শুক্রবার ● ২৮ জুন ২০২৪
জটিলতা কাটিয়ে তারেককে ফিরিয়ে আনতে সরকার বদ্ধপরিকর:প্রধানমন্ত্রী
Home Page » জাতীয় » জটিলতা কাটিয়ে তারেককে ফিরিয়ে আনতে সরকার বদ্ধপরিকর:প্রধানমন্ত্রীবঙ্গ-নিউজ:একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা, মানিলন্ডারিং এবং দুর্নীতির একাধিক মামলায় দণ্ডিত বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার জাতীয় সংসদে তিনি বলেন, ‘তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে কিছু আইনি জটিলতা রয়েছে। কিন্তু সকল জটিলতা কাটিয়ে আইনের মাধ্যমে তাকে ফিরিয়ে আনতে সরকার বদ্ধপরিকর।’
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ফরিদা ইয়াসমিনের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে জোরদার কূটনৈতিক এবং আইনি প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ বজায় রেখে এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে। আশা করছি, শিগগিরই আমরা এই প্রক্রিয়ার ইতিবাচক ফলাফল দেখতে পাবো।’
একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার ১৫ জন পলাতক আসামির মধ্যে তারেক রহমানও রয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে পলাতক আসামি মাওলানা তাজউদ্দিন, মো. হারিছ চৌধুরী এবং রাতুল আহমেদ বাবু ওরফে রাতুল বাবুর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেসব দেশে পলাতক আসামিরা অবস্থান করছেন, সেসব দেশের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে এ বিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের কাছে বেশ কয়েকটি চিঠি পাঠিয়েছেন। এছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে এ বিষয়ে তিনি ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা কামনা করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘খুনিদের অবস্থান সম্পর্কিত আইনি জটিলতার কারণে এ বিষয়ে প্রত্যাশিত অগ্রগতি হয়নি। তবে খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা এবং একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করার জন্য ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র, আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ সমন্বিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূরের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়াউর রহমান আইয়ুব খানের (পাকিস্তানের সামরিক শাসক) অনুসরণে সারাজীবন রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকার জন্য কিছু বিপথগামী রাজনীতিবিদদের নিয়ে বিএনপি গঠন করেছিলেন। তিনি অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিলেন, বিএনপিও অবৈধভাবে গঠন করেছিলেন। খুনি জিয়া হাতে রক্তের দাগ নিয়ে খাবার টেবিলে বসতেন, খাওয়ার সময় মৃত্যু পরোয়ানায় স্বাক্ষর করতেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘জিয়ার আমলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার প্রতিবাদ করায় ঢাকা শহর ছাত্রলীগ নেতা মাহফুজ বাবু গুমের শিকার হন। জিয়ার গুন্ডারা চট্টগ্রামের জোটের নেতা মৌলভী সৈয়দ, যুবলীগ নেতা মুনির এবং অসংখ্য আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীকে হত্যা করে।’
জিয়াউর রহমানের তীব্র সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘জিয়া যুদ্ধাপরাধী এবং পাকিস্তানি নাগরিক গোলাম আযমকে দেশে ফিরিয়ে আনেন এবং স্বাধীনতাবিরোধী শাহ আজিজ ও আলীমকে মন্ত্রিসভার সদস্য করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করতেন না। জিয়াউর রহমানের সাড়ে পাঁচ বছরের শাসনামলে একুশ বার সেনা অভ্যুত্থান এবং প্রতি-অভ্যুত্থান হয়েছিল। লে. কর্নেল তাহেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। জিয়া চরম নৃশংস ও ক্রুর হয়ে উঠেছিলেন।’
এ্যান্থনি মাসকারেনহাসের ‘বাংলাদেশ: এ লিগ্যাসি অফ ব্লাড’ বইটি উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেখানে তিনি লিখেছেন, সরকারি হিসেব অনুযায়ী, ১৯৭৭ সালের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত মাত্র দুই মাসে জিয়া ১,১৪৩ জন সেনা সদস্যকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছিলেন।’
আসাদুজ্জামান নূরের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার পর জিয়াউর রহমান সংবিধান লঙ্ঘন করে একই সঙ্গে সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতির পদ দখল করেন। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়ার সরাসরি যুক্ত ছিল। জাতির জনককে হত্যার ষড়যন্ত্র ফারুক-রশিদ করেছিলেন এবং জিয়া তা জানতেন।’
প্রধানমন্ত্রী বিএনপির দুর্নীতি, ক্ষমতায় থাকাকালীন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ওপর তাদের অত্যাচার এবং বিরোধী দলে থাকাকালীন অগ্নিসন্ত্রাসের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের কথা তাদের (বিএনপি) মুখে শোভা পায় না।’
বাংলাদেশ সময়: ১৮:৪৩:৪৮ ● ৭৭ বার পঠিত