রবিবার ● ৯ জুলাই ২০২৩
রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবনের ৩০৩ তম পর্ব :জালাল উদ্দীন মাহমুদ
Home Page » সাহিত্য » রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবনের ৩০৩ তম পর্ব :জালাল উদ্দীন মাহমুদ- হাজেরা আপার জল চিকিৎসা -১
আবার সপ্তপদী মার্কেট শাখার কথায় ফিরে আসি।
বিছিন্ন কিছু ঘটনা এবং অতিরিক্ত খাটাখাটুনির শারীরিক ও মানসিক কায়ক্লেশ ছাড়া বলতে গেলে সুখে –শান্তিতেই সপ্তপদী মার্কেট শাখায় দ্বিতীয় কর্মকর্তার দ্বায়িত্ব পালন করছিলাম । কিন্তু নিরবিচ্ছিন্ন সুখ বলতে তো মাটির পৃথিবীতে কিছুই নাই। আর অর্থ নিয়ে কারবার করা ব্যাংকে তো সুখ নিরবিচ্ছিন্ন থাকতেই পারে না। সারা দিনমান হাড়ভাঙা খাটাখাটুনি তো আছেই। ওদিকে আবার একটা নতুন একটা আপদ জুটে গেছে। যাকে নিয়ে এ আপদ তার আসল নাম বাদ থাক। মনে করি তার নাম কাজেম উদ্দিন মন্ডল। কাজেম উদ্দিন স্যার তখন জোনাল অফিসের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার।তার ব্যাচের প্রায় সবাই প্রমোশন পেলেও তার প্রমোশন হয়নি। প্রমোশন না হবার কারনও একদিন বুঝতে পেরেছিলাম-সে কথা না হয় পরে হবে।সে কথা আমি না বললেও অসুবিধা নাই -পাঠকেরা নিজে নিজেই অনুমান করতে পারবেন।
তিনি জোনাল অফিসের অডিট বিভাগের দ্বায়িত্বে ছিলেন । অনেকের ব্যাখ্যা তলব করান তিনি, আবার ব্যাখ্যা তলবের জবাবও লিখে দেন তিনি । সর্প হয়ে দংশন করেন তিনি, ওঝা হয়ে ঝাড়েনও তিনি। এ জন্য নাকি কিছু পারিশ্রমিক নেন তিনি । তবে খুব বড় অংকের ঝামেলায় জড়ান না। ছোট ছোট অংকের টাকা নিয়ে কাজ কারবার করেন। তা ছোটই হোক আর বড়ই হোক, আমার মতো চুনোপুটির তাতে কী করার আছে ?
তিনি আগের যে জোনে ছিলেন সেখানেও নাকি এসব কর্মের জন্য অপবাদ মাথায় নিয়ে তার নিজ জেলার বাহিরে পোস্টিং নিয়ে এখানে এসেছেন।
আমি শুধু শুনেই আসছিলাম তার কেচ্ছা-কাহিনি, কিন্তু গা করতাম না। তবে দেখতাম উনি আমার সামনে কারনে-অকারনে বসে খাতির জমানোর চেষ্টা করছেন। রফিক সাহেব একদিন আমাকে সাবধান করে দিয়ে বলল-খবরদার, আমি যেন তাকে কোনরুপ টাকা পয়সা ধার না দেই। কিন্তু রফিক সাহেবের বারণ মানতে পারলাম না।এ স্যারের কলাকৌশলের কাছে হার মানতে হলো। এক সময় টাকা ধার দেয়া শুরু হয়ে গেল। তবে চেক জামানত নিয়ে। বিষয়টি তাহলে খুলেই বলি।
খুলে তো বলতে চাই কিন্তু সে কাহিনি লিখতে যেয়ে আমি বারবার দ্বিধাদ্বন্ধে পড়ে যাচ্ছি।আমার জীবনের অন্যতম সেরা নাটকীয় ঘটনা । সে সব ঘটনা লিখব কী লিখব না।কাজেম উদ্দিন স্যারকে নিয়ে সংঘটিত আজব ঘটনাগুলির কথা না হয় বাদই দিলাম। হাজেরা আপাকে নিয়ে সংঘটিত অবমাননাকর -অপ্রত্যাশিত ঘটনা কী লেখা উচিৎ ? লিখলেও পাঠকরা কীভাবে নিবেন।আমাদের সে সময়কার সিদ্ধান্ত কী ভুল ছিল বলে ভাববেন ? ভুল হলেও যে ঘটনা অতীতে ঘটে গেছে তা তো আর চেন্জ করা যাবে না। লিখেই ফেলি –যা আছে কপালে । সেসব ঘটনা বুঝতে হলে রফিক সাহেবের তখনকার অন্তত তিনটি বৈশিষ্ট্য বুঝতে হবে-
প্রথমত- তিনি সর্বদাই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেন। তা করতেন ইনডাইরেক্ট ও অভিনব পদ্ধতিতে।
দ্বিতীয়ত- আমার প্রতি কেউ অন্যায় করলে তিনি তা কোনক্রমেই সহ্য করতে পারতেন না তবে প্রতিবাদ করতেন ঐ ইনডাইরেক্ট ও অভিনব পদ্ধতিতে।
তৃতীয়ত-অদম্য মেধাবী রফিক সাহেবের উপর আমার অবিচল আস্থা । সর্ব ক্ষেত্রেই তার মেধা কাজ করে আর নিত্য-নতুন কৌশল বের করে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে যেয়ে জন্ম দেয় হাজার হাজার মজার মজার ঘটনার। আমি আর মিন্নাত পাশে থাকলে তার এসব মজার রস ঘন থেকে ঘনতর , গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয়ে পড়ে।
আর একটা বিষয় এখানে উল্লেখ করা দরকার। রফিক সাহেব আমার বয়সে সিনিয়র হওয়া সত্ত্বেও আমি তাকে রফিক ভাই না বলে রফিক সাহেব বলে সম্বোধন করতাম। কেন করতাম তা আজ আর বলতে পারব না। সেও আমাকে জালাল সাহেব বলে সম্বোধন করত।
পরবর্তীপর্ব আগামী কাল।
বাংলাদেশ সময়: ১৯:৫১:০৬ ● ৩৪৯ বার পঠিত