বুধবার ● ৬ জুলাই ২০২২
সীমান্ত ভ্রমণের সাতটি দিন ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা ; পর্ব- ২৮ : স্বপন চক্রবর্তী
Home Page » বিবিধ » সীমান্ত ভ্রমণের সাতটি দিন ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা ; পর্ব- ২৮ : স্বপন চক্রবর্তীবঙ্গ-নিউজ: অভিনয় একটি শিল্প। শিল্পীগণ দক্ষতার সাথে এক একটি চরিত্র রূপায়ণ করে থাকেন। কুশান গান. ঘাটু গান বা অন্য যে কোন নাটক বা গানে ছেলেদেরকে অনেক সময় নারী চরিত্রে অভিনয় করতে হয়। এটা শুধু মেয়েদের অংশ গ্রহণ না থাকার কারণেই নয়, কাহিনীর প্রয়োজনেও হতে পারে। চলচ্চিত্রে, নাটকে কখনো কখনো দেখা যায় নায়ক গোপন অভিসারে নায়িকার সাথে মিলিত হতে নারীর পোশাক পরেন। আবার বিপরীত দৃশ্যও চোখে পড়ে। নায়িকাও যখন ছদ্ম বেশ ধারণ করে তখন পুরুষ সেজে থাকে। এটা শুধুই কাহিনীর প্রয়োজনে। এটাও নিছক একটা অভিনয় মাত্র। কিন্তু ছেলেদেরকে মেয়েদের ভুমিকায় অভিনয় করতে দেখলে অনেকেরই ভ্রু কুচকে যায়, ঘৃণা করতে দেখা যায়। আবার অল্প বয়েসী ছেলেদের বেলায় এর উল্টো মানোভাব ঘটে। এটাই দ্বৈত নীতি। ছেলেরা নৃত্য করে দক্ষতার সাথে। কিন্তু পালা গানে ,যাত্রা গানে বা নাটকে ছেলেদের নৃত্য করাকে অনেকে মেনে নিতে চায় না। উল্লেখ্য যে, বিখ্যাত একজন নৃত্য শিল্পী ছিলেন উদয় শংকর রায় ( ৮ ডিসেম্বর-১৯০০ – ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭৭ ) । নৃত্যশিল্পী হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছিল বিশ্ব জোড়া। অপর দিকে বিজু মহারাজ ,যিনি ছিলেন বিখ্যাত কথ্থক নৃত্য শিল্পী । তাঁর প্রকৃত নাম ব্রিজ মোহন মিত্র ( ৪ঠা ফেব্রুয়ারী১৯৩৮- ১৬ জানুয়ারী-২০২২ ) । তিনি ছিলেন খ্যাতিমান একজন নৃত্য শিল্পী। তাঁকে পন্ডিত বিজু মহারাজ বলা হতো। বিজু মহারাজ ছিলেন লখ্নৌ হতে আগত কালকা বিনন্দাদিন ঘরানার একজন প্রধান শিল্পী। তিনি কথ্থক নৃত্যের জন্য পরিচিত “ মহারাজ” পরিবারের অন্যতম সদস্য।
তাঁর পরিবারের অন্যান্য প্রখ্যাত শিল্পীরা হলেন তাঁর দুই পিতৃব্য শম্ভু মহারাজ এবং লাচ্চু মহারাজ। পিতা ও গুরুদেব ছিলেন অচ্ছন মহারাজ। নৃত্যই তাঁর প্রথম শিল্প শৈলী হলেও ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের উপরও তাঁর চমৎকার দখল ছিল। কন্ঠ শিল্পী হিসাবেও তিনি প্রভূত সুনামের অধিকারী ছিলেন। তাই অভিনয়ের দক্ষতাকে অভিনয় হিসেবেই মেনে নেয়া উচিৎ। তবে অভিনয় অবশ্যই কাহিনীর চরিত্রের সাথে সামঞ্জস্য পূর্ণ হওয়া বাঞ্ছনীয়। অন্যথায় এটি হবে একটি সঙ মাত্র।
কোলকাতার বিখ্যাত স্টার থিয়েটারেও এক সময় নারী চরিত্রে অভিনয় করার কোন শিল্পী পাওয়া যেতো না। এই থিয়েটারের একটি নাটক ছিল ব্রজেন দে বিরচিত। নাটকটির নাম ছিল ”নটী বিনোদিনী”। নাটকে কিছু ঐতিহাসিক চরিত্রের সংযোজন ছিল। নাটকে বিখ্যাত অভিনেতা ,নাট্য নির্দেশক ও নাট্যকার গিরীশ ঘোষ দলে স্বেচ্চায় আগত এক পতিতাকে লুফে নেন এবং দক্ষ করে তুলেন। বিনোদিনী নামের এই মহিলার খ্যাতি এতই ছড়িয়ে পড়ে যে, থিয়েটারের প্রচুর শো করতে হয়, সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। আবার কুলীণ শ্রেণীর হিন্দুরা এর বিরুধিতা করতে থাকেন। এক পর্যায়ে দক্ষিণেশ্বরের পূজারী ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব এসেও বিনোদিনীর নাটক দেখে ছিলেন। কিন্তু তিনি এসেছিলেন শ্রীচৈতন্যদেব নাটক দেখতে। আগেই বলেছি, নাটকটি ছিল ব্রজেন দে রচিত নটী বিনোদিনী। এই বিনোদই অভিনয় করেন শ্রীচৈতন্য দেবের ভুমিকায়। নাটকের শেষে ঠাকুর রামকৃষ্ণ তাকে আশীর্বাদ করতে গিযে দেখেন সে ছেলে নয়, মেয়ে । তখন ঠাকুর রামকৃষ্ণ আবেগ প্রবণ হয়ে যান এবং স্বভাব সুলভ ভাবে বলেন, “কোন নূরীতে নারায়ণ নুকিয়ে আছে তা কি কেউ বলতে পারে গো” । অন্য দৃশ্যে, একবার ঠাকুর রামকৃষ্ণ অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। কিন্তু ভক্তগণ তাঁর কক্ষে কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না। ঠাকুরের ইচ্ছা বিনোদকে দেখবে। তখন বিনোদিনী একজন সাহেবের পোশাক পড়ে সকলকে ফাঁকি দিয়ে ঠাকুর রামকৃষ্ণের কাছে পৌঁছে যায়। এটা অভিনয়ের মধ্যে অভিনয়।
বিনোদ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পত্রপত্রিকা গুলো তাকে স্টার হিসেবে উল্লেখ করে। প্রবল সাড়া পড়ে যায়। এক সময় ”থিয়েটার গ্রুপের” একটি নামাকরণ করা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ইতিমধ্যে বিনোদের অভিনয় গুণের কারণে নাট্য গ্রুপটির বেশ সুনাম হয়ে যায়। নাট্যকার ও বিনোদের গুরু গিরীশ ঘোষ সহ অনেকেই বিনোদের নামে নাম করণের প্রস্তাব করলে বিনোদ নিজেই পতিতা বলে এবং সমাজের উপেক্ষিতা বলে অনুরোধটি ফিরিয়ে দেয়। তাও সবাই অনড় থাকলে গিরীশ ঘোষের স্ত্রী বলেন যে, বিনোদ এখন স্টার। স্টার নাম রাখলে কেহ বিরোধিতা করবে না। আবার সংশ্লিষ্ট সকলে জানবে যে, এটাই বিনোদের নাম। এই ভাবে কোলকাতার স্টার থিয়েটারের নামাকরণ করা হয়। যাহোক, কে কোন চরিত্রে অভিনয় করলো তা কোন আলোচ্য বিষয় নয়। কতটুকু বান্তবায়ন করতে পারলো তাই দেখার বিষয় হওয়া উচিৎ।
( চলবে)
বাংলাদেশ সময়: ২০:২৭:৪৫ ● ৪৫৪ বার পঠিত