সোমবার ● ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩
ফেসবুক ত্রুটিপূর্ণভাবে বিজ্ঞাপন শনাক্ত করছে
Home Page » বিজ্ঞান-প্রযুক্তি » ফেসবুক ত্রুটিপূর্ণভাবে বিজ্ঞাপন শনাক্ত করছে
বঙ্গনিউজঃ ত্রুটিপূর্ণভাবে বিজ্ঞাপন শনাক্ত করছে মেটার প্রতিষ্ঠান ফেসবুক। রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনকে সাধারণ বিজ্ঞাপন হিসেবে চিহ্নিত করছে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি। প্রয়োজনীয় তথ্যের ঘাটতি ও অর্থের উৎস সম্পর্কে অস্বচ্ছতা থাকা সত্ত্বেও অনেক বিজ্ঞাপন সম্প্রচার ও সংরক্ষণ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
বেসরকারি সংস্থা ‘ডিজিটালি রাইট’-এর গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
আজ সোমবার গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হবে। ‘হিটস অ্যান্ড মিসেস: অ্যান এক্সামিনেশন অব মেটাস পলিটিক্যাল অ্যাড পলিসি এনফোর্সমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওই গবেষণাটি এমন সময় প্রকাশ করা হচ্ছে, যখন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কড়া নাড়ছে।
গবেষণায় দেখা যায়, মেটার বিজ্ঞাপন শনাক্তকরণ পদ্ধতিতে ত্রুটির কারণে অরাজনৈতিক বিজ্ঞাপন রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনের শ্রেণিভুক্ত হচ্ছে, যা বাণিজ্যিক সংস্থাগুলোকে প্রভাবিত করছে। পণ্যের প্রচার থেকে শুরু করে কর্মসংস্থানবিষয়ক বিজ্ঞাপনও ভুলভাবে চিহ্নিত হচ্ছে। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন ত্রুটি মেটার বিজ্ঞাপন শ্রেণিবিন্যাস অ্যালগরিদমের কার্যকারিতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ফেসবুক নিজেই যে মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে, চিহ্নিত অনেক বিজ্ঞাপনে সেসবের ঘাটতি দেখা গেছে গবেষণায়। মেটার শনাক্তকরণ পদ্ধতির ত্রুটির কারণে বিজ্ঞাপনগুলোতে অসম্পূর্ণ বা অস্পষ্ট তথ্য সরবরাহের সুযোগ পেয়েছেন বিজ্ঞাপনদাতারা। তথ্যের ঘাটতির কারণে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনের অর্থের উৎস সম্পর্কে অন্ধকারে থাকছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ডিজিটাল বিজ্ঞাপন পণ্য বা সেবার প্রচারণায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে। এটি রাজনীতিকদের অল্প সময়ে বিপুলসংখ্যক মানুষের সঙ্গে যুক্ত হতে সহায়তা করছে। নির্বাচনের আগে ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে যোগাযোগের শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে এমন বিজ্ঞাপন। রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও নেতৃত্ব সম্পর্কে জনসাধারণের উপলব্ধি গঠনে ভূমিকা রাখছে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। তাই এসব বিজ্ঞাপন অস্বচ্ছ ও ভুল তথ্য দিলে জনমত ভুল পথে পরিচালিত হতে পারে।
গবেষণায় স্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তাসহ ৫০টি বিজ্ঞাপন চিহ্নিত করা হয়, যেগুলোর প্রায় অর্ধেক সরাসরি রাজনৈতিক ব্যক্তি ও দলের কাছ থেকে আসে। এদিকে, ফেসবুকে অরাজনৈতিক হিসেবে চিহ্নিত বিজ্ঞাপনগুলোর ৯০ শতাংশে রাজনৈতিক দলের নাম বা রাজনীতিবিদের কথা উল্লেখ ছিল। আর ৭২ শতাংশে ছিল রাজনৈতিক নেতা বা দলীয় প্রতীক। বিজ্ঞাপনগুলো গবেষণার সময় ‘কি ওয়ার্ড’ অনুসন্ধানের মাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, অনেক বিজ্ঞাপন রাজনৈতিক হিসেবে তখনই চিহ্নিত হয়েছে, যখন তা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক পেজে শেয়ার হয়েছে, তার আগে নয়।
মেটার সংরক্ষিত ৩১৪টি বিজ্ঞাপন পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেয়র নির্বাচনের প্রার্থী এবং রাজনীতিবিদসহ ৯ জন ফেসবুকে তাদের বিজ্ঞাপন প্রদর্শনে প্রয়োজনীয় তথ্য দেননি। অথচ মেটার শর্ত অনুসারে, ফেসবুকে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন দিতে হলে বিজ্ঞাপনদাতার ফোন, ই-মেইল ও ওয়েবসাইটের সঠিক ঠিকানা সরবরাহ করতে হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ৩১৪টি রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশ বিজ্ঞাপনদাতা মেটাকে অস্পষ্ট বা অপর্যাপ্ত ঠিকানা দিয়েছেন। ৪৭ শতাংশ শুধু জেলার নাম লিখেছেন। সম্পূর্ণ ও সঠিক ঠিকানা দিয়েছেন মাত্র ১৭ শতাংশ বিজ্ঞাপনদাতা। ৫৮ শতাংশ ওয়েবসাইটের পরিবর্তে ফেসবুক পেজের লিংক সরবরাহ করেছেন।
ডিজিটালি রাইটের প্রতিষ্ঠাতা মিরাজ আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘রাজনৈতিক দল এবং রাজনীতিবিদদের বিজ্ঞাপনে ব্যয় করা স্বাভাবিক বিষয়। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে তাদের বার্তা বিপুলসংখ্যক দর্শকের কাছে পৌঁছাতে এটি বেশ কার্যকর। কিন্তু জনগণকে অবশ্যই জানতে হবে যে, রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনগুলোর খরচ কে দিচ্ছেন। এতে তারা সচেতনভাবে নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। এ জন্যই বিজ্ঞাপনের স্বচ্ছতা জরুরি। মেটার বিজ্ঞাপন শনাক্তকরণ পদ্ধতির ঘাটতি এখানেই।’
গবেষণায় মেটার বিজ্ঞাপন লাইব্রেরিতে রাজনৈতিক হিসেবে সংরক্ষিত ১ হাজার ৪২০টি বিজ্ঞাপনের নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়, যেগুলো অরাজনৈতিক পেজ বা ব্যক্তি প্রচার করেন। এসব বিজ্ঞাপন ছিল মূলত বাণিজ্যিক, সংবাদ ও মিডিয়াসহ বিভিন্ন খাতের। গবেষণায় দেখা গেছে, রাজনীতিবিদদের বাণিজ্যিক পেজের বিজ্ঞাপনকেও রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন হিসেবে চিহ্নিত করেছে মেটা। এমনকি রাজনীতিকদের কোম্পানির পণ্যের বিজ্ঞাপনও ভুল শ্রেণিতে ফেলা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মিনিস্টার টেলিভিশন ও রেফ্রিজারেটরের বিজ্ঞাপনকে ফেসবুক রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন হিসেবে শনাক্ত করেছে ‘মিনিস্টার’ শব্দটি থাকার কারণে। অথচ, এটি বাংলাদেশি একটি কোম্পানির নাম।
প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়েছে, ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন শনাক্তের পদ্ধতি আরও নির্ভুল করতে হবে। এ কাজে নির্বাচন কমিশন (ইসি), নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী, গবেষক, সুশীল সমাজ ও অংশীজনের সহযোগিতা নিতে হবে। স্বচ্ছতা বাড়াতে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনের তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৩০:৩৯ ● ১৮০ বার পঠিত