শনিবার ● ১৮ মে ২০২৪

ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে কালের সাক্ষী ‘অভিশপ্ত নীলকুঠি’

Home Page » ইতিহাস » ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে কালের সাক্ষী ‘অভিশপ্ত নীলকুঠি’
শনিবার ● ১৮ মে ২০২৪


 ঝিনাইদহের মহেশপুরের নীলকুঠি

বঙ্গনিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য। তবে যত্নের অভাবে কালের বিবর্তনে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যগুলো। এমনই এক প্রচীন স্থাপত্য নীলকরদের স্মৃতিবিজড়িত ‘নীলকুঠি’।

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার খালিশপুর গ্রামের কপোতাক্ষ নদের ধারে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভবনটি। স্থানীয় মানুষের কাছে কাচারি বাড়ি হিসেবে পরিচিত এই নীলকুঠি। খালিশপুর বাজারের পশ্চিমপাশে ৯ একরেরও বেশি জায়গা নিয়ে ভবনটি অবস্থিত।

অনেকেই ধারণা করেন দালানটি আঠারো শতকে নির্মিত হয়েছিল। এ কুঠি বাড়ি নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য ছিল পূর্ব বাংলার কৃষকদের নীল উৎপাদনে উৎসাহী করা ও নীলচাষ দেখাশোনা করা। ইংরেজ মি. ডেভরেল এ কুঠিবাড়ি থেকে এই অঞ্চলের নীলচাষ পরিচালনা করতেন।

শিল্প বিপ্লবের পথিকৃৎ ছিল ইংল্যান্ড। ওই সময় ইংল্যান্ডে সাদা কাপড়ের চাহিদা ছিল অত্যাধিক। কাপড়ের সাদা রং বজায় রাখার জন্য নীল ছিল একটি অত্যাবশকীয় উপাদান। ভারতবর্ষ বৃটিশদের উপনিবেশ হওয়ায় বলপূর্বক ইংরেজরা ভারতবর্ষকে নীলচাষের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলে। নীলচাষের ফলে জমির উর্বরতা হারাত, তাই চাষিদের নীলচাষে অনীহা ছিল। অধিকাংশ চাষিরা ইংরেজদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যও পেত না। যারা নীলচাষ করত না তাদের নানাভাবে নির্যাতন করা হতো। এই কুঠিরেই কিছু কক্ষ নির্যাতনের জন্য ব্যবহার করা হতো।

পরে ইংরেজরা উপমহাদেশে থেকে বিতাড়িত হলে কুঠির ভবনটি সিও অফিস হিসেবে ১৯৫৬-৫৭ ও ১৯৮৩-৮৪ সালে ব্যবহৃত হয়েছিল। ১৯৮৪ সালের পর থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত এটি ইউনিয়ন ভূমি অফিস ছিল। বর্তমানে কুঠিরটি জরাজীর্ণ, সংস্কারের অভাবে কুঠি বাড়িটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

স্থানীয় বাসিন্দা হোসেন আলী (৬৫) জানান, বেশ কয়েক বছর আগে সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও তা আর আলোর মুখ দেখেনি। কুঠিবাড়ির চার পাশে রয়েছে শত বছরের বড় বড় আমগাছ। পাশে আরও অনেক বাড়ি ঘর ছিল, যা ব্রিটিশদের গাড়ি রাখাসহ নানা কাজে ব্যবহৃত হতো। এ ছাড়াও ছিল বৈকালীন অবকাশ যাপনের জন্য জায়গা, যা ধ্বংস হয়ে গেছে। এখনই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে নীলকুঠি অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে।

স্থানীয়রা জানান, ২০১৮-১৯ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশাফুর রহমান এখানে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান ইকোপার্ক তৈরি উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি আলোর মুখ দেখেনি।

স্থানীয়দের দাবি, কুঠিবাড়িটি এলাকার মানুষের ওপর অত্যাচার ও নির্যাতনের সাক্ষ্য দিচ্ছে। ফলে এটি এখন ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করছে। তাই এটি সংরক্ষণ করার দাবি তাদের।

ঝিনাইদহ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) সালাউদ্দিন মিয়াজী বলেন, প্রাচীন ঐতিহ্য বহনকারী নীলকুঠিটি সংস্কার করে এখানে একটি ইকোপার্ক করার জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

বাংলাদেশ সময়: ১২:০৩:১২ ● ১৭৭ বার পঠিত