শনিবার ● ১৮ মে ২০২৪

শয়তান যেভাবে মানুষের মধ্যে বিচরণ করে

Home Page » ইতিহাস » শয়তান যেভাবে মানুষের মধ্যে বিচরণ করে
শনিবার ● ১৮ মে ২০২৪


ছবি : কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি

বঙ্গনিউজ ডেস্ক : পৃথিবীতে মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো শয়তান। তার মিশন মানুষকে বিভ্রান্ত করা। আল্লাহর পথ থেকে দূরে সরিয়ে জাহান্নামের পথে পরিচালিত করা। মানুষের ইবাদতগুলোকে ধ্বংস করে দেওয়া।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তার কুমন্ত্রণার ব্যাপারে মানুষকে সতর্ক করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! ইসলামের মধ্যে পূর্ণভাবে প্রবেশ করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চোলো না, নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২০৮)
শয়তান অভিশপ্ত হওয়ার পর বনি আদমকে বিভ্রান্ত করার চ্যালেঞ্জ করেছিল এবং মহান আল্লাহর কাছে কিয়ামত পর্যন্ত অবকাশ চেয়েছিল, মহান আল্লাহ তার সেই আবদার পূরণ করলেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সে (শয়তান) বলল, সেদিন পর্যন্ত আমাকে অবকাশ দিন, যেদিন তাদেরকে পুনরুজ্জীবিত করা হবে।

আল্লাহ বললেন, তোকে অবকাশ দেওয়া হলো। সে বলল, আপনি আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, সে কারণে অবশ্যই আমি তাদের জন্য আপনার সোজা পথে বসে থাকব। তারপর অবশ্যই তাদের কাছে উপস্থিত হব, তাদের সামনে থেকে ও তাদের পেছন থেকে এবং তাদের ডান দিক থেকে ও তাদের বাঁ দিক থেকে। আর আপনি তাদের বেশির ভাগকে কৃতজ্ঞ পাবেন না।

তিনি বললেন, তুমি এখান থেকে বের হও লাঞ্ছিত বিতাড়িত অবস্থায়। অবশ্যই তাদের মধ্য থেকে যে তোমার অনুসরণ করবে, আমি তোমাদের সবাইকে দিয়েই জাহান্নাম ভরে দেব।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৪-১৮)
মহান আল্লাহ শয়তানকে এমন শক্তি দিয়েছেন যে সে মানুষের শিরা-উপশিরা পর্যন্ত বিচরণ করতে পারে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, শয়তান আদম সন্তানের শিরা-উপশিরায় বিচরণ করতে পারে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭১৯)

কথাটি গতানুগতিকভাবে চিন্তা করলেও হৃদয়ে নাড়া দেয় যে মানুষের শিরা-উপশিরায়ও শয়তানের প্রভাব রয়েছে।

আর যদি মানুষের শিরা-উপশিরা সম্পর্কে বিজ্ঞানের বক্তব্যগুলো জানা যায়, তাহলে তা মানুষের বিস্ময় আরো বাড়িয়ে দেবে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে এসেছে, বিজ্ঞানের ভাষ্য মতে, একটি মানব শিশুর শরীরে থাকা রক্তনালি, শিরা-উপশিরা ইত্যাদিকে এক পাটাতনে এনে একটানা বিছিয়ে দিলে তার দৈর্ঘ্য হবে অন্তত ৬০ হাজার মাইল বা ৯৬ হাজার কিলোমিটার। আর বড় বেলায়, মানে প্রাপ্তবয়স্কদের শরীরে এই রক্ত সংবহনতন্ত্রের দৈর্ঘ্য এক লাখ মাইল বা এক লাখ ৬০ হাজার কিলোমিটারের বেশি হয়। অথচ স্পেস ডটকমের তথ্যমতে, পৃথিবীর নিরক্ষীয় পরিধি হলো ২৪ হাজার ৯০১ মাইল (৪০,০৭৫ কিমি), যা মানব শিশুর শিরা-উপশিরার দৈর্ঘ্যের অর্ধেকের কম। সুবহানাল্লাহ।

মহান আল্লাহর হুকুমে রক্তের কণাগুলো এই বিশাল পথে ছুটে চলে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য, সুস্থ রাখার জন্য। আবার শয়তান এই বিশাল পথে ছুটে চলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য, কষ্টে ফেলার জন্য। আখিরাত থেকে বঞ্চিত করার জন্য।

আমেরিকার বিজ্ঞান জাদুঘর ও বিজ্ঞানবিষয়ক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ফ্রাংকলিন ইনস্টিটিউট জানাচ্ছে, মানুষের শরীরে রক্ত সংবহনতন্ত্র যেভাবে ছড়িয়ে থাকে, তাতে মানব শরীর আক্ষরিক অর্থেই রক্তিম বলা চলে।

শরীরের পুরো ত্বকের নিচেই আছে রক্তের উপস্থিতি। তাই তো আঘাত বা যেকোনো ছোটখাটো কাটাছেঁড়ায়ই রক্তারক্তি কাণ্ড হয়। এই তথ্য থেকে বোঝা যায়, মানবদেহের প্রতিটি অংশেই শয়তান উপস্থিত হতে পারে এবং মানুষকে কুমন্ত্রণা দিতে পারে। শয়তানের বিচরণের গতি ও পরিধি মানুষের কল্পনার বাইরে। এর আরেকটি উদাহরণ হলো শয়তান একসময় আসমান থেকে খবর চুরি করে আনত। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি (আল্লাহ) প্রত্যেক বিতাড়িত শয়তান থেকে আকাশকে নিরাপদ করে দিয়েছি।’ (সুরা : হিজর, আয়াত : ১৭)

ইবনে আব্বাস (রা.) উল্লিখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, একসময় আকাশে শয়তানের প্রবেশাধিকার ছিল। শয়তানরা আকাশে গিয়ে ফেরেশতাদের কথোপকথন থেকে গায়েব বা অদৃশ্যের কিছু খবরাখবর শুনত।

পরে সেগুলো পাদ্রি বা জ্যোতির্বিদদের কাছে বলত। ঈসা (আ.)-এর জন্মের পর প্রথম তিন আসমানে তাদের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করা হয়। আর মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মের পর সব আসমানে শয়তানদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। এর পর থেকে যখনই কোনো শয়তান ঊর্ধ্বাকাশে উঠতে চেষ্টা করে, জ্বলন্ত আগুন বা উল্কা তাকে ধাওয়া করে। (তাফসিরে রাজি : ৯/১৬৯, কাশশাফ : ২/১৮৮)

পৃথিবী থেকে প্রথম আসমান ঠিক কত দূরে তা জানা দুষ্কর। তবে গণমাধ্যমের তথ্য মতে, ২০২২ সালে বিজ্ঞানীরা ইরেন্ডেল নামের নতুন একটি নক্ষত্র আবিষ্কার করেন। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, নক্ষত্রটি পৃথিবী থেকে কমপক্ষে ১২.৯ মিলিয়ন আলোক বর্ষ দূরে রয়েছে। আলোর বেগ প্রতি সেকেন্ডে তিন লাখ কিলোমিটার। আলো যদি এই বেগে টানা এক বছর ভ্রমণ করে, তাহলে যে দূরত্ব অতিক্রম করবে, তাকে বলে এক আলোক বর্ষ।

প্রথম আসমানের নিচে এমন আরো অনেক নক্ষত্র রয়েছে, যেগুলোর তথ্য এখনো মানুষের অজানা। যা হোক একসময় শয়তান মুহূর্তে সেই দূরত্ব থেকেও খবর চুরি করে মানুষকে বিভ্রান্ত করত।

তাই মুমিনের উচিত শয়তানের অনিষ্ট থেকে বাঁচতে সদা সতর্ক থাকা। সব সময় মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া। কারণ মহান আল্লাহ বান্দাকে এই নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যদি শয়তানের পক্ষ থেকে কোনো প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে তুমি আল্লাহর আশ্রয় চাও। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ২০০)

বাংলাদেশ সময়: ১২:৫৭:৩৭ ● ১৬৫ বার পঠিত