মঙ্গলবার ● ৬ জুন ২০২৩

রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন: –লোন মিললেও ছুটি মিলল না–৩: জালাল উদ্দীন মাহমুদ

Home Page » সাহিত্য » রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন: –লোন মিললেও ছুটি মিলল না–৩: জালাল উদ্দীন মাহমুদ
মঙ্গলবার ● ৬ জুন ২০২৩


 জালাল উদ্দীন মাহমুদ

হেড মিস্ত্রি একদিন দুপুরের সময় অফিসে হাজির।উদ্দেশ্য রফিক সাহেবের নির্দেশ মতো তার সাথে দেখা করা। সালাম বিনিময়ের পর রফিক সাহেব তাকে জিজ্ঞাসা করল- কাল আপনার মিস্ত্রিরা এত ভুল করল কেন?
ভূল কোনঠে?
-কি ভুল? আপনি আগে জালাল সাহেবের সাইট দেখে আসেন, তা হলে আপনি নিজে বুঝতে পারবেন। সাইট দেখে আমার এখানে বিকেলের মধ্যেই আসবেন।
মিস্ত্রি রফিক সাহেবের ওখান থেকে উঠে এসে আমার কানের কাছে জিঞ্জাসা করলো,- এডি কোন ষাঁড়?
-ঐ রফিক সাহেব একজন “বড় স্যার”।স্যার ঠিক আছে কিন্তু “বড়”- এ কথাটি বোধহয় মিস্ত্রির মানতে সমস্যা হচ্ছিল। তার টেবিল- চেয়ার –বেশ– ভূষা চেহারা দেখে সে যে একজন “বড় স্যার” এ কথা প্রমান হচ্ছিল না। তবুও হেড় মিস্ত্রি রাজী হলো সে সাইট দেখে এসে রিপোর্ট দিবে।
বিকেলে মিস্ত্রি আসলে তাকে রফিক সাহেব সরাসরি জিজ্ঞাসা করলো, কি ভুল হয়েছে বুঝতে পারছেন?
-প্যারেলিয়েছি ষাঁড়।
-বলেন।
-ছিমেন্ট-বালু ঠিকমতো মিশ করা হয়্যাছিল্না।
-এই তো আপনি বুঝতে পারছেন। আসলে আপনি একজন বড় মিস্ত্রি । কি কি ভুল হচ্ছে ডেইলি অফিস টাইমের পর আপনি একবার করে আমাকে রিপোর্ট দিবেন। আমি অফিসের নিচে ইফসি জুতার দোকানে আপনার জন্য অপেক্ষা করব।
প্রত্যহ রিপোর্ট আসতে লাগল। কোন দিন বলত ভুলেতে আজ সিমেন্ট থেকে বালি বেশি হয়েছে,খোয়া ঠিক মতো ভিজানো হয়নি , ইট গুলোকে ৬ ঘন্টার কম পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়েছে। একদিনে ৩ ফিটের বেশী গাঁথা হয়েছে । ইটের জোড়াগুলোর মধ্যে বেশি ফাঁক রয়ে গেছে।ইট গাঁথতে ওয়াল একটু বাঁকা বাঁকা হয়ে গেছে , কিউরিং ঠিক মতো হচ্ছে না ইত্যাদি ইত্যাদি।
রফিক সাহেব বলত- এসব সে জানে। তবে মিস্ত্রি যে স্বীকার করেছে এতে সে খুশি আছে। এ মিস্ত্রির ছিল আবার বেশি করে চিনি দিয়ে শরবতের মতো করে দুধ চা খাবার ঝোঁক। সেটা বুঝতে পেরে রফিক সাহেব তাকে নিচের রেস্টুরেন্টে বসিয়ে দু‘কাপ করে দুধ চা খাওয়ানো শুরু করল। আর মিস্ত্রি ও দ্বিগুন উৎসাহে তার গোপন তথ্য ফাঁস করতে লাগল। বড় স্যার মনে করে রফিক সাহেবকে বেশি গুরুত্ব দিতে লাগল। আমার কাজকর্ম সহজ হয়ে গেল। এ মিস্ত্রির বগুড়া শহরে আরো ৪/৫ টি সাইট চলতো।সবগুলো সাইট বাদ দিয়ে রফিক সাহেবের কারিশমায় সে আমার সাইটে একটু বেশি গুরুত্ব দিয়ে বেশি বেশি তদারকি শুরু করল।
আজ যখন সে সব দিনের কথা লিখতে বসেছি তখন রফিক সাহেবের মিস্ত্রির নিকট থেকে সংবেদনশীল তথ্য আদায়ের কৌশলগুলো খুব মনে পড়ছে। স্নায়ূচাপে ফেলে তার তথ্য আদায়ের কৌশল এ যুগের অনেক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গোয়েন্দাদেরও হার মানাবে । অবশ্য প্রয়োজন মতো স্বরভঙ্গি পরিবর্তনের ক্ষমতা সবার থাকে না। যা রফিক সাহেবের ছিল।
সব কিছু ভালই চলছিল কিন্তু বিপত্তি বাঁধলো একদিন।
( চলবে )।

(লেখক অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক। ব্যাংকের রসকষহীন জীবনেও অনেক রসাত্মক ঘটনা তুলে ধরেছেন তাঁর পুর্বের প্রকাশিত বেইগুলোতে।)

বাংলাদেশ সময়: ১৫:৫৫:৩৩ ● ৩১০ বার পঠিত