বুধবার ● ১৯ জুলাই ২০২৩
রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবনের ৪র্থ খন্ড -৩০৮ তম পর্ব:জালাল উদ্দীন মাহমুদ
Home Page » সাহিত্য » রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবনের ৪র্থ খন্ড -৩০৮ তম পর্ব:জালাল উদ্দীন মাহমুদহাজেরা আপার জল চিকিৎসা-৬
তারপর রফিক সাহেব কাগজটা স্যারের হাতে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে জানাল , তার অনেক কাজ আছে, স্যার যদি চিকিৎসা নিতে চান তবে অফিস শেষে যেন আসেন।
রফিক সাহেব কৌশলগত কারনে চিকিৎসার ব্যাপারে অতিরিক্ত আগ্রহ না দেখিয়ে ভাব গাম্ভীর্য প্রদর্শন পূর্বক তার সিটে উপবেশন করল। পাশে বসা মিন্নাত মিটমিট করে হাসছিল। রফিক সাহেব তাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিল।
কাজেম উদ্দিন স্যার স্লীপটা আমার সামনে দিয়ে বললেন-এই জল চিকিৎসা আর সাউন্ড টেস্ট এ গুলি কি?
-আমি বললাম, স্যার আপনি মাত্র কয়েক গ্লাস পানি খেলেই আপনার অসুখ সেরে যাবে। কত গ্লাস পানি খেতে হবে এটা উনি সাউন্ড টেস্ট এর পর ঠিক করে দিবেন। সাউন্ড টেস্টটা রফিক সাহেব নিজেই করে দিবেন। শুধু গোটা দুয়েক মোটা মোটা লাল লাল মোমবাতি লাগবে। সেটা না হয় আমি নিয়ে এসে রাখব।
-মাত্র কয়েক গ্লাস পানি খেলেই অসুখ সেরে যায় ? আজব ব্যাপার । পানি কোনও দিন ঔষধ হয় ? প্রমান আছে ?
-প্রমান ? প্রমান আর কী দিব স্যার? মনে করি ,হাতে এক গ্লাস পানি নিলাম। গ্লাসের পানিতে এক চামচ চিনি দিলাম। কী বুঝলাম? এটা আর পানি রইল না। হয়ে গেল শরবত। এবার চিনির বদলে এক চিমটি লবণ দিলাম। এবার হয়ে গেল খাবার স্যালাইন। রফিক সাহেব পানি খাওয়ার ডোজ নির্ধারণ করে দিল। কী হয়ে গেল ? হয়ে গেল ঔষধ । এক পানির হাজার গুণ । জ্যামিতির সম্পাদ্যের মতই প্রমাণিত।
আমার এহেন বৈজ্ঞানিক যুক্তি শুনেও স্যারের মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না। আমি যুক্তি প্রদর্শন অব্যাহত রাখলাম। জল এর জন্য সংস্কৃত ভাষায় ৩২৬ টির মতো শব্দ আছে। অতএব জল বা পানি প্রাচীনকাল থেকেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
-তোমাদের চিকিৎসার বিষয়টি কিন্তু বুঝতে পারছি না। কঠিন মনে হচ্ছে।
-না বোঝার কি আছে ? জল কোনও কঠিন পদার্থ নয়। এটাতো ‘জলবত্ তরলং ‘ মানে জলের মতো তরল-সহজ।
আমার ”জলবত্ তরলং” কথাটির উচ্চারন শুনে নালায়েক মিন্নাত ভীষণ বেগে হাসা শুরু করে দিল। এবারও রফিক সাহেব তাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিল।
স্যার বললেন তোমাদের রকম-সকম দেখে আমার কেমন জানি ভয় ভয় লাগছে।
-ভয় করলে হবে না স্যার। চর্যাপদে আছে- :
“তিণ ন চছুপইী হরিণা পিবই ন পাণী ।
হরিণা হরিণির নিলঅ ণ জাণী ।।”
অর্থাৎ ‘ধৃত হরিণ প্রাণভয়ের হতভম্বতায় ঘাসও খায় না, ‘পাণী (পানি)’ পানও করে না।” স্যার ,আপনি ভয় করলে তো আর পানি খেতে পারবেন না। চিকিৎসাও হবে না।
আমি যেভাবে পারলাম উল্টা-পাল্টা যুক্তি দেখালাম । কিন্তু স্যারকে সম্মোহিত করতে পারলাম বলে মনে হলো না।
স্যার চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালেন। আমি অনুরোধের সুরে বললাম-
আপনি অফিস শেষে আসেন। আধা ঘন্টার মধ্যে চিকিৎসা শেষ হয়ে যাবে। আর রফিক সাহেব চিকিৎসার জন্য কোন পয়সা- কড়ি নিবেন না।
স্যার দাঁড়িয়ে দাড়িঁয়েই বললেন-পয়সাকড়ি নিবেন না বুঝলাম। কিন্তু এইযে, “জল শূন্য শুষ্ক দেহে নিদ্রাহীন আঁখি ” ,“জল চিকিৎসা”, “সাউন্ড টেস্টিং”, “মোমবাতি” এসব কি? একটুখানি এখনই বুঝিয়ে বলতে।
আমি বললাম স্যার সবই আমি আপনাকে বুঝিয়ে বলব, আপনি অফিস শেষে আসেন।অফিস সময়ে তো এ সব করা যাবে না। স্যার অফিস শেষে আসতে রাজি হলেন। বললেন, “ব্যাপারটা আমার কাছে খুব ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে- আমি আসব, তবে রফিকও যেন থাকে। রফিক সাহেবের থাকার ব্যাপারটি আমি নিশ্চিত করলাম। বললাম, স্যার ডাক্তার ছাড়া কি চিকিৎসা হয়?
উনি চলে গেলেন। রফিক সাহেব এরপর মিন্নাত ও হাবিব (পিওন)কে ডাকলেন। আমাকে সহ সবাইকে বললেন, খবরদার কেউ হাসতে পারবেন না। হাসলে কিন্তু ভন্ড স্যারকে জব্দ করার সব কৌশল পন্ড হয়ে যাবে। একথা শোনামাত্র মিন্নাত আবারও খিলখিল করে হেসে উঠল। রফিক সাহেব সাথে সাথে বললেন,“মিন্নাত বাদ”। হাবিব ও মিন্নাতকে ঠিক করা হয়েছিল রফিক সাহেবের চিকিৎসা যে সঠিক সে বিষয়ে সাক্ষী দিতে। এখন মিন্নাত বাদ গেলে সাক্ষী দিবে কে? সাক্ষী ছাড়া কি এসব অদ্ভুত চিকিৎসা কাজেম উদ্দিন স্যার বিশ্বাস করবেন। রফিক সাহেব বললেন, পিওন হাবিবই পারবে। হাবিবকে ডেকে সব বুঝিয়ে বলা হলো। হাবিব বললো- এসব কোন ব্যাপার না। আমি মাগনা সাক্ষী দিব। একথা শুনে মিন্নাত আবার খিলখিল করে হেসে উঠলো। রফিক সাহেব তাকে ধমক দিল আর আমার দিকে তাকিয়ে সন্ন্যাসী রাজা ছবিতে গাওয়া মান্নাদের একটা গানের লাইন অনুসরণ করে বলল- এ দেখি আসরটাকে করবে মাটি।
অফিস এক সময় ছুটি হয়ে গেল। সবাই চলে গেল। শুধু আমরা কয়েকজন কাজেমউদ্দিন স্যারের আসার অপেক্ষায় থাকলাম। মোটা মোটা লাল লাল মোমবাতি সংগ্রহ করা হয়েছে।
(চলবে)
বাংলাদেশ সময়: ৯:২৯:২৮ ● ৩৪৭ বার পঠিত