মঙ্গলবার ● ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২২
‘জ্বীনের বাদশার’ গ্রেফতার !
Home Page » জাতীয় » ‘জ্বীনের বাদশার’ গ্রেফতার !বঙ্গ-নিউজ: রাত তখন ১২টা ৪০ মিনিট। শীতের রাত। মো. সুমন মিয়া নামের এক আলু ব্যবসায়ী সারাদিনের কাজ শেষে কম্বল মুড়ি দিয়ে বিছানায় শুয়েছে। একটু ঘুম-ঘুম ভাব এসেছে তার।
হঠাৎ এ সময় তার মোবাইল ফোনটি বেজে উঠে। ফোনটি রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে চিকন কন্ঠে কুরআন তিলাওয়াত শুনতে পান। মিনিট দেড়েক কুরআন তিলাওয়াতের পর সেই চিকন কন্ঠে বলতে শোনা যায়, ‘তোর সামনে বহু বিপদ; তুই যদি জীবনের এই বড় বিপদ থেকে মুক্তি পেতে চাস তাহলে এখনি আমার কথা মত কাজ কর।’
ঘুমের ঘোরে হঠাৎ ফোনে এমন কথা শুনে থমকে যায় সুমন। কী বলবে বুঝে উঠতে পারছিল না। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো কে আপনি। জবাবে ওপাশ থেকে ভয়ার্ত স্বরে জবাব আসে, ‘আমি জ্বীনের বাদশা।’
এরপর শুরু হয় কথোপকথন। একপর্যায়ে বিপদ থেকে মুক্তির উপায় পেতে একটি বিকাশ নম্বরে টাকা দাবি করে সেই জ্বীনের বাদশা। ভয়ে এবং সরল মনে সুমন নিজের বিকাশে থাকা ৬ হাজার টাকা রাতেই পাঠিয়ে দেয় সেই জ্বীনের বাদশার মোবাইলে। টাকা পাঠানোর পর থেকেই ওই মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। সুমন তখনই বুঝতে পারে সে প্রতারণার শিকার হয়েছে।
মোবাইলে ও অনলাইন প্লাটফর্মে প্রতারণা করে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া কথিত ‘জ্বীনের বাদশা’ সহ এমন একটি চক্রের তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ ( সিআইডি)।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- জ্বীনের বাদশা পরিচয়দানকারী আ. গফফার (৩০), মো. লুৎফর রহমান (২৬) ও মো. শামীম (২৬)।
সিআইডি জানায়, বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মসহ কেবল নেটওয়ার্ক এর লোকাল চ্যানেলে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করা, বিদেশে যাওয়ার সুব্যবস্থা, দাম্পত্য কলহ দূর করা, বিবাহের বাঁধা দূর করা, চাকরিতে প্রমোশন, কম দামে স্বর্ণ ক্রয়, বদ জ্বীনকে বিতাড়িত করা, খন্নাস জ্বীনকে পাতিল বন্দী করা ইত্যাদি সমস্যা সমাধানের জন্য বিজ্ঞাপন প্রদান করতো তারা।
তাদের এসব চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন মানুষ যোগাযোগ করলে ভিন্ন কন্ঠে কথা বলে নিরীহ সরলমনা মানুষকে ফাঁদে ফেলতো। তাদের কথা অনুযায়ী কাজ না করলে প্রিয়জনের ক্ষতির ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করা হতো। জ্বীনের বাদশা সেজে এই প্রতারক চক্রটি দেশের বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন যাবৎ সক্রিয় ছিল।
যেভাবে গ্রেপ্তার হলেন তারা
এই বিষয়ে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার জনাব মুক্তা ধর জানান, এই প্রতারক চক্রের মূল উৎপাটনের লক্ষ্যে সম্ভাব্য সকল তথ্য সংগ্রহ করে দেশব্যাপী অভিযান পরিচালনা করা হয়। এলআইসির একটি চৌকস টীম গাইবান্ধা জেলায় অভিযান পরিচালনা করে কথিত ‘জ্বীনের বাদশা’ চক্রের এ তিন জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
যেভাবে ৬ মাসে অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ
তাদের অপরাধের ধরন ধরন বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্টরা জানান, গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের মধ্যে মো. লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জ্বীনের বাদশা সেজে প্রতারণা করে বিভিন্ন লোকজনের অসহায়ত্বের সুযোগে তাদেরকে সর্বশান্ত করার বিষয়টি স্বীকার করে।
এ চক্রটি গভীর রাতে জ্বীনের বাদশা ও পীর দরবেশ সেজে বিভিন্ন মানুষকে ফোন করে প্রতারণায় ফেলে। বিকাশ, নগদ কিংবা রকেটের মাধ্যমে শতাধিক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে গত ৬ মাসে আনুমানিক অর্ধকোটি টাকারও বেশি আত্মসাৎ করেছে তারা।
রাজবাড়ী জেলার কালুখালী থানার মামলায় আসামীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০:২৯:০১ ● ৪৪৩ বার পঠিত