বৃহস্পতিবার ● ৪ জানুয়ারী ২০২৪
মধ্যনগরে এমপি রতন ও তার সমর্থকদের সাম্প্রদায়িক উষ্কানীমূলক বক্তব্যের প্রতিবাদে নারী সমাবেশ
Home Page » সারাদেশ » মধ্যনগরে এমপি রতন ও তার সমর্থকদের সাম্প্রদায়িক উষ্কানীমূলক বক্তব্যের প্রতিবাদে নারী সমাবেশসিলেট ব্যুরো অফিস :
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুনামগঞ্জ -১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এডভোকেট রনজিত চন্দ্র সরকারকে বিধর্মী আখ্যা দিয়ে নৌকায় ভোট দিলে মুসলমানদের ঈমান নষ্ট হবে বলে বক্তব্য দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এমপি রতনের সমর্থকেরা।একই সভায় রতন সমর্থক আরেক নেতা হিন্দু ভোটারদের প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগে উঠেছে।
এমপি রতন ও তার সমর্থকদের সাম্প্রদায়িক উষ্কানী মূলক বক্তব্য ও হুমকির প্রতিবাদ জানিয়ে মধ্যনগরের আলমপুরে নারীদের প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার(৩ জানুয়ারী) দুপুরে উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নে আলমপুর শেখ রাসেল স্মৃতি ক্লাবে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।এতে অংশ গ্রহনকারী নারীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী রতনকে তাদের এলাকায় অবাঞ্চিত ঘোষনা করেন ।পাশাপাশি উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে শেখ হাসিনা মনোনীত প্রার্থী এডভোকেট রনজিত চন্দ্র সরকারকে নির্বাচিত করতে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
নারীদের এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আলমপুর গ্রামের নারী নেত্রী খায়রুন নাহার।সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নিউটন সরকারের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাজেদা আহমেদ, আওয়ামী লীগ নেত্রী প্রভাষক সুমি হাসান, মাজেদা আক্তার প্রমূখ।
প্রসঙ্গতঃ গত ২৫ ডিসেম্বর রাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের ধর্মপাশার গোলকপুরের প্রচার সভায় জামালগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নবী হোসেন উস্কানীমূলক বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘‘আপনার ভোটে যে প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন, তিনি বিধর্মী, তাই ,আপনারা কি ঈমান নিয়ে মুসলমানদের পক্ষে থাকবেন , না ভগবানের পক্ষে যাবেন?’
নবী হোসেন তার বক্তব্যে আরও বলেন,
বিএনপি-জামায়াত ভাইদের আমি অনুরোধ জানাবো, ঈমানী দায়িত্ব পালনের জন্য আপনারা সাত জানুয়ারি অনুগ্রহ করে আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিকে সমুজ্জল রাখার স্বার্থে,ইসলামের স্বার্থে কেতলি মার্কায় আমাদের পরীক্ষিত সৈনিক মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের পক্ষে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন।
একই অনুষ্ঠানে জামালগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী
লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী হিন্দু ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘ কয়ডা ভোট তরার? পারবি না। মুসলমানে গরু খায়, আর তোরা নিরামিষ খাছ। আমরা তোদেরকে মায়া করি, মহব্বত করি। মরবে তো তোরা, ভোট তো তোদের কমবে।’
তিনি আরও বলেন, এই যে লক্ষ্মীপুরবাসী এরা জীবনেও নৌকার কথা হুনছে না। হেরা নৌকাও চিনে না, মুক্তিযোদ্ধাও চিনে না। হেরা কইছে ৯০ শতাংশ ভোট রতন সাহেবরে দিমু।’ এসময় মনোনয়নবঞ্চিত সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে গত সোমবার( ১ লা জানুয়ারী) ইউটিউব সহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়ে পরলে সুনামগঞ্জ -আসনের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও ঘৃনার প্রকাশ ঘটতে থাকে। নিন্দার ঝড় উঠেছে আসনের সর্বত্র।
মধ্যনগরের বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বলেন, আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছি। লাখো শহীদের রক্তেভেজা এই বাংলাদেশে নির্বাচনকে সামনে রেখে এধরনের সাম্প্রদায়িক উষ্কানিদাতাদের ঘৃনা জানাই।
মধ্যনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ইউপি চেয়ারম্যান রাসেল আহমদ বলেন, জামালগঞ্জের ওই দুই নেতা ও তাদের গডফাদার এমপি রতনকে সাম্প্রদায়িক উষ্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার জন্য সুনামগঞ্জ-১ আসনের মাটি ও মানুষের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
মধ্যনগরের দাতিয়াপাড়া ফুলেন্নেছা দারুল উলুম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা সিরাজুল ইসলাম বলেন, জামালগঞ্জের নেতাদের সাম্প্রদায়িক উষ্কানিমূলক বক্তব্যকে ইসলাম ধর্ম কখনো সমর্থন করে না।
বংশীকুন্ডা কলেজের রাষ্ট্র বিজ্ঞানের প্রভাষক সোনিয়া খানম বলেন, বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, সাম্প্রদায়িক উষ্কানিকে কখনোই আমরা সাপোর্ট করিনা।’
এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এনিয়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।
এদিকে এই দুই নেতার বক্তব্যে বিব্রত স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীসহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতারাও।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল হুদা মুকুট বললেন, জামালগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য আওয়ামী লীগের নীতি আদর্শের পরিপন্থি। এটি তাদের নিজস্ব মত। কোন ভাবেই এই বক্তব্য আওয়ামী লীগের নেতা, কর্মী ভোটাররা সমর্থন করেন না। দলীয় আদর্শ ও শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে তাদেরকে কেন বহিস্কার করা হবে না, এই মর্মে দুয়েক দিনের মধ্যেই শোকজ পাঠানো হবে।
এ বিষয়ে তার বক্তব্য চাইলে সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বললেন, এগুলো কথার প্রসঙ্গে এসেছে। সিরিয়াস কোনো বিষয় নয়।
বিষয়টি গণমাধ্যম কর্মীসহ অন্যদের যেভাবে নজরে এসেছে, পুলিশেরও নজরে এসেছে জানিয়ে পুলিশ সুপার এহ্সান শাহ্ বললেন, বক্তব্য দাতাদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া যায় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:৫৭:৩৯ ● ৩০৮ বার পঠিত