সোমবার ● ৭ মার্চ ২০২২

মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট দুর্নীতিতে ‘সর্বোচ্চ পর্যায়ে’ পৌঁছেছিলেন তিনি

Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট দুর্নীতিতে ‘সর্বোচ্চ পর্যায়ে’ পৌঁছেছিলেন তিনি
সোমবার ● ৭ মার্চ ২০২২


ইফতেখারুল ইসলাম খান

বঙ্গনিউজঃ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইফতেখারুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে সংসদীয় তদন্ত কমিটি। কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাঁর আর্থিক লেনদেন, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং নিয়ম ভঙ্গের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। দুর্নীতিতে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিলেন তিনি।

দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে ইফতেখারুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। ইফতেখারুল ইসলাম খান এখন অবসর জীবন যাপন করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি হিসেবে নিয়োগ পান অতিরিক্ত সচিব ইফতেখারুল ইসলাম খান। ২০২০ সালের ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি এই পদে ছিলেন। ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর ইফতেখারুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে একটি উপকমিটি গঠন করে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। তাঁর বিরুদ্ধে সংসদীয় কমিটিতে পাঁচটি লিখিত অভিযোগ এসেছিল। যার ভিত্তিতে ওই তদন্ত কমিটি করা হয়।

কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি শাজাহান খান। সদস্য ছিলেন কাজী ফিরোজ রশীদ ও মোছলেম উদ্দিন আহমেদ। গত বুধবার সংসদীয় কমিটিতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় উপকমিটি।

কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইফতেখারুল ইসলাম খান সরকারি বিধিবিধানের তোয়াক্কা না করে খামখেয়ালিভাবে নিজের ইচ্ছেমতো কাজ করেছেন। ট্রাস্টের সম্পত্তি ইজারা (লিজ) দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো নিয়মনীতি মানেননি তিনি। তদন্তের সময় ইফতেখারুল ইসলামকে কমিটি বক্তব্য নিতে ডাকলেও তিনি উপস্থিত হননি। আত্মপক্ষ সমর্থন করে কোনো বক্তব্যও পাঠাননি।
যদিও ইফতেখারুল ইসলাম খান দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তা মিথ্যা। অর্থহীন বিষয়ে সুপারিশের কোনো মানে হয় না। আইনানুগভাবে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি বলে তিনি ওই কমিটিকে নিজের কোনো বক্তব্য দেননি।

অবশ্য তদন্ত প্রতিবেদনে ইফতেখারুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে ধরে বলা হয়, চট্টগ্রামের নাসিরাবাদে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের মালিকানাধীন মেটাল প্যাকেজিং লিমিটেডের দুই একর জমির ইজারা প্রদানে সাউথইস্ট মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ ছিল সর্বোচ্চ দরদাতা। কিন্তু তিনি তাঁর অনুগত একজন সর্বনিম্ন দরদাতাকে সর্বোচ্চ দরদাতা দেখিয়ে জমিটি ইজারা দেন। ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার জন্য সাবেক এমডি এটি করেছেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাস্টের নির্বাহী কমিটি ও ট্রাস্টি বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া ঢাকার পূর্ণিমা ফিলিং স্টেশন ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়ায় আর্থিক লেনদেন, ক্ষমতার অপব্যবহার ও নিয়ম ভঙ্গের বিষয়টি তদন্তে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

সরকারি ক্রয় নীতিমালায় ‘গেট টেন্ডার’ বলে কিছু নেই উল্লেখ করে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইফতেখারুল ইসলাম খান মনগড়াভাবে ‘গেট টেন্ডার’ নাম দিয়ে ট্রাস্টের ৭টি জমি এবং তাবানী বেভারেজের ৭ দশমিক ২৫ একর জমি ইজারা দেন।

ছেলের সেবায় ট্রাস্টের কর্মচারী
নিজের ছেলের সেবার জন্য ইফতেখারুল ইসলাম খান ট্রাস্টের কর্মচারীদের নিয়োগ করেছিলেন বলেও উঠে এসেছে সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, ইফতেখারুল ইসলামের ছেলে ময়মনসিংহে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। তাঁর সেবাযাত্নে সার্বক্ষণিক কাজ করার জন্য মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের তিনজন কর্মচারীকে সেখানে নিয়োগ করা হয়। তাঁদের বেতন–ভাতা বাবদ ব্যয় হয়েছে ১৬ লাখ ৪৮ হাজার ৩১৫ টাকা।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাস্টের একজন গাড়িচালককে সার্বক্ষণিক ইফতেখারুল ইসলামের বাসায় নিয়োজিত করা হয় এবং বেতন-ভাতা দেওয়া হয় ট্রাস্ট থেকে। ইফতেখারুল ইসলামের জন্য ২১ হাজার ৯০০ টাকায় একটি মুঠোফোন কেনার পর অতিরিক্ত আরও দুটি মুঠোফোন কেনা হয়। এতে ব্যয় হয় ৫৩ হাজার ৪৯৯ টাকা। সাবেক এই এমডির মেয়াদকালে তাঁর মুঠোফোনের বিল বাবদ অতিরিক্ত খরচ হয়েছে ১১ হাজার ৩০০ টাকা। আর গাড়ির প্রাধিকারভুক্ত জ্বালানির বাইরে অতিরিক্ত জ্বালানি বাবদ ব্যয় হয়েছে ৮৩ হাজার ৮৫ টাকা।

ইফতেখারুল ইসলাম প্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়েও কর্মকর্তাদের পরিবর্তে নিজে জাতীয় শুদ্ধাচার কর্মপরিকল্পনার আওতায় পুরস্কার নিয়েছেন। এতে খরচ হয়েছে ৭৬ হাজার ৪৯০ টাকা।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি শাজাহান খান বলেন, উপকমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এটি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় এটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে দেবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩:০৬:৩৭ ● ৬৪৮ বার পঠিত