বৃহস্পতিবার ● ১০ আগস্ট ২০২৩
দীর্ঘ অপেক্ষা ডেঙ্গু পরীক্ষার ফল পেতে
Home Page » জাতীয় » দীর্ঘ অপেক্ষা ডেঙ্গু পরীক্ষার ফল পেতে
বঙ্গ-নিউজঃ রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর ব্যাপক চাপ তৈরি হয়েছে। এতে বেড়েছে কষ্ট ও ভোগান্তি। রোগীর স্বজনরা বলছেন, সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার নমুনা দিয়ে ফলের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আগে ১২ ঘণ্টায় ফল পাওয়া গেলেও এখন লাগছে তিন থেকে চার দিন। নমুনা পরীক্ষার ফলের অপেক্ষায় থাকতে থাকতেই অনেক রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটছে। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল বুধবার (সকাল ৮টা পর্যন্ত এক দিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ২ হাজার ৮৪৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যা ২৩ বছরের মধ্যে এক দিনে সর্বাধিক। এই সময়ে মারা গেছেন ১২ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে।
রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গতকাল দুপুরে ডেঙ্গু পরীক্ষার ফলের জন্য অপেক্ষা করছিলেন আশিকুর রহমান রানা। শরীরে অস্বাভাবিক জ্বর ওঠায় তিন দিন আগে তিনি ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য রক্ত দেন। সকাল ১১টায় রিপোর্ট দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু দুপুর ১টায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানায়– তিনটি রিপোর্টের দুটি এসেছে, একটি পাওয়া যাচ্ছে না। আবার ফিসহ নমুনা দিতে হবে। ক্ষোভ প্রকাশ করে আশিকুর বলেন, ‘টাকা দিয়ে ভোগান্তি কিনতে হচ্ছে! রিপোর্টের অপেক্ষায় থেকে যদি আমার অবস্থার অবনতি হয় তাহলে রিপোর্ট দিয়ে কী করব?’
এই হাসপাতালে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে দুই দিন থেকে ভর্তি খিলগাঁও ভূঁইয়াপাড়ার আব্দুর রাজ্জাক। এরই মধ্যে তাঁর জ্বর সেরে গেছে। তবে এখনও কাশি রয়েছে। স্বজনরা ছাড়পত্র চাইলে চিকিৎসক আবার তাঁর ডেঙ্গু পরীক্ষার পরামর্শ দিয়েছেন। এতে চিন্তায় পড়েছেন আব্দুর রাজ্জাক। কারণ নমুনা দিয়ে পরীক্ষার ফল পেতে তিন থেকে চার দিন লাগছে।
মুগদা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ডেঙ্গু ছাড়াও মৌসুমি জ্বরের কারণে রোগীর নানা পরীক্ষা করাতে হচ্ছে। আগে ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য দিনে দুই থেকে আড়াইশ নমুনা এলেও এখন জমা পড়ছে অন্তত পাঁচশ নমুনা। এই চাপের কারণেই দ্রুত পরীক্ষার ফল দেওয়া যাচ্ছে না।
ডেঙ্গু পরীক্ষার (ল্যাব টেস্ট) জন্য নমুনা দিয়ে ফলের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হচ্ছে ঢাকা মেডিকেল, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটসহ অন্য সরকারি হাসপাতালেও। কেন এত সময় লাগছে– এই প্রশ্নে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, ‘ঢাকার বাইরে থেকে আসা রোগীর অনেক চাপ। তাদের সবার নানা পরীক্ষা করাতে হচ্ছে। প্রতিদিন ৫শ থেকে এক হাজার ডেঙ্গুর নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। সে কারণেই সময় একটু বেশি লাগছে।’ শিশু হাসপাতালের পরিচালক ডা. জাহাঙ্গীর আলমও বলেন একই কথা। তাঁর ভাষ্য, ‘অন্য কোনো কারণ নেই, রোগীর চাপের কারণেই ডেঙ্গু পরীক্ষার রিপোর্ট দিতে সময় লাগছে।’
ঢাকার বাইরের রোগী ২০ শতাংশ
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতি ১০০ জনে ২০ জন ঢাকার বাইরের রোগী। তাদের বেশির ভাগ নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, কুমিল্লা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম থেকে আসা। বাইরে থেকে আসা রোগীর অধিকাংশের অবস্থা জটিল বলে জানান এখানকার চিকিৎসকরা।
ঢাকা মেডিকেলেও বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর চাপ। কর্তৃপক্ষ নোটিশ ঝুলিয়ে বলেছে, ‘হাসপাতালে শয্যা ফাঁকা নেই, ভর্তি হলে থাকতে হবে মেঝেতে।’ তবে এই হাসপাতালের পরিচালক বলছেন, ‘গুরুতর বা উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে এমন রোগী কখনোই ফেরত পাঠানো হয় না। বেড ফাঁকা না থাকলে মেঝেতে রেখে হলেও তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।’ তিনি জানান, ঢাকার বাইরে থেকে যারা আসছেন তাদের অবস্থা বেশি খারাপ, অধিকাংশের আইসিইউ লাগছে।
সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার শঙ্কা
দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস) অধ্যাপক ডা. মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘চলতি মাসেই রেকর্ডসংখ্যক ডেঙ্গু শনাক্তের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। জুনের তুলনায় জুলাইয়ে আক্রান্ত বেশি ছিল, আগস্টেও ওই ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত। তিনি বলেন, ঢাকা সিটিতে ডেঙ্গু সংক্রমণ স্থিতিশীল থাকলেও এখন ঢাকার বাইরে আক্রান্ত বাড়ছে। আগস্টের ৮ দিনেই ২০ হাজার ৩৯৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে, যেখানে গোটা জুলাইয়ে শনাক্ত ছিল ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন। এই হারে সংক্রমণ বাড়লে এবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে।’
ঢাকার তিন হাসপাতালে রোগী বেশি
মো. শাহাদাত হোসেন জানান, ঢাকা শহরে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, ৪২৪ জন। এরপরই ঢাকা মেডিকেলে ৩৭৭ জন এবং মিটফোর্ড হাসপাতালে ২৭৩ জন। এ ছাড়া ডিএনসিসি হাসপাতালে ২৯২ জন ডেঙ্গু রোগী রয়েছেন।
মৃত্যু সাড়ে তিনশ ছাড়াল
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৯ হাজার ৪২৭ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে ঢাকায় ৪ হাজার ৪২১ জন এবং অন্যান্য বিভাগের হাসপাতালে ৫ হাজার ৬ জন। ডেঙ্গুতে গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ জন মারা গেছেন, এ নিয়ে এই বছর মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ৩৫২ জন।
বাংলাদেশ সময়: ১২:০৭:৩৪ ● ২৫৮ বার পঠিত