রবিবার ● ১০ ডিসেম্বর ২০২৩

কানে শোঁ শোঁ শব্দ

Home Page » স্বাস্থ্য ও সেবা » কানে শোঁ শোঁ শব্দ
রবিবার ● ১০ ডিসেম্বর ২০২৩


 কানে শোঁ শোঁ শব্দ

চারদিক নিস্তব্ধ থাকার পরও কানে অস্বাভাবিক শব্দ (শোঁ শোঁ) শোনার সমস্যাকে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় টিনিটাস; যার অর্থ ঘণ্টার শব্দ।
কী কী কারণে হতে পারে?

মানবদেহে কানকে বহিঃকর্ণ, মধ্যকর্ণ ও অন্তঃকর্ণ– এ তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। টিনিটাসের কারণও এই ভাগ অনুযায়ী সহজভাবে ব্যাখ্যা করা যায়।
বহিঃকর্ণজনিত সমস্যা
কানে ময়লা জমা হলে।
মধ্যকর্ণজনিত সমস্যা
মধ্যকর্ণে পানি জমলে, কানের পর্দা ফেটে গেলে, কান পাকা রোগ হলে, অটোস্কেলেরোসিস, অর্থাৎ মধ্যকর্ণের অস্থি নড়াচড়া না করলে।

অন্তঃকর্ণের বিভিন্ন রোগের কারণে কী হয়?
কানের ভেতর ক্ষুদ্র চুলের মতো থাকে, যেগুলো শব্দতরঙ্গের সঙ্গে নড়াচড়া করে। এ কোষগুলো এক ধরনের ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যাল অষ্টম ক্রেনিয়াল নার্ভের মাধ্যমে আমাদের মস্তিষ্কে পাঠায়। এর ফলে আমরা শব্দ শুনতে পাই। যদি এই লোমগুলো ছিঁড়ে যায় বা সঠিকভাবে কাজ না করে, তখন মস্তিষ্কে অনিয়মিত এবং ভুল ইলেকট্রিক্যাল ইমপালস পৌঁছায়, যার ফলে টিনিটাস আক্রান্ত ব্যক্তি কানে অস্বাভাবিক শব্দ, যেমন– ভোঁ ভোঁ, ঝিঁ ঝিঁ, শোঁ শোঁ ঘণ্টার ধ্বনি শুনতে পান। মিনিয়ার্স ডিজিজ, শব্দদূষণজনিত বধিরতা, অন্তঃকর্ণের প্রদাহ, অষ্টম স্নায়ুর টিউমারে আক্রান্ত রোগীরা টিনিটাস নিয়ে আসেন। বেশির ভাগ মানুষই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কানে শোঁ শোঁ শব্দ পেতে থাকেন।

টিনিটাস থেকে জটিলতা
মানসিক চাপ, ক্লান্তি, ঘুমে ব্যাঘাত, স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া, মাথাব্যথা, বিষণ্নতা, বিরক্তি, দুশ্চিন্তা, কর্মক্ষেত্রে সমস্যা।

চিকিৎসা
টিনিটাসের চিকিৎসা নির্ভর করে এর উৎপত্তিজনিত কারণের ওপর। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী রোগের মতো টিনিটাসের সম্পূর্ণ নিরাময় নাও হতে পারে, তখন চিকিৎসকরা এটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং আক্রান্তের মানসিক যন্ত্রণা বা অনিদ্রার সমস্যা হ্রাস করতে বিভিন্ন মেডিসিন ও থেরাপি দিয়ে থাকেন।
ওষুধ
যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওষুধে টিনিটাস সম্পূর্ণরূপে নিরাময় হয় না, তবে টিনিটাসের সঙ্গে সম্পর্কিত উপসর্গের উপশম করতে পারে। রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সহায়তা করে।

কাউন্সেলিং ও থেরাপি
প্রথমে রোগীকে বোঝাতে হবে, এটি কোনো জীবনসংহারী সমস্যা নয়। রোগীকে সুন্দরভাবে রোগের বিস্তারিত জানাতে হবে এবং সব সময় চিন্তামুক্ত থাকতে বলতে হবে। রিলাক্সেশন থেরাপি বা যোগব্যায়ামের মাধ্যমেও শোঁ শোঁ শব্দ কমে যেতে পারে। এ ছাড়া ঘুমানোর কক্ষে টিকটিক শব্দ করে চলা দেয়ালঘড়ি অথবা মোবাইলে টিনিটাস মাস্কিং অ্যাপ ব্যবহার করা যেতে পারে।

লেখক : নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ এবং হেড-নেক সার্জন, রেজিস্ট্রার, নাক-কান-গলা এবং হেড-নেক সার্জারি বিভাগ, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬:০৮:৩৪ ● ২০৯ বার পঠিত