শনিবার ● ১৮ মে ২০২৪
বিশ্ব জাদুঘর দিবস
Home Page » জাতীয় » বিশ্ব জাদুঘর দিবসবঙ্গনিউজ : জাদু বা কুহকের সঙ্গে ‘জাদুঘর’ শব্দটির সম্পর্ক বেশ নিবিড়। জাদুঘরে দেখা যায় প্রাকৃতিক, পুরাতাত্ত্বিক, শিল্প ও বিজ্ঞানবিষয়ক অদ্ভুত ও কৌতূহলোদ্দীপক দ্রব্যসম্ভার, যেন তা কুহক দ্বারা আনা হয়েছে। ইংরেজি মিউজিয়াম শব্দটিও সমার্থক। গ্রিক Mouseion থেকে ‘মিউজ’ অর্থাৎ যেখানে প্রবেশের ফলে মানুষের মনে তন্ময় ভাবনা ও মুগ্ধতা সৃষ্টি হয়। জাদুঘর পরিদর্শনকে এক ধরনের ইতিহাস দর্শনও বলা যায়, বর্তমানের উপস্থিতি সেখানে থাকলেও তা ইতিহাসকে সত্যায়িত করার জন্যই। ফিলিপাইনের বহুশাস্ত্রজ্ঞ জাতীয়তাবাদী নেতা হোসে রিজালের (১৮৬১-১৮৯৬) একটি উদ্ধৃতি ফিলিপিনোদের মুখে মুখে ফেরে; যার অর্থ– ‘যে মানুষ জানে না তার প্রাচীন ইতিহাস, জানে না সে কোথা থেকে এসেছে, সে জানে না ভবিষ্যতে তার গন্তব্য কোথায়।’
জাদুঘরে প্রদর্শিত সামগ্রীর মাধ্যমে কোনো দেশের পূর্বতন সমাজব্যবস্থা, অর্থনীতি এবং তৎসংক্রান্ত বিবর্তন সম্পর্কে জানা যায়। এখানকার চাক্ষুষ ও প্রমাণসিদ্ধ বস্তু প্রদর্শনীর মাধ্যমে আমাদের অস্পষ্ট ও ভুল ধারণাগুলো বাতিল হয়ে সত্যরূপ পরিগ্রহ করে, কারণ জাদুঘর জ্ঞাতসারে কখনও মিথ্যা প্রচার করে না। পৃথিবীর কোনো কোনো জাদুঘরে ছাত্রদের জন্য ল্যাব ও ক্লাসরুমেরও আয়োজন থাকে, গ্যালারিগুলো হয়ে ওঠে বিশেষ শিক্ষায়তন। প্রায় ক্ষেত্রেই বিনোদনের মাধ্যমে জ্ঞান বিতরণ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিক্ষিত করে তোলে জাদুঘর। জাদুঘরের ডিসপ্লেগুলোকে বলা যায় এক ধরনের ত্রিমাত্রিক বই, যাতে বিশেষ প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো সন্নিবেশিত থাকে।
পৃথিবীতে সব জাদুঘরেই বস্তু নিদর্শনকে চিহ্নিত করার জন্য লিখিত বা অডিও-ভিডিও বক্তব্য থাকে। জাদুঘরের জন্য এটি এত অপরিহার্য যে তথ্য-উপাত্ত না থাকলে আমরা একে জাদুঘরের অবজেক্ট বলেই মনে করি না। স্বেচ্ছাসেবিতা হোক বা ব্যবসায়, প্রায় প্রতিটি জাদুঘরই তাদের প্রদর্শন সামগ্রী সম্পর্কে প্রচার করে সাধারণত পুস্তক বা লিফলেটের মাধ্যমে।
সাত কোটি বছর আগেকার পৃথিবীতে বাস করা একটি দানবীয় ডাইনোসরের কঙ্কাল বিস্তৃতভাবে অবলোকন করার সুযোগ এক অদ্ভুত ব্যাপার। কখনও কখনও এসব ডাইনোসরের হাড়গোড় স্পর্শ করার সুবিধাও থাকে জাদুঘরে। পৃথিবীর মাটিতে বসে এক টুকরা চন্দ্রশিলা স্পর্শ করা, কাচের একপাশ থেকে দানবীয় সামুদ্রিক প্রাণী দর্শন, কয়েক হাজার বছরের পুরোনো মমি, ভিসুভিয়াসের ভস্মের নিচে চাপা পড়া মানুষের তাৎক্ষণিক অবস্থার প্রতিরূপ দেখা, বিভিন্ন প্রকার লিপি ও তার পাঠোদ্ধার করে অতীত ইতিহাস সম্পর্কে জানা জাদুঘর ছাড়া আর কোথাও সম্ভব নয়।
একটি বড় জাদুঘর বা ক্যাম্পাসে পার্ক, রেস্টুরেন্ট, বাচ্চাদের খেলার জায়গা, গিফটশপ, বুকশপ, চলচ্চিত্র সবই থাকে, যা পরিবারের সবার জন্যই হতে পারে শিক্ষা ও বিনোদনের। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১৭ হাজার ৫০০ জাদুঘর আছে। এগুলো সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য অসংখ্য কর্মী, ব্যবসায়ী ও নানাভাবে সংশ্লিষ্ট মানুষের দরকার হয়, যাদের কর্মসংস্থান হয় জাদুঘরকে কেন্দ্র করে।
বিদেশের মতো আমাদের দেশেও তৈরি হতে পারে আন্তর্জাতিক মাপের বড় রকমের জাদুঘর। জাতীয় জাদুঘর ও বরেন্দ্র জাদুঘরকেও এক বিশাল রূপ দেওয়া যেতে পারে। এর জন্য চাই জাদুঘর সম্পর্কে আগ্রহী মহতী মানুষের সৃজনশীল চিন্তার সমাবেশ, আকর্ষণীয় স্থাপত্য নকশা, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং বিত্তবান ব্যক্তিদের আর্থিক সহযোগিতা।
বাংলাদেশে ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পরিচায়ক কয়েকটি জাদুঘর সন্নিবেশিত হয়েছে, যেমন– ঢাকার বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, রাজশাহীর বরেন্দ্র জাদুঘর, সোনারগাঁয়ের লোকশিল্প জাদুঘর ও চট্টগ্রামের জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর। বিশ্বের খ্যাতনামা জাদুঘরগুলোর মধ্যে স্থান পেয়েছে লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়াম ও মাদাম তুসো মিউজিয়াম, ফ্রান্সের লুভার মিউজিয়াম, ওয়াশিংটনের স্মিথসোনিয়ান মিউজিয়াম, নিউইয়র্কের গুগেনহাইম মিউজিয়াম, কানাডার রয়্যাল অন্টারিও মিউজিয়াম, ইতালির নেপলস মিউজিয়াম, অ্যাথেন্সের অ্যাক্রোপলিস মিউজিয়াম, কায়রোর ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম, জার্মানির গুটেনবার্গ মিউজিয়াম, অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশন্যাল মিউজিয়াম, কলকাতার ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম এবং রাশিয়া ও চীনের বিভিন্ন জাদুঘর।
সংস্কৃতিসমৃদ্ধ বাংলাদেশে ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় ৮০টি জাদুঘরের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা যায়। ক্ষুদ্রাকৃতির চা, কৃষি, ফিশারি, পোস্টাল ও কারেন্সি মিউজিয়ামও রয়েছে দেশে। আরও কিছু জাদুঘরও যুক্ত হতে পারে, যার সঙ্গে আমাদের সাংস্কৃতিক টান রয়েছে। বাংলাদেশে একটি বিপুল আকারের ওপেন এয়ার মিউজিয়াম সম্পর্কে ভাবা যেতে পারে, যা মূলত যানবাহনবিষয়ক, যেখানে জল, স্থল ও অন্তরীক্ষের যানবাহন প্রদর্শিত হবে। এর উদ্দেশ্য হতে পারে পর্যটন গড়ে তোলা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিক্ষিত করে তোলা। এখানে থাকতে পারে তালের ডিঙি থেকে শুরু করে বড় বড় মহাজনী ও মাছধরা নৌকা, পুরোনো লঞ্চ-স্টিমার প্রভৃতি। স্থলভাগে থাকতে পারে ডুলি, সাতবেহারার পালকি, নাগরদোলা ইত্যাদি। শহর বিভাগে রিকশা, ঠেলাগাড়ি, এক্কাগাড়ি, রেলগাড়ি, মিলিটারি যানবাহন, এমনকি থাকতে পারে সেস্না, টোমাহক–জাতীয় ট্রেনিং প্লেন, হেলিকপ্টারও। ওপেন এয়ার পর্যায়ে আরও তৈরি হতে পারে ‘এলিভেটেড সুন্দরবন ওপেন এয়ার মিউজিয়াম’, যেখানে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণীর সঙ্গে মানুষের সখ্য। এ ছাড়া চট্টগ্রাম এলাকায় একটি সি-অ্যাকুয়ারিয়াম,
বিভিন্ন জেলায় কিছু কৃষি মিউজিয়াম, সিলেট অঞ্চলে রক মিউজিয়াম এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপে সি-শেল মিউজিয়াম তৈরি করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৫১:৪৮ ● ১৫১ বার পঠিত