সোমবার ● ৯ অক্টোবর ২০২৩

কক্সবাজার রুটে দুটি, তিন ট্রেন চলবে পদ্মা সেতুতে

Home Page » প্রথমপাতা » কক্সবাজার রুটে দুটি, তিন ট্রেন চলবে পদ্মা সেতুতে
সোমবার ● ৯ অক্টোবর ২০২৩



পরীক্ষামূলক ট্রেন চলেছে পদ্মা সেতু দিয়ে

বঙ্গ-নিউজঃ   আগামীকাল মঙ্গলবার উদ্বোধন হতে যাওয়া পদ্মা রেল সংযোগে তিনটি যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে রেলওয়ে। আগামী ১২ নভেম্বর উদ্বোধন হবে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মাণাধীন রেলপথ। এ রুটে দুটি যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর প্রস্তাব এসেছে। উদ্বোধনের তিন সপ্তাহ পর থেকে পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলবে। কালুরঘাট সেতুর সংস্কারকাজ শেষে যাত্রী নিয়ে ট্রেন যাবে কক্সবাজার।

নির্বাচন কমিশনের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা হতে পারে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। এর পর প্রকল্প উদ্বোধনে বিধিনিষেধ রয়েছে নির্বাচনী আচরণ বিধিমালায়। রেল মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে কক্সবাজার রুট উদ্বোধনের তারিখ ঠিক করা হয়েছে। নভেম্বরে খুলনা-মোংলা রেললাইনও উদ্বোধন করা হবে।
পদ্মা সেতুতে রেলের অবকাঠামো নির্মাণে খরচ হওয়া ৬ হাজার ২৫২ কোটি টাকা ট্যারিফ হিসেবে রেলওয়ের কাছে চেয়েছে সেতু বিভাগ। যমুনার বঙ্গবন্ধু সেতুতে ট্রেন চলাচলে ট্যারিফ বাবদ সেতু বিভাগকে বছরে ১ কোটি টাকা টোল দেয় রেলওয়ে। পদ্মায়ও একইভাবে টোল দিতে চায়। ফলে এই জটিলতায় যেসব ট্রেন পদ্মা সেতু হয়ে চলবে, সেগুলোর ভাড়া নির্ধারণ হয়নি।

মুন্সীগঞ্জের মাওয়া স্টেশন চত্বরে উদ্বোধন আনুষ্ঠানিকতা শেষে আগামীকাল দুপুর ২টায় সেখান থেকে বিশেষ ট্রেনে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা জংশনে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে আওয়ামী লীগের জনসভায় ভাষণ দেবেন। চীন থেকে আমদানি করা নতুন ১০০ বগির ১৪টি দিয়ে সরকারপ্রধানের জন্য এই ট্রেন তৈরি করা হয়েছে। সাধারণ যাত্রী নন, এতে আমন্ত্রিত অতিথিরা প্রধানমন্ত্রীর সহযাত্রী হবেন।

তবে পদ্মা রেল সংযোগে বাণিজ্যিক যাত্রী পরিবহনে নতুন ট্রেন দেওয়া হবে না। পদ্মা সেতুতে ঢাকা-খুলনা রুটের ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ ও ঢাকা-যশোর রুটের ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে রেলওয়ে। ট্রেন দুটি বর্তমানে ঢাকা থেকে টঙ্গী, জয়দেবপুর, বঙ্গবন্ধু সেতু, ঈশ্বরদী, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ হয়ে গন্তব্যে যায়। রেল সংযোগ প্রকল্প চালুর পর কমলাপুর থেকে গেণ্ডারিয়া, কেরানীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান, শ্রীনগর, মাওয়া, পদ্মা সেতু, ফরিদপুরের ভাঙ্গা হয়ে রাজবাড়ী দিয়ে গন্তব্যে যাবে।

রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী জানিয়েছেন, এ দুই ট্রেন ছাড়াও ভাঙ্গা-রাজশাহী রুটের ‘মধুমতি এক্সপ্রেস’ পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা পর্যন্ত চালানোর প্রস্তাব রয়েছে। ‘সুন্দরবন’ এবং ‘বেনাপোল’ বর্তমানে যে সময়ে ঢাকা থেকে যাত্রা করে, পদ্মা সেতু দিয়ে চালাতে একই সময়ে যাত্রা করবে। তবে গন্তব্যে পৌঁছতে এখনকার চেয়ে সময় কম লাগবে।

সরকারের অগ্রাধিকারের আরেক প্রকল্প কক্সবাজার রুটে ঢাকা থেকে দুটি ট্রেন পরিচালনার প্রস্তাব রয়েছে। একটি সকাল সোয়া ৮টায় কমলাপুর থেকে যাত্রা করে দুপুর সোয়া ২টায় কক্সবাজার পৌঁছবে। ট্রেনটি কক্সবাজার থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় যাত্রা করে কমলাপুর পৌঁছবে ভোর ৩টা ৪০ মিনিটে। প্রস্তাব অনুযায়ী, আরেকটি ট্রেন কমলাপুর থেকে রাত সাড়ে ১০টায় যাত্রা করে সকাল সাড়ে ৬টায় পৌঁছবে কক্সবাজারে। সেখান থেকে দুপুর ১২টায় ফিরতি যাত্রা করে কমলাপুরে ফিরবে রাত ৮টায়।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকায় ঢাকা থেকে যশোর ১৬৯ কিলোমিটার ব্রডগেজ সিঙ্গেল লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। রেলের মহাপরিচালক কামরুল আহসান বলেছেন, উদ্বোধনের সপ্তাহ তিনেক পর যাত্রীবাহী ট্রেন বাণিজ্যিকভাবে চলবে।
পদ্মা সেতুর কারণে ঢাকা-খুলনা রুটে দূরত্ব কমলেও টোলের কারণে ভাড়া কমার সম্ভাবনা কম। আগামী বছরের জুনের মধ্যে যশোর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের কাজ সম্পন্নের সম্ভাবনাও ক্ষীণ।

ট্রেনের ভাড়া নির্ধারিত হয় কিলোমিটার হিসাবে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজরের দূরত্ব ১৫৩ কিলোমিটার। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের সঙ্গে এই দূরত্ব যোগ করে নির্ধারণ করা হবে কক্সবাজারের ভাড়া। গত মাসে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ। মেরামত শেষে রেললাইনটি ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান।

আগামী ১২ নভেম্বর উদ্বোধনের দিন ঠিক হলেও কক্সবাজার রুটে এখনও পরীক্ষামূলক ট্রেন চলেনি। ১৫ অক্টোবর পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানোর ঘোষণা ছিল। প্রকল্প পরিচালক বলেছেন, কালুররঘাট সেতু সংস্কারের পর চলবে পরীক্ষামূলক ট্রেন।

দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেলপথ নির্মিত হলেও, চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেললাইন ৯২ বছরের পুরোনো। ৫২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেকশনকে ৭ হাজার ৭৩ কোটি টাকায় ডুয়েল গেজে রূপান্তরে প্রকল্প প্রস্তাব করেছে রেলওয়ে। এই রেলপথে রয়েছে সমবয়সী কালুরঘাট সেতু। নতুন সেতু নির্মাণে প্রায় ১১ হাজার ৬৩২ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে।

জরাজীর্ণ কালুরঘাট সেতুতে একই সঙ্গে ট্রেন এবং গাড়ি চলে। ঢাকা-কক্সবাজার রুটে যেসব ভারী ট্রেন চলবে, তার ভার বহনে সক্ষম নয় সেতুটি। তাই ৪৩ কোটি টাকায় সংস্কার চলছে গত ১ আগস্ট থেকে। রেলের পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিঞা জানিয়েছেন, অক্টোবরের মধ্যে সেতুটি ট্রেন চলাচলের উপযোগী হবে। পথচারী পারাপারে পৃথক ওয়াকওয়ে নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ সম্পন্নে আরও সাড়ে তিন মাস লাগবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০:০২:১৮ ● ১৬৩ বার পঠিত