রবিবার ● ২৮ মে ২০২৩

রবীন্দ্র-জয়ন্তি:শুরু হলো যেভাবে:- শেষ পর্ব: স্বপন চক্রবর্তী

Home Page » সাহিত্য » রবীন্দ্র-জয়ন্তি:শুরু হলো যেভাবে:- শেষ পর্ব: স্বপন চক্রবর্তী
রবিবার ● ২৮ মে ২০২৩


সংগৃহীত ছবি-কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

১৯১০ সাল অর্থাৎ ৫০ বছর পর্যন্ত কবিগুরুর জন্মদিন পালনের কোন ইতিহাস তেমন কোথাও পাওয়া যায় না। বিশদ বিবরণ নেই বা কোথাও পরিলক্ষিত হয়নি। কিন্তু কবিগুরুর ৫০ বছর পূর্ণ হলো। পরের বছর ১৯১১ সালে শান্তি নিকেতনে তাঁর জন্মদিন বেশ ধুমধাম করে পালিত হলো। জন্মদিনের বেশ আগেই শান্তি নিকেতনে চলে এসেছিলেন চারু চন্দ্র বন্দোপাধ্যায়, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবীশ, সীতা দেবী, শান্তা দেবী ,সুকুমার রায় প্রমূখ । টানা তিনদিন জন্মদিনের অনুষ্ঠান পালিত হয়েছিল। ২৩শে বৈশাখ সকাল বেলায় হয়েছিল ছাত্রদের স্পোর্টস। দুপুরে কবিগুরু তাঁর খসড়া পান্ডুলিপি থেকে জীবন স্মৃতির কিছু অংশ পড়ে শোনালেন। ২৪শে বৈশাখ,৭ মে সকাল বেলায় অজিত কুমার চক্রবর্তী তাঁর প্রবন্ধ “রবীন্দ্রনাথ” পড়ে শোনালেন। সন্ধে বেলায় অনুষ্ঠিত হলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক “রাজা”। নাটকে ঠাকুরদার ভূমিকায় অভিনয় করলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

২৫শে বৈশাখ ,৮ মে, ভোর বেলায় আম্রকুঞ্জে জন্মোৎসবের আসর বসে। আল্পনা ধূপধূনো প্রদীপ গন্ধপুষ্প প্রভৃতি দিয়ে তৈরী হয়েছিল সুন্দর একটি বেদী। সবাই স্নান করে এসে হাজির হয়েছিল আম্রকুঞ্জে। ছাত্ররা গান গাইলো। আশ্রমের লোকেরা ঋগ্বেদ অথর্ব্য বেদ প্রভৃতি থেকে মঙ্গলগীতি, আবাহন ইত্যাদির মূল ও বাংলা অনুবাদ পাঠ করলেন। সবাই লাইন ধরে কবিগুরুকে প্রণাম করার কারণে কবিগুরুকে দীর্ঘক্ষণ মাথা নত করে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল। তথনও রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কার পাননি। এর পর থেকে পরবর্তী জন্মদিনগুলো যথারীতি পালিত হয়ে আসছিল।
জন্মদিন বছরে দুবার জন্মদিন পালিত:
কবি গুরু যখন ৭৬ বছরে পদার্পণ করলেন, তখন প্রথম দুবার তাঁর জন্মদিন পালন করা হলো। ১৯৩৬ সালের ৮ মে বাংলা ১৩৪৩ এর ২৫ শে বৈশাখ কবি ৭৬ বছর পূর্ণ করলেন। তখন শান্তি নিকেতনের গরমের ছুটি শুরু হয়ে যেতো ১ বৈশাখ। কিন্তু ২৫ বৈশাখ রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন পালনের জন্য অনেকেই শান্তি নিকেতনে থেকে যেতেন। বিষয়টি ছিল খুব কষ্টকর। পরবর্তীতে কবিগুরুর সম্মতিতে সে বছরই সিদ্ধান্ত হলো যে, কবিগুরুর জন্মদিন পালিত হবে বর্ষবরনের দিন। ১ বৈশাখে সেবারই ধুমধাম করে পালিত হলো জন্মদিন। আবার সে বছরই ২৫ শে বৈশাখের দুই দিন আগে অর্থাৎ ২৩ শে বৈশাখ ঘরোয়াভাবে পালিত হয় কবিগুরুর জন্মদিন। কারন ছিল ২৫শে বৈশাখ কবিগুরু এসেছিলেন বরানগরে ”পেন” নামে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে। ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দ মোতাবেক ১৩৪৮ সাল ছিল কবিগুরুর শেষ জন্মদিন পালন। সে বছরও ১ বৈশাখ ও ২৫ শে বৈশাখ দুবার পালিত হয় কবিগুরুর জন্মদিন। সেদিন ভোর বেলায় বৈতালিক সঙ্গীত গাওয়া হলো। পরে আশ্রমিকেরা মন্দিরে উপাসনা ও প্রার্থনা সঙ্গীত গাইলেন। সে বছর রবীন্দ্রনাথ অসুস্থ অবস্থায় উত্তরায়ণের দক্ষিণ বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি ৮০ বছর পার করে পা দিলেন ৮১তে। শেষ জন্মদিনের উৎসবে রাণী চন্দ একটা শালপাতার ঠোঙ্গায় বেলী, জুঁই, কামিনী ফুল তুলে কবির পায়ের কাছে রেখে প্রণাম করলেন। কবিগুরু ঠোঙ্গাটি হাতে নিয়ে গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে ধীরে ধীরে বললেন : আজ আমার জীবনের আশি বছর পূর্ণ হলো। আজ দেখছি পিছন ফিরে- কত বোঝা যে জমা হয়েছে: বোঝা বেড়েই চলেছে। (-প্রতিমা ঠাকুরের রচনা থেকে)। সন্ধে বেলায় কবিগুরুর বাসস্থান উত্তরায়ণে এক অনাড়ম্বর উৎসব অনুষ্ঠিত হলো। উপস্থিত আশ্রমিকেরা জন্মদিন উপলক্ষে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানায় কবিকে। সব শেষে সন্ধে বেলায় শিক্ষক-ছাত্রছাত্রীরা মিলে কবিগুরুর ”বশীকরণ” প্রহসনটি মঞ্চস্থিত করে। কবিগুরু অসুস্থ শরীরে শেষ পর্যন্ত উপস্থিত থেকে প্রহসনটি উপভোগ করেন। এর তিন মাস পর কবি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
১৫ এপ্রিল ,২ বৈশাখ। আনন্দ বাজার পত্রিকায় কবিগুরুর জন্মদিনের খবর বিশদভাবে প্রকাশিত হলো।
তথ্যসূত্র-
ক) জন্মদিনে রবীন্দ্রনাথ।–কৃষ্ণপ্রিয় দাসগুপ্ত।
খ) তুমি কোন দিন দাড়ি রেখো না-ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত।
গ) আনন্দ বাজার পত্রিকা।
ঘ) পশ্চিমবঙ্গ ( রবীন্দ্র সংখ্যা)।
ঙ) উইকিপিডিয়া।
সমাপ্ত

বাংলাদেশ সময়: ২০:৩৯:৫৬ ● ৫০৫ বার পঠিত