বুধবার ● ৮ ডিসেম্বর ২০২১
অর্ধশত দেশ ভ্রমণকারী বাঙালী গবেষকের এক দীর্ঘ ভ্রমণ গল্প
Home Page » এক্সক্লুসিভ » অর্ধশত দেশ ভ্রমণকারী বাঙালী গবেষকের এক দীর্ঘ ভ্রমণ গল্প
বঙ্গনিউজঃ এক দীর্ঘ ভ্রমণগল্প: পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত, অর্ধপৃথিবী ভ্রমন-
ভ্রমণকারী/লেখক: ড. ইঞ্জি. নাসির উদ্দিন
হেড ও সহ. অধ্যাপক, ই ই ই
নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ
২০১১ থেকে ২০২০ পর্যন্ত প্যানডেমিকের আগে ছিল আমার বিদেশযাত্রার বছর। এমনও দিন গেছে, প্রতিমাসে কয়েকবার বিদেশ যেতে হয়েছে, যতনা কাজের কারণে – তার চেয়ে বেশী ছিল ফুটাঙ্গি ও পৃথিবী টা দেখার জন্য।
প্রায় ৫০টি দেশে অহরহ ভ্রমনের মাঝে ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে যাত্রা ছিল আমার সবচেয়ে দীর্ঘপথের ভ্রমন। প্যারাগুয়ের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরীর সুবাদে ২০১৭ তে ব্রাজিল গিয়েছিলাম, সেখান থেকে প্যারাগুয়েতে গবেষণা ফেলোশীপে যোগ দিতে। মালয়েশিয়াতে কনভো শেষ করে বাংলাদেশে আসলাম পরিবারের সাথে দেখা করতে ও দীর্ঘ ভ্রমণের প্রস্তুতি নিতে সপ্তাহখানিকের জন্য ۔ তারপর ঢাকা-থাই ব্যাংকক এ ২ দিন ঘুরে ফিরে বড় ভাই Muradul হক এর বাসায় অথিতিয়েতা নিয়ে ব্যাংকক-UAE এর দুবাই তে ক্লাসমেট ইঞ্জি: শফিক ভাইয়ের বাসায় একদিন রেস্ট নিয়ে দুবাই-অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা তে আমার PhD মেট Barbora র বাসায় একদিন থেকে ভিয়েনা-চেক রিপাবলিকের প্রাগ এ Sadek আহমেদ এর বাসায় ২ দিন দারুন সময় কাটিয়ে প্রাগ-পর্তুগালের লিসবো তে জুবার ভাইয়ের বাসায় একদিন অবকাশ যাপন করে লিসবন- ব্রাজিলের সাওপাওলো তে আমার ছাত্র বের্নার বাসায় এক রাত্রী যাপন করে সাও পাওলো۔প্যারাগুয়ের আসানচিওন এ গিয়ে পৌঁছাই , এই দীর্ঘপথ যেতে ট্রানজিট ও ইউরোপের সেনজেনে আমার অবকাশ যাপন নিয়ে প্রায় ১০ দিন লেগেছিল। দক্ষিণ পশ্চিম গোলার্ধে বাংলাদেশের প্রায় বিপরীতের ব্রাজিল/প্যারাগুয়ের অবস্থান ( প্রকৃতপক্ষে চিলি/পেরু)! পরে অবশ্য পেরু ঘোড়াও হয়েছিল۔ সময়ের ব্যবধান, ইথুপিয়ান/ লাতাম/ট্যাপ পর্তুগাল ও এমিরেটস এয়ারলাইন্সে বিয়ার-ওয়ানের গন্ধ, ঘুমন্ত সব যাত্রীর মাঝে নিঘুম থাকার বেদনা, টানা বসে থাকতে থাকতে কোমড়ের ব্যাথা আজো মনে পীড়া দেয়। গন্তব্যে পৌঁছে কানে ধরে ছিলাম, আর বিদেশ যামু না! কিন্তু কাজ আর বিনা-পয়সায় পাঁচতার হোটেলো থাকার লোভ ও বিশ্বকে হাতের মুঠোয় আনার ব্যাকুলতার আগ্রহ আজও সামলাতে পারিনি!
লিসবন থেকে দীর্ঘ ১২ ঘন্টার আকাশ ভ্রমণ আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ির পর যখন সাওপাওলে এয়ারপোর্টে নামলাম; একদল সুন্দরী ছাত্রী নিয়ে আমাকে সম্বধর্না দিতে এগিয়ে আসলো বের্না। একে একে সবার পরিচয় জানছে, এমব্রেস করছে ও হালকা চুমুও দিচ্ছে। আমার পালা আসতেই আমি টেনশনে প্রায় পড়ে গেলাম। বের্না বুঝে ফেললো, আমি ইউরোপে থেকেও ফ্রি কালচারে অভ্যস্থ নয় । জিজ্ঞাসা করলো –
– বাংলাদেশে কি মুসলিম দেশ?
আমি মুচকি হাসলাম!
এরপর সাও পাওলো থেকে আবার ৪ ঘন্টার এয়ার জার্নিতে আসানচিওন নামলেই আমার কাছে, খাবার সহ সব কিছুই না চাইলেও হালাল ফ্লিলটার হয়ে আসতো। তারপরও আসানচিওন বিশ্ববিদ্যালয়ের দামাল ছেলে-মেয়েরা মানতো না । ওয়াইন ও বিয়ার পান না করলেও প্রতি সপ্তাহে বারবিকিউ পার্টির ৫ লাখ গুড়ানি অতিরিক্ত জরিমানা চাঁদা দিতে হতো।
এখনো মিস করি এতো বড় জার্নিকে۔ বিশ্ব জয়ের স্বপ্নে বিভোর আমি এখনো হাতড়ে বেড়াই বিশাল বোয়িং ও এয়ার বাসের সিট্ বেল্ট, আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের ঢেউ এখনো কানে বাজে۔ দক্ষিণ আমেরিকার সেই আত্মার ভাই দের Azmul হোসাইন, Monsur হোসাইন, Badal হোসাইন ও আরো ভাইদের সাথে অন্তরঙ্গতা۔ আমার প্যারাগুয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেট ও স্টুডেন্টস দের সাথে ফুটবল খেলা এখনো স্মৃতিচারণ হয়- ইউরোপের সেনজেনের দেশগুলোর ভ্রমণ, সুইজারল্যান্ডের লেক, অস্ট্রিয়ার পর্বত, ইতালির ভেনিস, চেকের চার্লস নদীর স্রোত, ব্রাজিলের ঝর্ণা, প্যারাগুয়ের বিচ, জার্মানির বরফ সন্ধ্যা, প্যারিসের আইফেল, ডেনমার্কের স্টেডিয়াম, পর্তুগালের ব্রিজ, সান মারিনোর দুর্গ, লিচটেনস্টান এর দই, স্লোভিয়াকের চার্চের ঘন্টা, পোল্যান্ডের দুড়ুম কাবাব, ভ্যাটিকানের নগ্ন মূর্তি, ইথিওপিয়ার মরুভুমি, দুবাই এর লেবান ও উটের মাংস আর ওমানের কাওয়া ও খেজুর, থাই সি ফুড ও টম ইয়াম, মালয়েশিয়ার নাসিগরেন আওয়াম, ভারতের রাজস্থানের কালচার আগ্রার তাজ ও দিল্লির কেজিতে বিরিয়ানির সাধ , মিয়ানমারের গোল্ডেন বুদ্ধ মন্দির, পেরুর ভাসমান গ্রাম, জাপানের বুলেট ট্রেন আরো কত দেশের কত কি যে স্মৃতির পাতায় আওড়ে বেড়াই আজকাল ۔
বাকি দেশের স্মৃতিচারণ না হয় তোলা রইলো আরেক দিনের জন্য ۔ আশায় রইলাম আবার বিশ্বভ্রমণের ইনশাল্লাহ .
বাংলাদেশ সময়: ১৩:১৭:২০ ● ১৩৩৪ বার পঠিত