বৃহস্পতিবার ● ২৬ জানুয়ারী ২০২৩
সীমান্ত ভ্রমণের সাতটি দিন ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা ; পর্ব- ৪০:স্বপন চক্রবর্তী
Home Page » সাহিত্য » সীমান্ত ভ্রমণের সাতটি দিন ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা ; পর্ব- ৪০:স্বপন চক্রবর্তী
রবীন্দ্রনাথ ও কাজী নজরুল ইসলাম-৫
“জনৈক আনওয়ার হোসেনের অনুযোগে লেখা এক চিঠির উত্তরে নজরুল তাঁর অন্তরের কথা খুলে বলেন, “মুসলমান সমাজ আঘাতের পর আঘাত দিয়েছে নির্মমভাবে। তবু আমি দুঃখ করিনি বা নিরাশ হইনি। তার কারণ বাংলার অশিক্ষিত মুসলমানরা গোঁড়া এবং শিক্ষিত মুসলমানরা ইর্ষাপরায়ণ।… মুসলমান সমাজ কেবলই ভুল করেছে— আমার কবিত্বের সঙ্গে আমার ব্যক্তিত্বকে অর্থাৎ নজরুল ইসলামকে জড়িয়ে। আমি মুসলমান— কিন্তু আমার কবিতা সকল দেশের, সকল কালের এবং সকল জাতির। কবিকে হিন্দু-কবি, মুসলমান-কবি ইত্যাদি বলে বিচার করতে গিয়েই এত ভুলের সৃষ্টি!” সজনীকান্ত দাস সম্পাদিত ‘শনিবারের চিঠি’-তেও নজরুলকে কম ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করা হয় নি। এরা সকলেই কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছেন। রয়ে গেছেন নজরুল। কালোত্তীর্ণ তাঁর সৃষ্টি।
তাই দুঃখ হয় যে, কোন কোন মহল থেকে কল্পিত কাহিনী চিন্তা করে দুই জনকে দুইভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করার ষড়যন্ত্র চলে। আগেও ছিল, এখনো আছে। কাজী নজরুল ইসলামকে কল্পনায় পক্ষভূক্ত করে চিন্তা এবং বিশ্লেষণ করলে প্রকৃত সম্মান দেওয়া যাবে না। তাঁকে চিনতে হলে এবং তাঁকে সম্মান জানাতে হলে অবিকৃত অবস্থায় তাঁর সমগ্র সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে ধারণা নেয়া প্রয়োজন। তাঁর লেখা কবিতাকে সংশোধন করা হয়। ব্যাপারটি এমন যে, নজরুল ইসলামের জ্ঞানের বড় অভাব ছিল। ”সজীব করিব মহাশ্মশানকে “ সংশোধন করে যদি লিখা হয় , “ সজীব করিব গোরস্থান” – তাহলে কি বুঝতে হবে যে, নজরুলের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা ছিল? এমন অনেক লিখা পরিবর্তন করা হয়েছে। একটা কথা মনে রাখা ভালো যে, নজরুল এবং রবীন্দ্রনাথের লিখার কোন শব্দ পরিবর্তন করা হলেও তা হবে লেখাকে দুর্বল করা। এমনই ছিল তাঁদের শব্দ চয়ণ। এটা অনেক বিশ্লেষকের মন্তব্য। সজীব করিব মহাশ্মশান এর গুরুত্ব বেশী, এটি একান্তই যথাযথ। কারণ মহাশ্মশানকে সজীব করা মানে একেবারে অসম্ভব কঠিন একটি কাজ করা- যা কবি এখানে উপমা হিসাবে ব্যবহার করেছেন। কবরে হয়তো লাশের সামান্য অস্তিত্ব আবিষ্কার করা সম্ভব, কিন্তু চিতাভষ্মে তা আবিস্কার করা সম্ভব নয়। চিতাতে হাড়-হাড্ডি পর্যন্ত ভষ্মিভূত হয়ে যায় এবং চিতা ঠান্ডা করতে প্রচুর পরিমাণ পানি ঢেলে ছাই গুলোকে জলাশয়ে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে তুলে এনে সজীব করা মানে খুব অসাধ্য সাধন কাজ বটে।
এই প্রসঙ্গে মহাকবি কায়কোবাদের কথা বলতে চাই। মহাকবি কায়কোবাদের প্রকৃত নাম মুন্সী কায়কোবাদ বা কাজেম আল কোরায়েশী ( ১৮৫৭-১৯৫১ )। কায়কোবাদ মূলত মহাকবি হিসাবে খ্যাতিলাভ করেন ”মহাশ্মশান” নামক একটি মহাকাব্য গ্রন্থ রচনা করে। রচনাটির প্রথম প্রকাশকাল ১৩৩১, এবং ইংরেজী ১৯০৪ সাল। পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের যুদ্ধযজ্ঞ, বিশাল বাহিনী, ভয়াবহ সংঘর্ষ, গগনস্পর্শী দম্ভ এবং মর্মভেদী বেদনাকে নানাভাবে কাব্যিক গুণে চিত্রিত করেছেন তাঁর কাব্যগ্রন্থে। এই সম্পর্কে বহু মন্তব্য রয়েছে- যেমন “ সেদিন কায়কোবাদ এক নির্জিত সমাজের প্রতিনিধি –প্রতিভু কিংবা মুখপাত্র হিসেবে অতি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে ছিলেন। …… তাঁর স্বসমাজের লোক পেয়েছিল প্রাণের প্রেরণা ও পথের দিশা। এই ঐতিহাসিক দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছিলেন বলেই আমরা এই মুহূর্তেও শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি মহাশ্মশানের কবিকে”।
( চলবে )
বাংলাদেশ সময়: ১৯:৫১:৪৭ ● ৪০৬ বার পঠিত