বৃহস্পতিবার ● ১ ডিসেম্বর ২০২২

ইসলামী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ, সরানো নিয়ে প্রশ্ন

Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » ইসলামী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ, সরানো নিয়ে প্রশ্ন
বৃহস্পতিবার ● ১ ডিসেম্বর ২০২২


ফাইল ছবি- বাংলাদেশ ব্যাংক

বঙ্গ-নিউজ:  বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ অনিয়মের আশঙ্কায় ২০১০ সালের ডিসেম্বর ইসলামী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছিল। এরপর থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা ব্যাংকটির সভায় অংশ নিতে শুরু করেন। পর্যবেক্ষক থাকা অবস্থায় ২০১৭ সালে ব্যাংকটির মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা চট্টগ্রামভিত্তিক একটি শিল্প গ্রুপের হাতে চলে যায়। ২০২০ সালের মার্চে পর্যবেক্ষক সরিয়ে নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা বদলের পর এ ব্যাংক থেকে কোন বিবেচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্যবেক্ষক সরিয়ে নিয়েছিল, তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে। কেউ কেউ বলছেন, অনিয়মের সুযোগ করে দিতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কাগুজে কোম্পানির নামে ব্যাংকটি থেকে অর্থ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের সাম্প্রতিক ঋণ অনিয়মের ঘটনা সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক, বেসিক ও ফারমার্স ব্যাংকের অনিয়মের চেয়েও ভয়াবহ মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে ইসলামী ব্যাংক থেকে কেন পর্যবেক্ষক সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল, তার যথাযথ কোনো উত্তর দিতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য না করার নীতি নিয়েছে। সংস্থাটির মুখপাত্র জিএম আবুল কালাম আজাদের কাছে সাংবাদিকরা এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক নিয়ে কোনো মন্তব্য করবে না।

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জানান, পর্যবেক্ষক সরিয়ে নেওয়ার পর ব্যাংকটি থেকে কাগুজে কোম্পানি খুলে অর্থ বের করা শুরু হয়। প্রথমে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে এই অনিয়ম শুরু হয়। ফলে পাঁচ বছরে এই শাখার ঋণ ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বের হয়েছে ২৭ হাজার কোটি টাকা। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা শাখা থেকে একই প্রক্রিয়ায় টাকা বের করা হয়। আর ২০১৭ সাল থেকে খাতুনগঞ্জ শাখার দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের দ্রুত পদোন্নতি দিয়ে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের ঋণসংক্রান্ত বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

পাশাপাশি দ্রুত পদোন্নতি পাওয়া প্রধান কার্যালয়ের কিছু কর্মকর্তাও এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়। এভাবে ২০ থেকে ৩০ কর্মকর্তা মিলে ব্যাংকটিতে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। আর ব্যাংকটির পরিচালকরা বেশির ভাগ একটি গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হওয়ায় তারাও এতে সমর্থন দেয়।

গত বৃহস্পতিবার একটি পত্রিকায় ‘ইসলামী ব্যাংকে ভয়ংকর নভেম্বর’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে নানা উপায়ে ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির তথ্য তুলে ধরা হয়। একটি ইংরেজি পত্রিকায় ইসলামী ব্যাংকের আরও ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকার ঋণ অনিয়মের প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে এসব ঋণ নেওয়া হয়েছে। বুধবার আরেকটি ইংরেজি পত্রিকায় প্রকাশ হয়, ইসলামী ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে এস আলম গ্রুপ।

ব্যাংকটিতে পর্যবেক্ষক রাখার পক্ষে ছিলেন না কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক (তৎকালীন) গভর্নর ফজলে কবির। যদিও এখনো অন্য ছয়টি ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংক নিযুক্ত পর্যবেক্ষক রয়েছে। এর বাইরে নতুন করে কয়েকটি ব্যাংকে সমন্বয়ক নিয়োগ দেওয়া শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১:২১:৫৭ ● ৪৫৫ বার পঠিত