রবিবার ● ২৩ জুলাই ২০২৩

রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন;৩১৩ তম পর্ব-জালাল উদ্দীন মাহমুদ

Home Page » সাহিত্য » রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন;৩১৩ তম পর্ব-জালাল উদ্দীন মাহমুদ
রবিবার ● ২৩ জুলাই ২০২৩


জালাল উদ্দীন মাহমুদ

হাজেরা আপার জল চিকিৎসা-১১
স্যার , প্লাস্টিক , সিলভার বা অ্যালুমিনিয়ামের সামগ্রী জনপ্রিয় হবার আগে আমাদের বাপ-দাদারা মাটির পাতিল কিনতেন। কেনার আগে সেই পাতিলে আঘাত করে সাউন্ড শুনে বলে দিতে পারতেন পাতিলটা কানা-ফাটা-ত্রুটিপূর্ণ কিনা? এই যে পাতিলের ক্রটি ধরার জন্য সাউন্ড পরীক্ষা করা হলো এটাই সাউন্ড টেস্টিং। ঐতিহাসিক এ পদ্ধতিটি মাথায় রেখে সান্তাহার-তালোড় এলাকার বিখ্যাত কবিরাজ রফিক আহম্মেদ চৌধুরী শরীরের ক্রটি নির্নয়ের জন্য সাউন্ড টেস্ট পদ্ধতি প্রবর্তন করেছেন। উনি আমাকে এ কাজে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। উনি মোমবাতি দ্বারা আপনার দু‘কনুই ও কপালে আঘাত করবেন আর আমি রিডিং লিখে রাখব। এই রিডিং এর গড় নির্ণয় করে উনি আপনাকে পানি খাবার ডোজ নির্ধারণ করে দিয়ে নিজ হাতে পানি পান করাবেন। এর পরিমাণ এক গ্লাসও হতে পারে আবার দশ গ্লাস বা তার বেশিও হতে পারে। এ পর্যন্ত বলতেই রফিক সাহেব আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল-থামেন তো এখন। রোগী যেমন ব্লাড প্রেশার মাপার সময় শার্টের হাতা গোটায় সেভাবে স্যারকে শার্টের দু হাতা গোটাতে বললেন। কনুইয়ে আঘাত করতে হবে। মিন্নাত এবার দেখলাম দাঁড়িয়ে গেছে। চুড়ান্ত মজা সামনে। তার চোখে মুখে চাপা উত্তেজনা। কিন্তু স্যার কিছুতেই তার জামার হাতা গুটিয়ে নিচ্ছেন না। উনি উঠলেন এবং রফিক সাহেবের টেবিল থেকে লাল লাল মোটা মোটা দুটি মোমবাতি হাতে নিলেন। বার বার দেখলেন। কপালে ও শার্টের উপর দিয়ে দুই কনুইতে তা স্পর্শ করালেন। তারপর বললেন, রফিক আমি এ চিকিৎসা নিব না। আল্লাহ চাহে আমি ভালো আছি। তাছাড়া ঐ সাউন্ড টেস্টের নামে মোমবাতির মার খেলে আর ১০ গ্লাস পান খেলে আমি মারাই যাব।
স্যারের মারা যাবার আগাম সংবাদ শুনে মিন্নাত আবার খিলখিল করে হাসা শুরু করল। রফিক সাহেব ধমক দিল। আমিও ধমক দিলাম। হাবিব এগিয়ে এসে অনুরোধ করল। কিন্তু তার হাসি আজ আর থামেই না। মিন্নাতের এহেন বিরতিহীন হাসিতে গুরু গম্ভীর পরিবেশ কিছুটা হালকা হয়ে গেল। স্যার হাসতে হাসতে বললেন, দেখ তোমাদের আমি স্নেহ করি। আমি তোমাদের গুরুজন। আমি রফিকের কাহিনি জানি। সে কর্মচারী ইউনিয়নের বলিষ্ঠ ও সৎ নেতা ছিল। প্রয়োজন মনে করলে সে যেকোন মুহুর্তেই একজন লোককে বোকা বানাতে পারে , সে কথাও জানি। তবে চিকিৎসার নামে এসব উদ্ভট কাহিনি যে জালাল ছাড়া আর কেউ বানাতে পারবে না তাও জানি। আমি যাই। কাল ৫০০ টাকার একটা অগ্রীম চেক দিব। টাকাটা একটু ম্যানেজ করে দিও। আর আমি তোমাদের রোগী পাঠাব। পারলে মোটাসোটা মহিলা রোগী পাঠাব। তোমরা ইচ্ছামতো সাউন্ড টেস্ট কোরো।
মিন্নাত হাসিতে কিছুক্ষণ বিরতি দিয়েছিল- এবার স্যারের মুখে মোটাসোটা মহিলা রোগীর কথা শুনে হাসতে হাসতে বিষম খেয়ে স্যারের জন্য রাখা পানি খেয়ে ফেলল। পানিমুখে হাসার চেষ্টা করায় গলায় পানি আটকে গেল। তার গোঙানি শুরু হলো। অবস্থা বেগতিক দেখে আমরা তাকে ধরাধরি করে সোফায় শুয়ে দিলাম। শোবার সময় পড়ে গিয়ে পায়ে আঘাত পেল। শুয়ে শুয়েই সে গোঙাতে লাগল।তার ঠোঁট নীল নীল মনে হলো।

ব্যাংকের সবাই অনেক আগেই চলে গেছে। শুধু পিয়ন কাম গার্ড হাবিব আর আমরা কয়েকজন আছি। আমরা সবাই মিন্নাতের সেবা-শুশ্রুষায়ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। একসময় মিন্নাত সুস্থ হয়ে উঠল। কিন্তু কাজেম উদ্দিন স্যারকে কোথাও পাওয়া গেল না। গেট তো হাবিব তালা দিয়ে রেখেছে। তবে জোনাল অফিসে ঢোকার জন্য যে ছোট গেট আছে ওটা খোলা। জোনাল অফিস ও আমাদের শাখা একই ফ্লোরে অবস্থিত। মাঝখানে শুধু ঐ ছোট কল্যাপসিবল গেটটা। স্যার বোধহয় ওদিক দিয়ে জোনাল অফিসে ঢুকে তারপর বেরিয়ে গেছেন।
রফিক সাহেবের মুখের দিকে তাকান যাচ্ছিল না । তাকে কোনও কাজে আমি ব্যর্থ হতে দেখিনি। আজ তার প্ল্যান ব্যর্থ হয়েছে। মনে হয় সে কিছুটা ভেঙ্গে পড়েছে। আমি তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম । রফিক সাহেব আমার দিকে তাকিয়ে বলল –ব্যাটা মিন্নাত এ ঝামেলাটা না বাঁধালে আজ আমি দুষ্ট কাজেম আলী স্যারকে ঠিকই অপদস্থ করতাম। যতো নষ্টের মূল এ মিন্নাত। আমাদের এতো আয়োজন মাটি করে দিল। তাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারনে কাজেম উদ্দিন স্যার সরে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। থাক-মিন্নাতকে কিছু বলার দরকার নাই। তবে আমার নামও রফিক। আমি কাজেম উদ্দিন স্যারকে ছাড়ব না। চলেন বাসায় যাই।
আমরা বের হয়ে গেলাম। মিন্নাত খোঁড়াতে খোঁড়াতে আমাদের সাথে বের হলো । এরুপ একটা আনসাকসেসফুল মিশন শেষে কারো আর কোনো কথা বলার ইচ্ছে করছিল না।

ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। পরের দিন জল চিকিৎসা নিতে আমাদের কাছে স্বেচ্ছায় আসলেন হাজেরা আপা। আর হাজেরা আপার সে জল চিকিৎসার ঘটনা বলার জন্যই এত পূর্বকথা বলা। সে সময়কার বগুড়ার অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী হাজেরা আপার এ জল চিকিৎসার কাহিনি জানে। যারা জানেন না তারা ত্রিশ বছরেরও বেশি আগে সংঘটিত হাজেরা আপার জল চিকিৎসার ঘটনাটি এখন পড়তে পারেন।
(চলবে )

বাংলাদেশ সময়: ২০:৪১:৩১ ● ২৫৫ বার পঠিত