বুধবার ● ৩ জুলাই ২০২৪

আন্দোলনমুখী নেতৃত্বের খোঁজে বিএনপি

Home Page » জাতীয় » আন্দোলনমুখী নেতৃত্বের খোঁজে বিএনপি
বুধবার ● ৩ জুলাই ২০২৪


  বিএনপি

বঙ্গনিউজঃ দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আবারও রাজপথে ফিরেছে বিএনপি। এই ইস্যুতে এরই মধ্যে তিন দিনের কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। শিগগির ঘোষণা করা হবে নতুন কর্মসূচি। তবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণসহ গুরুত্বপূর্ণ চার মহানগরে তিন সপ্তাহ ধরে নেতৃত্বহীন বিএনপি। গত ১৩ জুন ঢাকার দুটি এবং চট্টগ্রাম ও বরিশাল মহানগর কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। সেদিনই বিলুপ্ত করা হয় গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তখন বলা হয়েছিল, যত দ্রুত সম্ভব নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে। তবে ২০ দিন পার হলেও চার মহানগর ও যুবদলের নতুন নেতৃত্ব দিতে পারেনি বিএনপি। যদিও এসব কমিটি গঠন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে দলীয় সূত্রের দাবি। সেক্ষেত্রে শক্তিশালী আন্দোলনের জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবেন, এমন নেতাদের মূল পদের জন্য বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

বিএনপির দপ্তর সূত্র জানায়, মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন এখনো প্রক্রিয়াধীন। গত সপ্তাহে হঠাৎ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হওয়া কমিটি ঘোষণা থেকে বিরত থাকে দলের হাইকমান্ড। এ ছাড়া সম্প্রতি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে বড় রদবদল ও একাধিক কমিটি বিলুপ্তির ঘটনায় দলের ভেতরে ও বাইরে নানা আলোচনার কারণে কিছুটা সময় নেওয়া হচ্ছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, পদপ্রত্যাশী নেতাদের পারফরম্যান্স মূল্যায়নের জন্য কিছুটা ধীরে চলার কৌশলও নিচ্ছেন নীতিনির্ধারকরা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকায় সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটাতে বারবার নানামুখী উদ্যোগ নেয় বিএনপির হাইকমান্ড। তবে ঢাকায় সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে খোদ দলের মধ্যেই প্রশ্ন রয়েছে। বিশেষ করে গত বছরের ২৮ অক্টোবরের পর লাগাতার আন্দোলনে মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ভূমিকা নিয়ে এই প্রশ্ন আরও বেশি জোরালো হয়। ফলে আন্দোলন কর্মসূচিতে ভূমিকা মূল্যায়ন করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম ও বরিশাল মহানগর বিএনপি এবং জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেয় বিএনপি।জানা গেছে, সভা-সমাবেশে মঞ্চ কাঁপালেও ঢাকার দুই মহানগরের নেতাদের প্রকৃত সক্ষমতা নিয়ে সন্দিহান ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত মহানগর নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল কর্মসূচিতে। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিও ছিল। তবে ওইদিন দুপুর থেকে পুলিশি অভিযানে চিত্র একেবারে বদলে যায়। ঝটিকা মিছিল ছাড়া রাজপথে নেতাদের মুখ দেখা যায়নি। মাঠপর্যায়েরে নেতাকর্মীরা চাইছেন, নগরে এমন নেতৃত্ব আসুক যারা প্রতিকূলতায় সাহস নিয়ে থাকবেন রাজপথে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘ঢাকা মহানগর হচ্ছে কেন্দ্রবিন্দু। আমাদের সব আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, ঢাকায় সরকারকে পরাজিত করা। সে কারণে ঢাকা মহানগরের দায়িত্ব অনেক বেশি। ঢাকাকে সেইভাবে গড়ে তোলেন যেন প্রয়োজনে দুর্ভেদ্য দুর্গে পরিণত হয়। এই দুর্গ যেন কেউ ভাঙতে না পারে সেভাবে সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। যারা পুলিশের হুঁইসেল শুনলে দৌঁড়াবে না।’

জানা গেছে, ঢাকায় বিএনপির রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরেই বিভক্ত। এক গ্রুপ নেতৃত্বে এলে নিষ্ক্রিয় হয় আরেক গ্রুপ। এমনকি এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে ব্যর্থ প্রমাণে মরিয়া হয়ে উঠে। অবশ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বিরুদ্ধে ‘মাইম্যান’ (নিজের অনুগত) সৃষ্টির অভিযোগও অনেক পুরোনো। গ্রুপিং, কোন্দল আর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে বাদ পড়েন দলের অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে আন্দোলন সংগ্রামে। এমন বাস্তবতায় মাঠের নেতাকর্মীরা বলছেন, সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে হলে নেতাদের ঐক্য যেমন দরকার, তেমনই দরকার সঠিক কর্মপরিকল্পনা।

বিএনপির কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর একাধিক নেতা বলেন, আন্দোলন সংগ্রামে যথাযথ ভূমিকা না রাখার কারণে যদি কমিটির শীর্ষ নেতাদের দায়ী করা হয়, তাহলে নতুন কমিটিতে তাদেরই আবার কেন রাখতে হবে? যদিও বিগত আন্দোলনে ব্যর্থতার অভিযোগ মানতে চান না মহানগর বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির নেতারা।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেন, ‘কমিটি গঠনে অনিয়ম বা দুর্নীতি করার কোনো সুযোগ নেই। প্রতিটি কমিটি আমরা ভোটের মাধ্যমে এবং জনমত নিয়ে করেছি। মহানগর উত্তর বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ নয়।’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু বলেন, ‘মহানগর বিএনপি দুর্বল তা নয়। বরং সংগঠন অনেক শক্তিশালী। আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এত নির্যাতনের পরও কীভাবে একটি সংগঠন বা লোক এদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে? তার পরও তো ওরা চেষ্টা করেছে।’

জানা গেছে, এবারও ঢাকা মহানগর দক্ষিণে নতুন কমিটির শীর্ষ পদের আলোচনায় আছেন নগর বিএনপির সাবেক নেতা কাজী আবুল বাশার, শেখ রবিউল আলম রবি, নবীউল্লাহ নবী, রফিকুল আলম মজনু, তানভীর আহমেদ রবিন, লিটন মাহমুদ, হামিদুর রহমান হামিদ, হাবিবুর রশিদ হাবিব, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। উত্তর বিএনপির শীর্ষ পদের জন্য আলোচনায় আছেন যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, যুবদলের মামুন হাসান, মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক নেতা আমিনুল হক, তাবিথ আউয়াল, আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, এম কফিল উদ্দিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, এজিএম শামসুল হক, আক্তার হোসেন প্রমুখ।

ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে মহানগরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আছি। কাউন্সিলর হয়ে প্যানেল মেয়র ছিলাম। যখনই আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছি। আগামীতেও সংগঠনের জন্য কাজ করতে চাই। দল চাইলে কাজ করার জন্য প্রস্তুত আছি।’

এদিকে যুবদলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি শীর্ষ পদের জন্য সর্বাধিক আলোচনায় আছেন সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, সহসভাপতি মামুন হাসান, নুরুল ইসলাম নয়ন, সাবেক সদস্য সাঈদ ইকবাল টিটু, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ। তবে মুন্না ও নয়নের সমন্বয়ে কমিটির সম্ভাবনা বেশি।

বাংলাদেশ সময়: ১০:২৫:৪৫ ● ১১৩ বার পঠিত