বৃহস্পতিবার ● ১৮ এপ্রিল ২০২৪
রেজিস্টারে ওঠে শুধু সরকারি ফি রোগীর থেকে বাড়তি টাকা আদায়
Home Page » সংবাদ শিরোনাম » রেজিস্টারে ওঠে শুধু সরকারি ফি রোগীর থেকে বাড়তি টাকা আদায়
বঙ্গনিউজঃ বহির্বিভাগে চিকিৎসা ফি তিন টাকা। নেওয়া হচ্ছে ১০ টাকা। ভর্তি ফি পাঁচ টাকা, নেওয়া হচ্ছে ২০ টাকা। তবে রেজিস্টারে তোলা হচ্ছে সরকার নির্ধারিত ফি। এভাবে গত দুই বছরে অতিরিক্ত প্রায় ৩২ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে। এমন ঘটনা ঘটেছে মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তন্ময় কুমার বিশ্বাস যোগদান করার পর থেকেই রোগীদের থেকে বাড়তি টাকা আদায় করে আসছেন। তবে তিনি অতিরিক্ত ফি আদায়ের দায় চাপালেন স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন কমিটির ওপর। এই কমিটির সভাপতি স্থানীয় সংসদ সদস্য।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ সংশোধিত পরিপত্রের তথ্যমতে, সরকারি ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে চিকিৎসা ফি তিন টাকা। ভর্তি ফি পাঁচ টাকা। প্রতিদিন রোগীর কাছে টিকিট বিক্রি বাবদ আদায় করা টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ২০২২ সালের ১৮ জানুয়ারি মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন ডা. তন্ময় কুমার বিশ্বাস। এর পরই চিকিৎসা ফি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত মঙ্গল ও বুধবার সরেজমিন দেখা যায়, বহির্বিভাগে টিকিট কাউন্টারের সামনে রোগীদের দীর্ঘ লাইন। মঙ্গলবার টিকিট কাউন্টারে দায়িত্বে ছিলেন অফিস সহকারী হাবিবুর রহমান ও ওয়ার্ডবয় ইমান হোসেন। বুধবার দায়িত্বে ছিলেন আয়া তাসলিমা খাতুন ও ওয়ার্ডবয় ইমান হোসেন। এ সময় লাইনে থাকা রোগীদের নাম রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত করে ১০ টাকা করে আদায় করে টিকিট দেওয়া হয়। তবে রেজিস্টারে তোলা হচ্ছে তিন টাকা।
এ সময় কথা হয় দত্তোকোন থেকে চিকিৎসা নিতে আসা জয়নুল আবেদীনের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, সরকার নির্ধারিত ফি তিন টাকার পরিবর্তে দীর্ঘদিন ধরে ১০ টাকা করে নিয়ে টিকিট দেওয়া হচ্ছে। এসব দেখার যেন কেউ নেই।
হরিনা গ্রাম থেকে আসা গৃহবধূ মরিয়ম বেগম জানান, চিকিৎসার জন্য সাত টাকা বেশি নিলেও কিছু করার নেই তাদের।
১০ টাকা নিয়ে রেজিস্টারে তিন টাকা লেখার বিষয়ে জানতে চাইলে অফিস সহকারী হাবিবুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নির্দেশে আদায় করা হচ্ছে। বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০০ রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেই হিসাবে প্রতিদিন বহির্বিভাগ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা অতিরিক্ত আদায় করা হয়ে থাকে। গত দুই বছরে অতিরিক্ত আদায় করা হয়েছে ২৫ লাখ ২০ হাজার টাকা।
এ ছাড়া জরুরি বিভাগ থেকে রোগী ভর্তি করে ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। সে ক্ষেত্রে সরকারি পাঁচ টাকার পরিবর্তে নেওয়া হচ্ছে ২০ টাকা। বিষয়টি নিয়ে কথা হয় জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক অনুপ কুমার বসু ও ফাতেমা খাতুনের সঙ্গে। তাদের দাবি, কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০ টাকা নিয়ে রোগী ভর্তি করা হয়। ৫০ শয্যা থাকলেও মাঝে মধ্যে রোগীর চাপ থাকে অনেক বেশি। সব মিলিয়ে নারী, শিশু ও পুরুষ ওয়ার্ডে প্রতিদিন ৬০ জন রোগী ভর্তি করা হয়। এই হিসাবে প্রতিদিন ৯০০ টাকা অতিরিক্ত আদায় করা হয়, যা দুই বছরে হয় ৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা।
গতকাল বুধবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত জরুরি বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন ডা. রাফেজা খাতুন ও ওয়ার্ডবয় আক্তার হোসেন। তারা জানান, বুধবার সব ওয়ার্ডে অন্তত ৭০ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন।
অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিষয়ে কথা হয় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তন্ময় কুমার বিশ্বাসের সঙ্গে। সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন কমিটির অনুমোদন নিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। এই টাকা থেকে চুক্তিভিত্তিক কয়েকজন কর্মীকে ৪ হাজার টাকা করে মাসিক বেতন দেওয়া হয়। বাকি টাকা আনুষঙ্গিক কাজে ব্যয় করা হয়।
এভাবে টাকা আদায়ের সুযোগ আছে কিনা তা জানতে যোগাযোগ করা হয় যশোর সিভিল সার্জন বিপ্লব কান্তি বিশ্বাসের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, স্থানীয়ভাবে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হলেও মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমোদন নেই।
উপজেলা স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নবিষয়ক আগের কমিটির সদস্য তুলসী বসুর ভাষ্য, মাস্টার রোলে কয়েকজন কর্মী নেওয়া হয়েছিল। অতিরিক্ত টাকা আদায় করে সেখান থেকে তাদের বেতন-ভাতা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কোনো দিন অতিরিক্ত টাকার হিসাব উপস্থাপন করেননি।
অতিরিক্ত টাকা আদায়ে স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন কমিটি সত্যিই অনুমোদন দিয়েছি কিনা, তা জানতে যোগাযোগ করা হয় কমিটির সভাপতি বর্তমান সংসদ সদস্য এস এম ইয়াকুব আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এটা আগের কমিটির সভাপতি বলতে পারবেন। আমি শপথ নিয়ে এক দিন হাসপাতালে গিয়েছিলাম। কিন্তু এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। তবে সামনের মিটিংয়ে বিষয়টি আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখানে অনৈতিক কিছু করার সুযোগ নেই।’
বাংলাদেশ সময়: ১৪:৫৫:৪২ ● ১২৯ বার পঠিত