শনিবার ● ২৪ আগস্ট ২০২৪
ডুবন্ত জনপদে স্বজনের সন্ধানে
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » ডুবন্ত জনপদে স্বজনের সন্ধানেবঙ্গনিউজ ডেস্কঃ সম্পদ, স্বপ্ন– সবকিছু তলিয়ে রয়েছে, ভেসেও গেছে বহু। কারও সঙ্গে নেই যোগাযোগ। বিভীষিকার রাত পেরিয়ে গতকাল শুক্রবার উঁকি দেয় সূর্য। দিনভর থেমে থেমে ছিল রোদ। সেই আলোতেই ভেসে ওঠে বিস্তীর্ণ ডুবন্ত জনপদ। যতদূর চোখ যায় বসতভিটার কোনো অস্তিত্ব নেই।
স্মরণকালের ভয়াবহ বানের তোড়ে ফেনীর লাখ লাখ মানুষ আশ্রয়হীন। তাদের চোখেমুখে এখনও সেই রাতের ভয়াবহতা। ধু-ধু জলের প্রান্তরে এখন শুধুই ক্ষুধা, কান্না, আহাজারি আর আর্তনাদ। চারদিকে মানুষের বাঁচার অদম্য আকুতি। কেউ টিনের চালে, গাছে কিংবা ছাদে আশ্রয় নিয়েছেন। ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়ার অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ। আটকে পড়াদের উদ্ধারে যাবে, সে উপায় হাতে নেই স্বজনের। খোঁজ না পাওয়ায় বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। পানির তোড়ে সেসব এলাকায় যাওয়া যেমন ঝুঁকির, তেমনি মিলছে না উপযুক্ত বাহন। ফলে আফসোস, আক্ষেপ ও ক্ষোভের শেষ নেই। মোবাইল নেটওয়ার্ক কিংবা ইন্টারনেট সব যোগাযোগই বিচ্ছিন্ন দুর্গত অঞ্চলে। বাঁচা-মরার খবর পাওয়াও এখন হয়ে উঠেছে দুষ্কর। সেই সঙ্গে উদ্ধার তৎপরতা ও ত্রাণ বিতরণ নিয়েও রয়েছে ক্ষোভ।
ফেনীর ফুলগাজীর নতুন মুন্সিরহাট ইউনিয়নের জগতপুর গ্রাম থেকে নৌকায় পাঁচজনকে উদ্ধার করে শহরে এনেছেন খালেদুর রহমান। তাঁর চোখেমুখে উদ্বেগ। মানুষের কষ্ট দেখে আসা যুবক বলেন, পানি ছাড়া কিছুই দেখা যায় না। মাঝেমধ্যে দু-একটা বাসার ছাদ ও টিনের চাল থেকে ভেসে আসছে কান্না-চিৎকার। কিন্তু তাদের উদ্ধার করার মতো নৌযান নেই। ক্ষুধার্ত শিশুর কান্না দেখে নিজেকে ধরে রাখা কঠিন।
সাজানো আবাস এখন রীতিমতো মৃত্যুপুরী। কত প্রাণহানি, কত দেহ ভেসে গেছে, তার ইয়ত্তা নেই। মারা গেলেও তো কবর দেওয়া যাচ্ছে না।
রাতভর উদ্ধারের অভিজ্ঞতার বিষয়ে খালেদুর বলেন, যে ধ্বংসলীলা, চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া উপায় নেই। দৃষ্টিসীমায় অসহায় মানুষ, কিছুক্ষণের মধ্যেই ‘নেই’ হয়ে যাচ্ছে। দু’দিন আটকে আছে। ক্ষুধায় শিশুরা কাঁদছে। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। কিন্তু চিকিৎসা বা সহায়তা করার কোনো পরিস্থিতি নেই। চারদিকে পানি। অথচ খাবার পানি নেই এক ফোঁটা। এ মুহূর্তে ত্রাণের চেয়ে যে কোনো উপায়ে মানুষগুলোকে উদ্ধার দরকার।
বন্যা যে এমন প্রলয়ঙ্করী হবে, তা কল্পনাও করেনি ফেনীর মানুষ। সম্পদ যা যাওয়ার গেছে। এখন জেলার চার উপজেলার ৪ লাখ মানুষের প্রাণ বাঁচানো নিয়েই দেখা দিয়েছে সংশয়। উজানে অতি ভারী বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে আকস্মিক এ বন্যায় ফেনীর মতো দেশের অন্তত ১১ জেলা প্লাবিত হয়েছে। ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও সদর উপজেলার প্রায় ৯৫ শতাংশ এলাকা ডুবে গেছে। বন্ধ রয়েছে সড়ক যোগাযোগ, নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। মোবাইল নেটওয়ার্কও বিচ্ছিন্ন।
গতকাল সন্ধ্যায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানায়, বিভিন্ন জেলায় বন্যায় এ পর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে পুরুষ ১৩ ও নারী ২ জন। তাদের মধ্যে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় ৪ জন করে, কক্সবাজারে ৩ এবং ফেনী, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লক্ষ্মীপুরে একজন করে রয়েছে।
বন্যা আক্রান্ত ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজারের ৭৭ উপজেলা প্লাবিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন-পৌরসভা ৫৮৯টি। মোট ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৭৬৯ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ৪৮ লাখ ৬৯ হাজার ২৯৯। দুর্গতদের জন্য ৩ হাজার ১৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং সেখানে মোট ১ লাখ ১৫ হাজার ৩০ জন ও ১৮ হাজার ৯৬টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস উল্লেখ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান বলেন, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে ধীরগতিতে। দুর্গত এলাকায় এ পর্যন্ত ৩ কোটি ৫২ লাখ নগদ টাকা, ২০ হাজার ১৫০ টন চাল ও ১৫ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বেচ্ছাসেবীরা উদ্ধার এবং ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
যোগাযোগহীন মানুষ নিয়ে উৎকণ্ঠা
কয়েক দিন আগে চার বছরের মেয়ে নিয়ে ফেনীর ছনুয়া গ্রামের উত্তর টংগিরপাড় বাবার বাড়ি যান তানিয়া আক্তার। বৃহস্পতিবার সকালে ঘরে পানি ঢুকলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পাশের মসজিদে আশ্রয় নেন। ওইদিন সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম শহরে থাকা ননদ রোকসানা আক্তারকে এসএমএস পাঠিয়ে বাঁচানোর আকুতি জানান। এরপর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। কোথায়, কেমন আছে, গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জানতে পারেননি তানিয়া। দুশ্চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটানো রোকসানা বলেন, ‘মসজিদে ওরাসহ দেড় শতাধিক মানুষ আশ্রয় নেয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একটা বোট উদ্ধারে যায়। কিন্তু মানুষ বেশি থাকায় তারা উঠতে পারেনি। পরে আর কেউ উদ্ধারে যায়নি। এরপর থেকে কোনো খোঁজও পাচ্ছি না। বেঁচে আছে না মরে গেছে, তাও জানার সুযোগ নেই।’
ফেনীর পরশুরামের বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের কিসমত টেটেশ্বর গ্রামের হাজি মুসলিম মাস্টার বাড়িতে আবু তাহের স্ত্রী-ছেলে নিয়ে বসবাস করেন। বুধবার রাত থেকে তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ। কেমন আছেন, জানে না স্বজন। একাধিক উদ্ধারকারী দলকে ঠিকানা দিয়েও তাদের হদিস মেলেনি।
ফুলগাজীর নতুন মুন্সিরহাট ইউনিয়নের জগৎপুর গ্রামের আজম জহির নামের এক যুবক বুধবার রাত ১টায় ফেসবুক লাইভে বাঁচানোর আর্তনাদ করেন। এরপর থেকেই তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ। স্বজনরা উদ্ধারকারী দলকে ঠিকানা দিলেও এখনও তাঁর সন্ধান মেলেনি।
ছাগলনাইয়ার ৮ নম্বর ইউনিয়নের নিজপানুয়া স্কুল থেকে কিছুটা সামনে ফজলে আলি মুন্সি বাড়ির সঙ্গে পুরো একটি গ্রামের মানুষ আটকা পড়েছে বলে জানান উদ্ধার হয়ে আসা সুমন আহমেদ। তিনি বলেন, সেখানে কোনো খাবার নেই। অনেক শিশু, তাদের কান্না সহ্য করা যায় না।
স্বেচ্ছাসেবীরা বলছেন, ফেনীর পরশুরামের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফুলগাজীতেও আর যাওয়া যাচ্ছে না। বন্দুয়ার পর থেকে বিচ্ছিন্ন। ছাগলনাইয়া এখন পানির নিচে, বিশেষ করে শুভপুর ইউনিয়ন ও উত্তর মন্দিয়া গ্রাম। দাগনভূঞা প্লাবিত হচ্ছে। ফেনী শহরে অধিকাংশ বাসায় হাঁটুসমান পানি। স্বেচ্ছাসেবক আব্দুর রহমান বলেন, অনেকে ত্রাণ হিসেবে চাল-ডাল আনছেন। কিন্তু এসব রান্না করার অবস্থা নেই। এখানে এখন ত্রাণ নয়, জরুরি স্পিডবোট ও ইঞ্জিনচালিত নৌকা। না খেয়ে দু’দিন থাকা সম্ভব। কিন্তু পানির নিচে দুই মিনিটও সম্ভব না।
ফেনীর লালপুরে আতিকুর রহমানের আহাজারি, বৃহস্পতিবার দুপুরে ৭০ বছর বয়সী বাবা ও দুই সন্তানকে বাহুতে জড়িয়ে ভেসে ভেসে আসছিলাম। হঠাৎ তীব্র স্রোত বাহু থেকে তাদের ছিটকে ফেলে। খুঁজেও আর পাইনি। কীভাবে বাঁচব জানি না।
ফেনীর পশ্চিম ছাগলনাইয়ার বাসিন্দা তারেক হোসেন ঢাকায় সিএ ফার্মে কর্মরত। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার পর থেকে পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। হঠাৎ বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মায়ের নম্বর থেকে কল এলেও কথা বলতে পারিনি। এরপর আর পাচ্ছি না। তারা কী অবস্থায় আছে, নিরাপদ আছে কিনা– কিছুই জানি না।
উদ্ধারকাজে সমন্বয়হীনতা
ফেনীতে উদ্ধারকাজে স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা করছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও স্বেচ্ছাসেবীরা। তবে সেখানে বড় রকম সমন্বয়হীনতা দেখা গেছে। গতকাল উদ্ধারকাজে নিয়োজিত মেজর শুভম আফ্রিদি জানান, সব ধরনের প্রস্তুতি থাকলেও সমন্বয়ের অভাবে উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বেশ কিছু জায়গায় এখনও উদ্ধারকর্মী পৌঁছায়নি, ত্রাণও যায়নি। আমরা যেখানে যেটা দরকার, চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, এখানে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। ঢাকা বা দেশের অন্যান্য জায়গা থেকে যারা উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমের জন্য এসেছেন, তাদের সঙ্গে স্থানীয়দের ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। যারা বাইরে থেকে এসেছেন, তারা একটা পরিকল্পনা নিয়ে কাজের চেষ্টা করছেন। স্থানীয়রাও আপনজনের জন্য কাজ করতে চাচ্ছেন। ফলে সত্যিই যাদের সাহায্য পাওয়া জরুরি, তারা পাচ্ছেন না। ছাত্ররাও ইচ্ছামতো কাজ করতে থাকায় জেলা প্রশাসন তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারছে না। মারা যাওয়ার পরে লাশ উদ্ধার করে তো লাভ নেই।
আশ্রয়কেন্দ্রে কষ্টের নেই শেষ
স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন ঘরহারা মানুষ। কিন্তু সেখানে বিদ্যুৎ নেই। টয়লেট নেই। নেই বিশুদ্ধ খাবার পানি। খাবার ও চিকিৎসা সংকটে মানবেতর জীবন কাটছে। গতকাল পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে মেডিকেল টিমের কার্যক্রম চোখে পড়েনি। শিশুদের খাবার নিয়েও সংকটের মধ্যে পড়েছেন অভিভাবকরা। ফেনীর জেলা প্রশাসক শাহীনা আক্তার বলেন, ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরামের পাশাপাশি সদর উপজেলায়ও পানি ঢুকে গেছে। এখন আমাদের প্রথম লক্ষ্য উদ্ধার কার্যক্রম। জেলার প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করেছি। ওপরের তলায় আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। এখানে খিচুড়ি রান্না করে বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া শুকনা খাবারসহ সম্ভাব্য সব সহযোগিতার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ভালো নেই বাকি জেলার পানিবন্দি লাখো মানুষ
ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে চট্টগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। গতকাল ভারী বৃষ্টি না হওয়ায় অনেক এলাকা থেকে পানি নামছে। নগরীও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে শুরু করেছে। তবে পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে ডুবে গেছে চট্টগ্রামের শস্যভান্ডার রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিল। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে হাটহাজারীতে ঘরে বন্যার পানির মধ্যে বিদ্যুৎস্পর্শে সাকিব ইউসুফ নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। একই রাতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগড়ায় চলন্ত পিকআপের ওপর গাছ উপড়ে পড়লে মারা যান মো. মিজান, আহত হন অন্তত ছয়জন। একই দিন ফটিকছড়ি ও রাঙ্গুনিয়ায় পানিতে ভেসে যাওয়া মো. সামি (১২) ও মো. রনির (১৭) মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ফটিকছড়ির ভূজপুর ইউনিয়নে নিখোঁজ আছেন মো. ইমরান ও রোজি আহমদ।
কুমিল্লায় গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বুড়িচং উপজেলার ৫ ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে বুড়িচংয়ের ষোলনল ইউনিয়নের বুড়বুড়িয়ার কাছে বাঁধটি ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। বুড়িচং ইউএনওর সাহিদা আক্তার জানান, প্রাথমিক হিসাবে উপজেলার ৭ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে লক্ষাধিক পরিবার পানিবন্দি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান জানান, স্থানীয়দের চেষ্টা সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে বাঁধের অন্তত ৩০ ফুট ভেঙে যায়। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবেদ আলী জানান, দুর্গত এলাকায় ৭২৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
ঢলে ভেসে কক্সবাজারের রামুতে নিখোঁজ চারজনের মধ্যে দু’জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে রামুর গর্জনিয়া ইউনিয়নের পূর্ব জুমছড়ি এলাকার আমজাদ হোসেন (২২) এবং ঈদগড় ইউনিয়নের বৈদ্যপাড়া এলাকার চচিং রাখাইনের (৫৫) লাশ উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজ রয়েছেন গর্জনিয়া ইউনিয়নের রবিউল আলম (৩৫) ও ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের লম্বরিপাড়া এলাকার নুরুল কবিরের ছেলে মো. জুনাইদ (১০)।
সিলেটের ওসমানীনগরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। তবে সাদিপুর ইউনিয়নের ছয় গ্রামের পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি। হবিগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় অন্তত ১৪ হাজার ৩৪০ পরিবার পানিবন্দি। খোয়াই, করাঙ্গি, কুশিয়ারা, ভেড়ামোহনা নদী এখনও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১২৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে হবিগঞ্জের কয়েকটি বাঁধ ভেঙে কিশোরগঞ্জের হাওরে প্রচণ্ডবেগে ঢুকছে পানি। এতে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে হাওর উপজেলা ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও নিকলীতে।
মৌলভীবাজারের ধলাই ছাড়া প্রধান সব নদনদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল বন্যার কিছুটা উন্নতি হলেও নিম্নাঞ্চল ডুবে রয়েছে। রাজনগর উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকার ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কোমরসমান পানি। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে সদর ইউনিয়নের ময়নার দোকান নামক স্থানে বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হৃদয় মিয়া (২২)। কুলাউড়া উপজেলায় মনু নদীর তিন স্থানে বৃহস্পতিবার রাতে বাঁধ ভেঙে টিলাগাঁও ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি মানুষ উদ্ধারে কাজ করছেন উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও স্কাউটস সদস্যরা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এখনও পানিবন্দি পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ। সালদা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কসবা-নয়নপুর সড়কের বায়েক এলাকায় বৃহস্পতিবার রাতে রাস্তা ভেঙে গেছে। খুলনার পাইকগাছা উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের কালীনগর গ্রামে ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ গতকাল ভেঙে গেলে ১৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়। পানিবন্দি আছে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ।
এদিকে বৃষ্টি না হওয়ায় দুই পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতেও বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। তবে পানি না নামায় খাগড়াছড়ির সঙ্গে সাজেক ও লংগদুর সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। দুর্গতদের মধ্যে গতকাল খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছে সেনাবাহিনী। রাঙামাটিতে কাপ্তাই হ্রদে পানি বেড়ে যাওয়ায় পর্যটনের ঝুলন্ত সেতুটি ডুবে রয়েছে। এখনও জেলার ১২টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি।
বাংলাদেশ সময়: ৮:২৬:২৫ ● ৮৬ বার পঠিত