সোমবার ● ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
পদ শূন্য পরিচালকরা মিথ্যা তথ্য দিলে
Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » পদ শূন্য পরিচালকরা মিথ্যা তথ্য দিলেবঙ্গনিউজঃ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পরিষদের পরিচালক হওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর কিছু খাতে ছাড়ও দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে ব্যাংকের পরিচালক হতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আগাম ঘোষণা দিতে হবে যে, তার নিজের বা স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো খেলাপি ঋণ নেই। কোনো মিথ্যা তথ্য নিয়ে ব্যাংকের পরিচালক হলে এবং বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে প্রমাণিত হলে সঙ্গে সঙ্গে ওই পরিচালকের পদ শূন্য ঘোষিত হবে। কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ঋণের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হলে দুই মাসের মধ্যে ওই ঋণ পরিশোধ করতে হবে, তা না হলে পরিচালকের পদ শূন্য হবে। একই সঙ্গে কোনো ব্যাংকের পর্ষদে পরিচালকের সংখ্যা ২০ জনের বেশি হতে পারবে না। কোনো পরিচালক টানা ১২ বছরের বেশি এ পদে থাকতে পারবেন না। ৩০ বছরের কম বয়সিরা কোনো ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবেন না। পরিচালক হতে হলে কমপক্ষে ১০ বছরের ব্যবসায়িক, পেশাগত বা ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। ওই ব্যক্তির বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে কোনো অভিজ্ঞতা গ্রহণযোগ্য হবে না।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে উল্লিখিত বিধানসংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে।
ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য রোডম্যাপ ঘোষণার তিন কার্যদিবস পরই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সার্কুলার জারি করল। ওই রোডম্যাপ ঘোষণার সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছিল, এর আওতায় তারা অনেক বিধিবিধান জারি করবে। এর অংশ হিসাবে আরও নীতিমালা জারি করা হবে। যেগুলোর প্রস্তুতি চলছে।
সূত্র জানায়, ব্যাংক খাতে পরিচালকদের বহুমুখী হস্তক্ষেপের কারণে সুশাসন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। একই সঙ্গে ঋণ বিতরণের জাল-জালিয়াতির সঙ্গে পরিচালকদের একটি অংশও জড়িত। এছাড়া ব্যাংকের পরিচালক হয়ে তারা ব্যাংক থেকে নানাভাবে বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে আমানতকারীদের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ড করছেন। যেগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু পরিচালকরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারছিল না। এতে ব্যাংক খাত ক্রমেই দুর্বল হয়েছে। এ পরিস্থিতির উন্নতি করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে পরামর্শ করে ব্যাংক খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনার জন্য বহুমুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে। এরই অংশ হিসাবে পরিচালকদের ব্যাপারে বিধিনিষেধ আরোপ করা হলো।
ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করার প্রবণতা পরিচালকদের রয়েছে। অনেক পরিচালক ঋণখেলাপিও। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, কোনো পরিচালক ঋণখেলাপি হলে তিনি আর ওই পদে থাকতে পারবেন না। এ বিধানটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিশ্চিত করতে চায়। যে কারণে সার্কুলারে বলা হয়েছে, কোনো পরিচালকের বা তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়া হলে এবং ওই ঋণের ব্যাপারে বিধিবহির্ভূত হয়েছে বলে কোনো তথ্য প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট পরিচালককে ব্যাংক কোম্পানি আইনের আওতায় নোটিশ দিতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই নোটিশ পাওয়ার দুই মাসের মধ্যে তাকে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। না করলে তার পরিচালক পদ স্বাভাবিক নিয়মেই শূন্য হয়ে যাবে। ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে একটি হলফনামা দিতে হবে। এতে ওই ব্যক্তি কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার নিজ নামে বা স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানরে নামে কোনো খেলাপি ঋণ নেই-এ মর্মে আগাম ঘোষণা দিতে হবে। কোনো কারণে পরিচালক হওয়ার পর তার ঘোষিত হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়েছে বলে প্রমাণিত হলে সঙ্গে সঙ্গে তার পরিচালক পদ শূন্য হয়ে যাবে। আগে এসব বিধিবিধান ছিল না।
ব্যাংকের পর্ষদে পরিচালকের সংখ্যা কোনোক্রমেই ২০ জনের বেশি হতে পারবে না। কোনো ব্যাংকে ২০ জন পরিচালক থাকলে ওই ব্যাংকে স্বতন্ত্র পরিচালক থাকতে হবে ৩ জন। তবে ২০ জনের কম হলে স্বতন্ত্র পরিচালক ২ থাকলেও হবে। একই পরিবার থেকে একই সময়ে কোনো ব্যাংকের পর্ষদে ৩ জনের বেশি পরিচালক থাকতে পারবেন না। কোনো পরিচালক টানা ১২ বছরের বেশি পরিচালক পদে থাকতে পারবেন না। টানা ১২ বছর পরিচালক থাকার পর তিন বছর বিরতি দিয়ে তিনি আবার পরিচালক হতে পারবেন।
এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশ ছাড় দিয়েছে। এর আগে ব্যাংকের পর্ষদে ৯ জনের বেশি পরিচালক না থাকা এবং একই পরিবারের একই সময়ে দুইজনের বেশি পরিচালক না থাকার বিধান ছিল। পরে তা তুলে দেওয়া হয়। ওই সার্কুলারের আগে পর্ষদের পরিচালকের ব্যাপারে কোনো সীমা ছিল না। এবার সর্বোচ্চ ২০ জন করা হলো। অনেকেই মনে করেন, পরিচালকের সীমা আরও কম হওয়া উচিত ছিল। একই সময়ে একই পরিবারের পরিচালক হওয়ার সীমাও ২ জনের বেশি রাখা ঠিক হয়নি। একটানা পরিচালকের মেয়াদ আগের মতো ছয় বছর রাখাই যুক্তযুক্ত ছিল। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক চাপে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ছাড় দিতে হয়েছে।
আগে পরিচালক হওয়ার সর্বনিম্ন কোনো বয়সসীমা ছিল না। ফলে ইন্টারমিডিয়েটে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীরও পরিচালক হওয়ার নজির ছিল। এবার তাতে লাগাম টানা হয়েছে। ৩০ বছরের নিচে কোনো ব্যক্তি এখন আর ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবেন না। পরিচালক হতে হলে কমপক্ষে ১০ বছরের ব্যবসায়িক, পেশাগত বা ব্যবস্থাপনাগত অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। ওই ব্যক্তির বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগের কোনো অভিজ্ঞতা গ্রহণযোগ্য হবে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২৪ পৃষ্ঠার এই সার্কুলারে পরিচালকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে বিশদ বিবরণ দিয়েছে। বিভিন্ন খাতে তাদের দায়দায়িত্ব ও অন্য বিষয়গুলো সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছে। এতে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হলে কিংবা কোনো জাল-জালিয়াতি, আর্থিক অপরাধ বা অন্য অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হলে তিনি পরিচালক হতে পারবেন না। পরিচালক হওয়ার আগে এসব বিষয়ে অঙ্গীকারনামা দিতে হবে। একই সঙ্গে পরিচালক সম্পর্কে কোনো দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলায় আদালতের রায়ে বিরূপ পর্যবেক্ষণ বা মন্তব্য থাকতে পারবে না। আর্থিক খাতসংশ্লিষ্ট কোনো নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের বিধিমালা, প্রবিধান, নীতিমালা বা নিয়মাচার লঙ্ঘনের কারণে দণ্ডিত হওয়া যাবে না। এসব কোনো একটি ঘটলে তিনি আর পরিচালক হতে পারবেন না।
এতে আরও বলা হয়, পরিচালক হতে আগ্রহী ব্যক্তিকে আরও নিশ্চিত করতে হবে, তিনি এমন কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, যার নিবন্ধন বা লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে বা প্রতিষ্ঠানটি অবসায়িত হয়েছে। ওই ব্যক্তির নিজের কিংবা স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ঋণ খেলাপি নয়।
ব্যাংকের পরিচালক হতে হলে তিনি ওই ব্যাংকের কোনো সাবসিডিয়ারি কোম্পানির পরিচালক বা উপদেষ্টা বা পরামর্শক বা অন্য কোনোভাবে লাভজনক পদে নিয়োজিত থাকা যাবে না। এছাড়া একই ব্যাংক-কোম্পানির বহিঃহিসাব নিরীক্ষক, আইন উপদেষ্টা, উপদেষ্টা, পরামর্শক বা অন্য কোনো লাভজনক পদে থাকতে পারবেন না।
কোনো সময়ে আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত ব্যক্তি ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবেন না। ব্যক্তিগতভাবে অথবা তার ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বা অংশীদারি প্রতিষ্ঠানের জন্য কর খেলাপি হলেও পরিচালক হতে পারবেন না। কোনো ব্যাংকে চাকরি করে থাকলে চাকরি ছাড়ার পর পাঁচ বছর অতিক্রম না হলে সেই ব্যক্তি ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবেন না।
কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত খেলাপি বা ঋণগ্রহীতা হিসাবে তালিকাভুক্ত হলে সেই তালিকা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর পাঁচ বছর না পেরোলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি পরিচালক হতে পারবেন না।
সার্কুলারে স্বতন্ত্র পরিচালকদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, স্বতন্ত্র পরিচালক হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে এসব শর্ত ছাড়াও স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ সংক্রান্ত আলাদা নীতিমালায় পরিপালিত হবে বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, ব্যাংকের পর্ষদ শেয়ারধারক, শেয়ারধারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও স্বতন্ত্র পরিচালকের সমন্বয়ে গঠিত হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিকল্প পরিচালকও থাকবে। কোনো কোম্পানির পক্ষে একাধিক প্রতিনিধি পরিচালক হতে পারবেন না। কোনো পরিচালক কমপক্ষে টানা তিন মাস বিদেশে থাকলে বিকল্প পরিচালক নিয়োগ দেওয়া যাবে না। কোনো ঋণগ্রহীতা বিকল্প পরিচালক হতে পারবেন না।
ব্যাংকের কোনো পরিচালক আমানতকারীদের স্বার্থপরিপন্থি কর্মকাণ্ড, জালিয়াতি বা মানি লন্ডারিং কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকলে পরিচালক বা চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ করতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই ব্যাংকের পর্ষদ বাতিল করতে পারবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক উপযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করতে পারবে।
পরিচালক পর্ষদ সভায় যোগদানের জন্য দূরবর্তী স্থান থেকে এলে দুইদিনের জন্য হোটেলে অবস্থান ও ভ্রমণব্যয় পাবেন। বিদেশি বা দ্বৈত নাগরিক হলে তিনদিনের সুবিধা পাবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২:২৮:৪৯ ● ২০৪ বার পঠিত