুরই রয়েছে পুনর্ব্যবহার কিংবা ব্যয় হচ্ছে শক্তি উৎপাদনে। বায়োপেস্ট কন্ট্রোল রয়েছে গ্রিনহাউসে। ইনসেক্টরাই ইনসেক্টদের মেরে ফেলে। ফলে কোনো রাসায়নিক বা কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। এখানকার প্রতিটি ক্যাপসিকামই নিরাপদ খাদ্য। সব কিছুই অটোমেটিক। যন্ত্র নিয়ন্ত্রিত। হার্ভেস্টিং থেকে শুরু করে প্যাকেজিং—সবই করছে রোবট।
উন্নত জাতি মানেই মানুষের সুস্বাস্থ্য। সুস্বাস্থ্যের পূর্বশর্ত ভালো খাবার। আর ভালো খাবার উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন জৈব কৃষি, যা নেদারল্যান্ডস নিশ্চিত করছে প্রযুক্তির মাধ্যমে।
বাংলাদেশ সময়: ১০:০৮:১০ ● ৫৩ বার পঠিত