রবিবার ● ২৯ মে ২০২২
সীমান্ত ভ্রমণের সাতটি দিন ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা ; পর্ব- ৯ : স্বপন চক্রবর্তী
Home Page » সাহিত্য » সীমান্ত ভ্রমণের সাতটি দিন ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা ; পর্ব- ৯ : স্বপন চক্রবর্তীবঙ্গ-নিউজ: যুবতী এক মেয়ে বাসন্তী, যখন তার বয়স ছিল প্রায় ২৮ বছর, তাকে জাল পড়ানো হয়েছিল। অনাহার অর্ধাহারে তার চেহারাকে এমন করেছে যে, আসল বয়স ঠাহর করা সম্ভব ছিল না। বাসন্তীরা অভাবগ্রস্থ ছিল। তবে যত অভাবী হোক, তবু কোন যুবতী মহিলা বস্ত্রহীন থাকে না। প্রয়োজনে ঘরে বন্দী থাকবে ,তবু জাল পড়ে নগ্নপ্রায় অবস্থায় বাইরে আসবে ,সেটা বিশ্বাস করা যায় না। তার কাকার অসহায় বক্তব্যই এটা প্রমাণ করে। কিভাবে বিশ্বের কাছে দুটি নারীকে বেআব্রু করে তুলে ধরা হলো। মানবতার চরম অবমাননা করা হলো। দারিদ্রকে নগ্ন করে সারা বিশ্বে প্রচার করা হলো। সেটা কতটুকু মানুষের উপকারের জন্য ছিল ? আসলে এটা ছিল একটা অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করা। তারা তা করতে সক্ষমও হয়েছিল। নির্দেশ মতো কলার থোড় সংগ্রহ অবস্থায় যখন বাসন্তী,তখন শফিকুল কবির বাসন্তীর হাতে টাকাটি দিয়েছিল। এভাবে বিপর্যস্ত পরিবারটি এখন কোন সাংবাদিক দেখলেই আতঙ্কিত হয় এই ভেবে যে, আবারও কোন বিপদ তাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আমরাও আতংকিত হই ,আর ভাবী যে,, আবারও কোন দিন সরকারের পরিবর্তন ঘটলে আবারও ইতিহাস নতুন করে লিখা হবে। বাসন্তীদেরকে দিয়ে হয়তো বলাতে চেষ্টা করা হবে ভিন্ন কথা। বাক প্রতিবন্ধী বাসন্তীরা তখন হয়তো আবার চীৎকার করে বলবে, জোর করে নয়, স্বেচ্চায়ই আমি বাসন্তী জাল পড়ে ছিলাম। আর আমরা হবো বৃদ্ধ বয়সে নতুন ইতিহাসের ছাত্র।
দুর্গতি নিরুদ্দেশ হয়েছে। সে বেঁচে গেছে বারংবার লাঞ্ছিত হওয়ার হাত থেকে।
১৯৯৬ সালের ১২ অক্টোবর দৈনিক সংবাদে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। শিরোনাম ছিল –” তেইশ বছর কেটে গেছে বাসন্তীর ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি “। সেই রিপোর্টে বলা হয় – জেলে পাড়ার মানুষজন এখন অনেক সচেতন। সাংবাদিক পরিচয় পেলেই সাবধান হয়ে যায়। ভাবে আবার না জানি কোন ফন্দি ফিকির নিয়ে আসলো। ফটো সাংবাদিক বাসন্তীর ছবি তুলতে গেলে গ্রামবাসি দুই যুবক বাধা দেয়। বিক্ষুব্ধ একজন বলে, “’৭৪ এর মঙ্গা থাকি হামরা দেখপার নাকছি হামার বাসন্তীর ফটোক তুলি কত কি হইল্ । বাসন্তীক জাল পরেয়া ফটোক তুলি আর কত ব্যবসা করমেন তোমরা গুলা? ম্যালা হইছে, এলা ছাড়। আর ফটোক তুলবার দিবার নও। বাসন্তীক জাল পরেয়া ফটোক তুলি কি হইল? মঙ্গাত মানুষ মইল্ । শ্যাখের ব্যাটাক মারি ফেলাইল । তাতে হামার কি হইল ? বাসন্তীর পেটোত এলাও ভোক, পরনোত শাড়ি জোটে না , ব্যালাউজ নাই ,ভাতের জন্যি খালি কান্দে”।
( ৭৪ সালের দুর্ভীক্ষ হতে আমরা দেখতেছি আমাদের বাসন্তীর ছবি তুলে কত কিছু হয়ে গেলো। বাসন্তীকে জাল পরিয়ে ছবি তুলে আপনারা আর কত ব্যবসা করবেন। অনেক হয়েছে , এখন ছাড়েন। আর ছবি তুলতে দিবো না। বাসন্তীকে জাল পরায়ে ছবি তুলে কি হলো ? দুর্ভীক্ষে মানুষ মরলো। শেখের ব্যাটাকে ( বঙ্গবন্ধুকে) মেরে ফেললো। তাতে আমাদের কি হলো ? বাসন্তীর পেটে এখনো ক্ষুধা ,পরনে শাড়ি জুটেনা ব্লাউজ নাই, ভাতের জন্য শুধুই কাঁদে)।
Uttarbangla.com এর ২৫/১২/১৩ তারিখের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়- ‘ রাজো বালা নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী আনছার চেয়ারম্যানকে শুধু চিনে ছিলেন। অন্য দুইজনকে তিনি চিনতে পারেননি। রাজো বালা বাসন্তীকে জাল পরাতে দেখেছেন। বাসন্তীর কাকা বুদুরাম অশ্রুসিক্ত নয়নে বর্ণনা করেন সেই ছবি তোলার নেপথ্য কাহিনী। তিনি এই ঘটনাকে একটি ষড়যন্ত্র হিসাবে আখ্যায়িত করেন এবং প্রতিকার চান। ”চিলমারীর একযুগ” পত্রিকায় বিখ্যাত চারণ সাংবাদিক মোনাজত উদ্দিন লিখেন, বুদুরাম ছবি তুলতে আপত্তি জানিয়ে ছিলেন, তবুও কেহ শোনেননি । এটা একটি হলুদ সাংবাদিকতা”।
যে ব্যক্তি মুক্তি যুদ্ধের ছবি তুলে ছিলেন বলে তাঁকে মুক্তি যোদ্ধা হিসাবে দাবি করেন,সেই আফতাব আহমেদ দেশের সর্বোচ্চ পদক পাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই চলে গেলেন চিহ্নিত স্বাধীনতা বিরোধীদের অনুষ্ঠানে। নিজামীর হাত হতে পুরস্কার গ্রহন করলেন।
চলবে-
বাংলাদেশ সময়: ২১:২১:০৪ ● ৯১০ বার পঠিত