বুধবার ● ১ নভেম্বর ২০২৩
বড্ড অচেনা সাকিব
Home Page » ক্রিকেট » বড্ড অচেনা সাকিব
বঙ্গনিউজঃ নিঃশেষিত ভাব পেয়ে বসেছিল কি? একটা হ্যাংওভার, একটা বৃত্ত থেকে যেন কিছুতেই বের হতে পারছিলেন না। যে সাকিব একসময় নিচে ব্যাটিং অর্ডারে খেলবেন না বলে হাথুরুর সঙ্গে তর্ক পর্যন্ত করেছিলেন, সেই কিনা কাল ছয় নম্বরে নামলেন। যে সাকিব বিপিএলে ইফতেখারের মতো স্পিনারকে বলে-কয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন, সেই সাকিব এদিন এই সাদামাটা পাকিস্তানি স্পিনারের প্রথম ১১টি বল ডট খেললেন! ক্রিজে নেমে আট বল পর প্রথম রান পেলেন। বাউন্ডারি মারার সাহস পেলেন কুড়িটি বল পর গিয়ে!
মাঠের বাইরে নানা সময়ের বিতর্ক, ফেসবুকে ট্রল, সমালোচকদের তির্যক মন্তব্য, মিডিয়ার তীর– সবকিছু যাঁর জীবনে সরল-স্বাভাবিক, কোনোকিছুতেই যাঁর আত্মবিশ্বাস তলানিতে যায়নি, সেই সাকিবই কিনা রানের খোঁজে হন্যে হয়ে পড়েছেন। আত্মবিশ্বাস এতটাই তলানিতে চলে গেছে, কোচের সান্ত্বনার বাণী, বিসিবি সভাপতির আশ্বাসের হাতছানি কোনো কিছুই আর কাজ করছে না। কেননা, তিনি তো এটা জানেনই– পথ হয়তো অনেকে দেখাতে পারবেন, কিন্তু পান্থ তো তাঁকেই হতে হবে।
সেই পান্থই তো হতে পারছেন না অধিনায়ক। আগের দিন সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে এসে যতই চওড়া হাসি দেখানোর চেষ্টা করুক না কেন, আদতে তিনি আতঙ্কিত। শুধু তাঁর ফর্ম নিয়েই নয়, গোটা দলে ব্যাটারদের হাল দেখেও। এই সাকিব শুধু স্বদেশি মিডিয়ার কাছেই অচেনা নন, ইডেনের প্রেস বক্সে থাকা মাজিদ ভাট্টির মতো সিনিয়র সাংবাদিকও অবাক হয়েছেন। ‘সাকিবের কী হয়েছে? এতটা বক ডাউন হতে তাকে কখনো দেখিনি। তাকে সেই ২০০৭ সাল থেকে দেখছি।’
কৌতূহল তাঁরও– ‘তোমাদের দলেও কি আমাদের মতো সমস্যা আছে নাকি?’ বাইরে থেকেই তাঁর মনে হয়েছে আর যাই হোক বাংলাদেশের এই দলটা বিশ্বকাপের দল হয়নি। বাইরের কাউকে ঘরের কথা না বলাই ভালো। সে কারণেই তাঁর পাশ থেকে সরে আসা। কিন্তু অভিজ্ঞ ওই সাংবাদিকেরও চোখ এড়ায়নি সাকিবের আত্মবিশ্বাসহীন ৬৪ বলে ৪৩ রানের ইনিংসটি নিয়ে। সাকিব যখন ক্রিজে আসেন, তখন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ একশর কাছাকাছি স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করে যাচ্ছিলেন। বার্তাটা ছিল এমন– একদিক থেকে আমি আছি। এমন পরিস্থিতিতে সাকিবের সামনে ধীরে-সুস্থে ইনিংস এগিয়ে নেওয়ার সময় অবশ্যই ছিল। কিন্তু উসামা মির এবং ইফতেখার আহমেদের সাদামাটা বল থেকেও সিঙ্গেলস বের করতে পারছিলেন না।
৫৩ বলে ২৬ রান করার পর অবশ্য হাত খুলেছিলেন সেই ইফতেখারের বলেই। পরপর তিনটি বাউন্ডারি মেরেছিলেন। সুইপ, কাটপ্রিয় শট খেলার সাহস পাচ্ছিলেন। তখন তাঁর মনের মধ্যে কী চলছিল, তা হয়তো তিনিই বলতে পারবেন। ধারণা থেকে এটা বলা যায়, দলের স্কোর দুইশ পার করে ঝুঁকি নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। হারিস রউফের একটু লাফিয়ে ওঠা বল পুল করতে গিয়ে টাইমিং মিস করেন। সেরা সময়ের সাকিব থাকলে হয়তো এই বাউন্সটাকেই বাউন্ডারি ছাড়া করতে পারতেন। আসলে সময় ভালো না গেলে সামান্য ভুলেও বড় মাশুল দিতে হয়।
পাকিস্তানি ওই সাংবাদিককে বলা হয়নি, তবে বাংলাদেশের সমর্থকদের তো অজানা নয়, বিশ্বকাপে আসার দিন থেকে নিজেই নিজের ওপর একটা অনাকাঙ্ক্ষিত চাপ নিয়ে এসেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
বাংলাদেশ সময়: ১১:০৮:০০ ● ১৫৮ বার পঠিত