সোমবার ● ২৫ মার্চ ২০২৪

ফের কীভাবে আইএসের ভয়ংকর উত্থান ঘটল

Home Page » বিশ্ব » ফের কীভাবে আইএসের ভয়ংকর উত্থান ঘটল
সোমবার ● ২৫ মার্চ ২০২৪


 ফাইল ছবি

 বঙ্গনিউজঃ   মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তা ইয়ান ম্যাককারি বৃহস্পতিবার সকালে নীল স্যুট, লাল টাই এবং বাদামি জুতা পরে ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটে সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের (আইএস) ‘পরাজয়ের’ পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে একটি প্রশ্নোত্তর অধিবেশনে বসেছিলেন।

মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট তাদের স্থানীয় অংশীদারদের নিয়ে ২০১৯ সালের ২৩ মার্চ সশস্ত্র গোষ্ঠীটিকে সিরিয়ার বাঘুজ থেকে উৎখাত করে। ওই অঞ্চলের রাকায় ছিল আইএসের রাজধানী।

অনুষ্ঠানে ম্যাককারি বলেন, আইএস যেন আর পুনরুজ্জীবিত হতে না পারে তা নিশ্চিত করার জন্য সেই দিনটি ছিল আমাদের অব্যাহত প্রচেষ্টার একটি ‘মাইলফলক’ এবং এখনও তাই রয়ে গেছে।

ঠিক এক দিন পরই আইএসের বন্দুকধারীরা রাশিয়ার মস্কোতে দর্শকে ঠাসা কনসার্ট হলে প্রবেশ করে বুলেটে ছিন্নভিন্ন করে দেয় সংগীতপ্রেমীদের। সেই ‘মাইলফলক’ বিজয়ের প্রাক্কালে অনুষ্ঠানস্থলটি আগুন দিয়ে ভস্মীভূত করে তারা।
দুই দশকের মধ্যে রাশিয়ার সবচেয়ে ভয়াবহ এ হামলায় প্রায় দেড়শ মানুষ নিহত এবং আরও শতাধিক আহত হয়েছে। আইএসের আফগান শাখা আইএসকেপি বা আইএস-কে দ্রুতই হামলার দায় স্বীকার করেছে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তাদের গোয়েন্দা তথ্যানুসারে এ দাবি সঠিক।

কৌশলগত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিরিয়া এবং ইরাকে আইএস বড় ধাক্কা খেলেও বিপর্যয় থেকে নিজেদের পুনরুদ্ধার করেছে এবং আফগানিস্তান তার ক্রমবর্ধমান উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। মস্কোয় হামলার ঘটনা তার সর্বশেষ চিহ্ন।

দক্ষিণ ক্যারোলাইনা ভিত্তিক ক্লেমসন ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক এবং আইএস নিয়ে একটি বইয়ের গ্রন্থকার আমিরা জাদুন বলেন, রাশিয়ায় হামলার জন্য যদি নিশ্চিতভাবে আইএসকে দায়ী করা হয়, তবে এ গোষ্ঠীর বর্ণিত উদ্দেশ্যের সঙ্গে তার কার্যকলাপের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। তাদের ঘোষিত উদ্দেশ্য হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার ভূরাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী দেশগুলোকে টার্গেট করা।

ইরানের কেরমানে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৯০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা এবং প্রায় ৩০০ জনকে আহত করার দুই মাস পর রাশিয়ার কনসার্টে হামলা হলো। ইরানে হামলার দায়ও স্বীকার করেছে আইএস-কে।

তিনি বলেন, আইএস-কে রাশিয়াকে দেখে থাকে চেচনিয়া, সিরিয়া এবং আফগানিস্তানে (১৯৮০-এর দশকে সোভিয়েত দখলদারিত্বের সময়) মুসলমানদের নিপীড়ক হিসেবে। শিয়া-সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরানও দীর্ঘদিন ধরে সশস্ত্র গোষ্ঠীটির লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে রয়েছে। এসব হামলার পেছনে বিস্তৃত কৌশলগত অভিপ্রায় রয়েছে।

আমিরা জাদুন বলেন, ইরান এবং রাশিয়ার মতো দেশগুলোর ওপর এ গোষ্ঠীর হামলায় প্রতীয়মান হচ্ছে, আইএস-কে শুধু আঞ্চলিক হেভিওয়েটদেরই আঘাত করবে না। বরং বৈশ্বিক মঞ্চে তার রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা এবং কর্মক্ষমতাকেও তুলে ধরবে।

তালেবানের কার্যক্রমে অসন্তুষ্ট যোদ্ধারা ২০১৫ সালে এ শাখা গঠন করে। তবে আইএস-কে তালেবানের নিরাপত্তা বাহিনীর চাপের মুখে পড়লেও গোষ্ঠীটি অদম্য প্রমাণিত হয়েছে এবং আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং ইরানজুড়ে সক্রিয় রয়েছে।

সিরিয়া ও ইরাক থেকে কার্যত উৎখাত হলেও তালেবানরা ২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের কয়েক মাস পর আইএস-কে রাস্তার পাশের চেক পয়েন্টে এবং দেশটির জাতিগত সংখ্যালঘু হাজারাদের আবাসস্থলে প্রায় প্রতিদিনই হামলা চালায়। পরের বছর আইএস-কে জঙ্গিরা কাবুলে রাশিয়ান দূতাবাসে হামলা চালায়, আফগানিস্তানে পাকিস্তানের শীর্ষ কূটনীতিককে হত্যা করার চেষ্টা করে এবং কাবুলের একটি বিখ্যাত হোটেলে বন্দুকধারীদের হামলার জন্য পাঠায়, যেখানে অনেক চীনা নাগরিক অবস্থান করছিলেন।

অতি সম্প্রতি এ গোষ্ঠী আরও সাহসী হয়ে উঠেছে এবং আফগানিস্তানের সীমানা ছাড়িয়ে বিস্তৃত হয়েছে। গত জুলাইয়ে উত্তর পাকিস্তানে একটি রাজনৈতিক সমাবেশে তাদের হামলায় অন্তত ৪৩ জন নিহত হয়।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আইএস-কে আফগানিস্তানে চীনা, ভারতীয় এবং ইরানের দূতাবাসে হামলার হুমকি দিয়েছে। এটি রাশিয়াবিরোধী প্রচারও জোরদার করেছে। সিরিয়ায় হস্তক্ষেপের জন্য ক্রেমলিনের এবং রুশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখায় তালেবানের নিন্দা করেছে গোষ্ঠীটি।

মস্কোর কনসার্ট হলে হামলার ঠিক এক দিন আগে, গোষ্ঠীটি আফগানিস্তানের কান্দাহারে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায়। কান্দাহার তালেবান আন্দোলনের জন্মস্থান। এখানে হামলা চালিলে তারা একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠায় যে, জন্মভূমিতেও তালেবান সৈন্যরাও নিরাপদ নয়।

তবে এখন নিম্নস্তরের তালেবান সেনা এবং পুলিশ অফিসারদের ওপর ছোটখাটো হামলা চালানোর পরিবর্তে আইএস-কে আফগানিস্তান এবং তার বাইরে বড় হামলার দিকে মনোযোগ দিয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন।

ইউনাইটেড স্টেটস ইনস্টিটিউট অব পিসের জ্যেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ আসফান্দিয়ার মীর  বলেন, আইএস-কে দীর্ঘদিন ধরে বড় ধরনের হামলার পক্ষে অনুপ্রাণিত হয়েছে। এটি তার জিহাদি ব্র্যান্ডকে আলাদা করতে এবং বিশ্বব্যাপী জিহাদি ভ্যানগার্ডের মর্যাদা পেতে আরও সাহসী আক্রমণ চালিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীদের ছাড়িয়ে যেতে চায়।

বাংলাদেশ সময়: ১১:২৪:১২ ● ১৫২ বার পঠিত