সোমবার ● ৬ ডিসেম্বর ২০২১

ফারহানা আকতার এর কলাম : নতুন প্রজন্মের চোখে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ : র্পব- ৬০

Home Page » সাহিত্য » ফারহানা আকতার এর কলাম : নতুন প্রজন্মের চোখে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ : র্পব- ৬০
সোমবার ● ৬ ডিসেম্বর ২০২১


---

স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর পাকিস্তানি কারামুক্ত বঙ্গবন্ধু সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট গৃহীত সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “আমি ভেবেছিলাম, আমাকে পেলে ওরা আমার হতভাগ্য মানুষদের হত্যা করবে না। আমি জানতাম, তারা শেষ পর্যন্ত লডাই করবে। আমি তাদের বলেছিলাম, প্রতি ইঞ্চিতে তোমরা লড়াই করবে। আমি তাদের বলেছিলাম, হয়তো এটাই আমার শেষ নির্দেশ। কিন্তু মুক্তি অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই তাদের করতে হবে” ।
বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে সামরিক জিপে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে । সেই রাতে সেখনে তাঁকে আটক রাখা হয় তৎকালীন আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুল, বর্তমান শহীদ আনোয়ার উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের একটি কক্ষে। পরদিন তাঁকে নেওয়া হয় ফ্ল্যাগ-স্টাফ হাউসে, সেখান থেকে অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে বিমানে পাকিস্তানের করাচি নেওয়া হয়। করাচি বিমানবন্দরে পেছনে দাঁড়ানো দুই পুলিশ কর্মকর্তার সামনের আসনে বসা বঙ্গবন্ধুর ছবিটি পরদিন সব দৈনিক পত্রিকার প্রথম পাতায় ছাপা হয়। এর আগে জেনারেল ইয়াহিয়া খান জাতির উদ্দেশে্য দেওয়া ভাষণে সামরিক অভিযানের সাফাই গেয়ে জানালেন, “তিনি (শেখ মুজিব) এ-দেশের ঐক্য ও সংহতির ওপর আঘাত হেনেছেন , এই অপরাধের শাস্তি তাঁকে পেতেই হবে। ১২ কোটি মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে ক্ষমতালোলুপ দেশপ্রেম-বর্জিত কতক মানুষ, সেটা আমরা হতে দিতে পারি না। আমি সেনাবাহিনীকে আদেশ দিয়েছি তাদের কর্তব্য পালন এবং পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য। আর রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো” ।

পশ্চিম পাকিস্তানে নেওয়ার পর কোথায় বঙ্গবন্ধুকে আটক রাখা হয়েছে, তাঁকে নিয়ে কী করা হছ্ছে, কী করা হবে, এসব বিষয়ে সরকার সেসময়ে সম্পূর্ণ নীরবতা পালন করে ।
পাকিস্তানি আর্মির ‘ব্রিগেডিয়ার এ আর সিদ্দিকি’ তার ‘ইস্ট পাকিস্তান দ্য এন্ড গেম’ গ্রন্থে বলেছেন, “৩০ মার্চ’১৯৭১ এ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আর্মির জিপটি যখন ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট হতে নবাবপুর রোড দিয়ে যাছ্ছিলো, তখন এক তরুণ আমাদের পথ রোধ করে দাঁড়াল। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল উদ্ভ্রান্ত, আমরা থামতেই সে চেঁচাতে শুরু করল। তার চেহারা-সুরত একেবারে ছন্নছাড়া। সে বলল, ‘বাঙালিরা দৃঢ় পণ করেছে তারা শেখ মুজিবকে মুক্ত করবে, এ দেশকে স্বাধীন করবে’। কিছুক্ষণ তার কথা শুনে আমরা আবার জিপে উঠলাম। এই অচেনা আগন্তুকের সঙ্গে বাদানুবাদ করে লাভ নেই, কারফিউ জারি করা এলাকায় সে এক নিঃসঙ্গ পথচারী মাত্র”৷
শহর জুড়ে রাজপথে তখন অসংখ্য লাশ ছড়ানো-ছিটানো ৷ এরপর ‘ব্রিগেডিয়ার এ আর সিদ্দিকি’ আবার লিখেছেন, “ শেখ মুজিবকে নিয়ে চলে যেতে যেতে আমি যেন শুনতে পাচ্ছিলাম সেই তরুনটির সেই কণ্ঠ- সেনাবাহিনীর প্রতি ঘৃণা ও ক্রোধে উন্মত্তভাবে গালি দিচ্ছে “পাঞ্জাবি” অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার। ধীরে ধীরে সেই আওয়াজ ক্ষীণ হতে লাগল, ক্রমে মিলিয়ে গেল শূন্যে। এই মোকাবিলা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আমার ভেতরে এক শীতল শিহরণ জাগাল” ! (চলবে) ৷

তথ্যসূত্র : বুকস্ , ইন্টারনেট ৷

ফারহানা আকতার

লেখকের নতুন বই
লেখক: ফারহানাআকতার, পরিচালক ও সহযোগীঅধ্যাপক, আান্তর্জাতিকরবীন্দ্রগবেষনাইনস্টিটিউট, বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষক, লেখক ও গবেষক৷

বাংলাদেশ সময়: ১৬:০৩:৪৫ ● ১৩৮৮ বার পঠিত