বৃহস্পতিবার ● ২ মার্চ ২০২৩
সীমান্ত ভ্রমণের সাতটি দিন ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা ; পর্ব- ৫৫:স্বপন চক্রবর্তী
Home Page » সাহিত্য » সীমান্ত ভ্রমণের সাতটি দিন ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা ; পর্ব- ৫৫:স্বপন চক্রবর্তীনজরুল -জীবনের শেষ অধ্যায় - অন্তহীন দুঃখ-কষ্টেরই এক আখ্যান-৩
কবির চিকিৎসার জন্য নিরুপায় হয়ে তৃতীয় বারের মতো জনাব ফজলুল হক সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সব শুনে তিনি বললেন, নজরুলকে রাঁচীর মেন্টাল হসপিটালে পাঠিয়ে দাও। কিন্তু হক সাহেবের সেই প্রস্তাবে প্রমীলা দেবী এবং গিরীবালা দেবী সম্মত হলেন না। ইতিমধ্যে স্বনামধন্য কবিরাজ বিমলানন্দ তর্কতীর্থ স্বত প্রণোদিত হয়ে বিনা পারিশ্রমিকে কবির কবিরাজি চিকিৎসার দায়িত্ব গ্রহন করলেন। তিনি একসময় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিকিৎসা করে ছিলেন। তার চিকিৎসায় কবির খুব ধীরে ধীরে কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। পরে কিন্তু পরবর্তী সময়ে তাঁর নতুন নতুন উপসর্গ দেখা দিল।
অবশেষে ১৯৪২ সালের ২৫শে অক্টোবর কবিকে কোলকাতাস্থ তিনজলার লুম্বিনী পার্ক মেন্টাল হাসপাতালে ভর্তি করা হলো । বিশিষ্ট্য চিকিৎসক ডা: গিরীন্দ্র শেখর বসুর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চললো। এই লুম্বিনী হাসপাতালে কবিকে তাঁর কেবিনে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়ে ছিল। তাঁর ডান পায়ে শিকল দিয়ে বাঁধা হয়েছিল। আর সেই শিকল ভাঙ্গার জন্য সারাদিন ধরে চলতো কবির ভয়ংকর উন্মত্ততা। কবি সুস্থ অবস্থায় যেখানে শিকল ভাঙ্গার গান গেয়ে ছিলেন, তখন শিকল পরিহিত ছিলেন না। ভারতবাসীর মুক্তির জন্য তিনি শিকল ভাঙ্গতে চেয়েছিলেন। শিকল পড়েই তিনি সব কিছুকে বিকল করতে প্রতিজ্ঞ ছিলেন। কিন্তু এখন অসুস্থ অবস্থায় যখন সত্যি সত্যি শিকল পরানো হলো তখন তিনি সেই শিকল ভাঙতে চেষ্টা করছেন, কিন্তু পারছেন না। তখন অনর্গল অশ্রাব্য গর্জন করতেন কবি। যত্রতত্র মল-মূত্র ছড়াছড়ি করতেন। খাঁচা-বন্দী বাঘের মতো টকটকে ছিল তাঁর দু’চোখ। তাঁর সেই অসহায় ভয়ংকর আর্তনাদ, চীৎকার সত্যি বলতে ছিল মানুষের পক্ষে সহ্য সীমার বাইরে । (চলবে )
বাংলাদেশ সময়: ২০:৪৫:০৩ ● ৪৬৪ বার পঠিত