শুক্রবার ● ২৩ আগস্ট ২০২৪

‘সীমান্ত বাসিন্দার কাছে অচেনা দুর্যোগ’

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » ‘সীমান্ত বাসিন্দার কাছে অচেনা দুর্যোগ’
শুক্রবার ● ২৩ আগস্ট ২০২৪


ফাইল ছবি

বঙ্গনিউজ ডেস্কঃ ‘সীমান্ত বাসিন্দার কাছে পানিবন্দি জীবন ও এমন বন্যা অচেনা। ফেনী নদীতে সারাবছর পানি খুব কম থাকে। বর্ষায়ও খুব একটা প্লাবিত হয় না। তবে এবারের বন্যায় ফেনী নদীর পানি ফুলেফেঁপে দু’পাড় ভাঙছে। প্রত্যন্ত এলাকা প্লাবিত। সীমান্তের শূন্যরেখার আশপাশে যারা বসবাস করছেন, তারা বিস্মিত। তাদের কাছে এটা একেবারে অচেনা দুর্যোগ।’ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সীমান্তের প্রত্যন্ত জনপদে কাজ করছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা। খাগড়াছড়ির বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার আলাপকালে এমন অভিজ্ঞতার কথা জানালেন বিজিবির রামগড় ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল সৈয়দ ইমাম হোসেন। তিনি বলেন, ফেনী নদী আন্তর্জাতিক সীমারেখা। এর অর্ধেক বাংলাদেশের আর অর্ধেক ভারতের মধ্যে পড়েছে। আমরা যখন বন্যার্তদের সহযোগিতা করছি, তখন তাদের প্রায় সবাই এক বাক্যে বলছেন, এই ধরনের বন্যা তারা কখনও দেখেননি। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকার বয়োবৃদ্ধ লোকজনও হতবাক! রামগড়, ফটিকছড়ি, ফেনী ও আশপাশের বহু মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত। ফেনী নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় আশপাশের লোকজনকে রশি দিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে।

হঠাৎ বন্যায় ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জসহ কয়েকটি জেলার জনজীবন বিপর্যস্ত। এরই মধ্যে সরকারি-বেসরকারি উদ্যাগে বানভাসি মানুষকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা সীমান্তের প্রত্যন্ত এলাকায় বন্যার্তদের নানাভাবে সহযোগিতা করছেন। ফেনী, কুমিল্লা, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও মৌলভীবাজারের সীমান্তবর্তী দুর্গত এলাকায় উদ্ধার কার্যক্রম, ত্রাণ বিতরণ ও নদী রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করছে বিজিবি।

বিজিবির একাধিক ব্যাটালিয়নের অধিনায়কের সঙ্গে কথা বলে দুর্গত এলাকার পরিস্থিতি সম্পর্কে নানা তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে ফেনীর সীমান্তবর্তী গ্রামের বানভাসিদের নৌকা ও ট্রলারের মাধ্যমে নিরাপদ আশ্রয়স্থানে নিচ্ছে বিজিবি। সীমান্তের সবচেয়ে দুর্গত এলাকায় কী ধরনের পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তা উঠে আসে বিজিবি সদস্যদের বর্ণনায়।

বিজিবির রামগড় ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক জানান, আমরা নানাভাবে বন্যাদুর্গতদের সহযোগিতা করে যাচ্ছি। আমাদের ব্যাটালিয়নের প্রায় সব সদস্য বন্যাদুর্গত মানুষকে উদ্ধার ও তাদের সহায়তায় নিয়োজিত। রামগড়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পানি বাড়তে থাকে। এর পরই আমরা মাঠে নেমে পড়েছি। ঢাকা-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের সোনাইপুল বাজার থেকে মহামুনি ব্রিজ পর্যন্ত সড়কে ২-৩ ফুট পানি আছে। এ ছাড়া কয়লার বাজার এলাকায় রাস্তার ওপরে ৫-৬ ফুট পানি রয়েছে। রামগড় পৌরসভা ভবনের আশপাশ ডুবে গেছে। নাকাপা এলাকায় রাস্তার ওপর পাহাড়ধসে পড়েছে। ফায়ার সার্ভিস বৃহস্পতিবার কাজ শুরু করেছে। ওই এলাকায় সব ধরনের গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে।

রামগড় ব্যাটালিয়নের (৪৩ বিজিবি) অধীন আঁধারমানিক বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় ৬৯ পরিবারের ৩০৩ জন সদস্য, নলুয়াটিলা বিওপির দায়িত্বপূর্ণ ১০৫টি পরিবারের ৬০০ জন সদস্য (উদ্ধারকৃত পরিবার স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থান করছে), লাচারীপাড়া বিওপির দায়িত্বপূর্ণ ৪১টি পরিবারের ২০৬ জন সদস্য এবং লক্ষ্মীছড়া বিওপির দায়িত্বপূর্ণ ৮১টি পরিবারের ৪৪১ সদস্যসহ মোট ২৯৬টি পরিবারের ১ হাজার ৫৫০ জন সদস্যকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে বিজিবি। এ ছাড়া ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় আকস্মিক সৃষ্ট বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত গরিব ও অসহায় ২০০টি পরিবারের মাঝে তাৎক্ষণিকভাবে ত্রাণসামগ্রীও বিতরণ করা হয়েছে। এসব ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, তেল, লবণ এবং শুকনা খাবাবের মধ্যে রয়েছে চিড়া, মুড়ি, বিস্কুট, বিশুদ্ধ পানি, গুড় ও কলা।

বিজিবি জানিয়েছে, দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় অতিবৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের বিজিবি উদ্ধারকারী দলের উদ্ধার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। যে কোনো পরিস্থিতিতে সাধারণ জনগণের পাশে রয়েছে বিজিবি ব্যাটালিয়ন।

লে. কর্নেল সৈয়দ ইমাম হোসেন বলেন, অতীতের মতো এবারও বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বিজিবি। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত ব্যাটালিয়ন অধীনস্ত এলাকার দুর্গত মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত থাকবে।

বিজিবির মারিশ্যা ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আতিক বলেন, খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যাওয়ার রাস্তায় একটি ব্রিজ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টি থেমে গেলে বন্যা পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে। অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন।

ফেনীর বন্যাদুর্গত মানুষদের উদ্ধার কাজে নেমেছে বিজিবির ৪ ব্যাটালিয়ন। ফেনীর পরিস্থিতি নিয়ে বিজিবি জানায়, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী উপজেলার প্রায় ৮০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে বিজিবি নৌকা ও ট্রলারের মাধ্যমে পানিবন্দি মানুষদের নিরাপদ আশ্রয় স্থানে নিয়ে আসছে। পাশাপাশি উদ্ধারকৃত জনসাধারণের মাঝে বিশুদ্ধ পানি ও জরুরি শুকনা খাবারও বিতরণ করা হয়।

এদিকে কুমিল্লায় গোমতী নদী তীরবর্তী বন্যাদুর্গত অসহায় মানুষদের উদ্ধার ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ ও নদী রক্ষা বাঁধ নির্মাণ বিজিবির কুমিল্লা ব্যাটালিয়ন। বিবিরবাজার বিওপির দায়িত্বপূর্ণ গোমতী নদীতীরবর্তী বন্যাদুর্গত এলাকার অসহায় মানুষদের উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছে দিচ্ছে তারা। পাশাপাশি বিজিবির উদ্যোগে তাদের মাঝে ত্রাণসামগ্রীও বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া গোমতী নদীর তীরে ফাটল দেখা দিলে নদীর ভাঙন রোধে স্থানীয় জনসাধারণকে সঙ্গে নিয়ে বালুর বস্তা ফেলে বাঁধ নির্মাণ করেন বিজিবি সদস্যরা।

বাংলাদেশ সময়: ৯:১৭:১৩ ● ৬৫ বার পঠিত