ফেসবুকের মাধ্যমে অভিযোগ করুন পুলিশকে

Home Page » বিজ্ঞান-প্রযুক্তি » ফেসবুকের মাধ্যমে অভিযোগ করুন পুলিশকে
সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৪



কাঞ্চন বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ facebook-police.pngটেলিফোনে হুমকিটা চলছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। বাচ্চা দুটোকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়াসহ নানা রকম ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছিল দীপা রহমানকে (ছদ্মনাম)। উত্তরার বাসায় বাচ্চাদের নিয়ে একাই থাকেন তিনি। কী করবেন, কার কাছে সাহায্য চাইবেন, ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলেন না। পুলিশকে জানানো উচিত, কিন্তু পুলিশি ‘ঝামেলা’য় জড়াতেও ঠিক মন সায় দিচ্ছিল না।দীপা প্রসঙ্গে ফিরছি। তার আগে চলুন, পরিচিত হই পুলিশের একজন তরুণ অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারের সঙ্গে। নাম মাসরুফ হোসেন। কথায় বলে, ‘”বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা, পুলিশে ছুলে ছত্রিশ ঘা”। আরও কত কথা প্রচলিত আমাদের নিয়ে। একজন পুলিশ অফিসার হিসেবে এসব খুব পীড়া দেয়। সেই ব্রিটিশ আমল থেকে, গত ২০০ বছর ধরে পুলিশ আর সাধারণ মানুষের মধ্যে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, আগামী ২০০ বছরও ব্যাপারটা এমনই থাকুক, অন্তত আমি সেটা চাই না।’ এমনটাই তাঁর বক্তব্য। অনেক সীমাবদ্ধতা মেনে নিয়েই মাসরুফ তাঁর ভাষায় এই ‘নীরব ও রক্তপাতহীন বিপ্লবের’ কাজ শুরু করেছেন। শুরুটা হয়েছে ফেসবুক থেকে। গত বছর ৮ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে ‘অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অব পুলিশ পেট্রোল উত্তরা’ নামে একটি পেজ খোলা হয়েছে (https://www.facebook.com/ acpatroluttara)। ইতিমধ্যেই বেশ আলোচিত হয়েছে পেজটির অভিনব কর্মকাণ্ড। সে সম্পর্কে বিস্তারিত কথা বলতেই আমরা মাসরুফের মুখোমুখি হয়েছিলাম।ফেসবুক আর কুইক রেসপন্স টিম

ফেসবুকে পেজ খোলার পরপরই মাসরুফ ঘোষণা দিয়েছিলেন, উত্তরা এলাকার যেকোনো সমস্যা বা পরামর্শ পেজের মাধ্যমে জানানো যাবে। সে অনুযায়ী তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। উত্তরাবাসীর জন্য বিভিন্ন সতর্কতামূলক তথ্য বা পরামর্শ নিয়মিত পেজটিতে শেয়ার করা হয়। প্রতিটি পোস্টে উল্লেখ থাকে মাসরুফের ফোন নম্বর, যেন যেকোনো সমস্যায় সরাসরি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ থাকে। চমৎকার লেখনী ও সাবলীল ভাষার কারণে পেজটির পোস্টগুলোও ঠিক ‘ঘোষণা’র মতো দেখায় না। বরং ফেসবুকের বন্ধুর তালিকায় থাকা একজন কাছের বন্ধুর মতোই মাসরুফ বলতে চেষ্টা করেন, ‘আমরা আপনার পাশে আছি।’
পেজটির একটা পোস্টের অংশবিশেষ এ রকম, ‘এই পেজটি ব্যবহার করুন, ছড়িয়ে দিন সবার মাঝে। আজকের বীজ একদিন দেখা দেবে মহিরুহ হয়ে, আমাদের দেশ হবে পৃথিবীর নিরাপদতম দেশ ঢাকা হবে নিরাপদতম নগরী…’

ফেসবুক পেজের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বলতে গিয়ে মাসরুফ বারবারই বলছিলেন তাঁর ডেপুটি কমিশনার নিশারুল আরিফের কথা। ‘স্যার অত্যন্ত প্রগতিশীল একজন মানুষ। তাঁর নেতৃত্বেই উত্তরায় ক্রাইসিস রেসপন্স টিম এবং কুইক রেসপন্স টিম নামে পুলিশের দুটি বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে। কুইক রেসপন্স টিম উত্তরায় যেকোনো বিপদের খবর পেলে ১০ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবে। মানবসৃষ্ট বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং বড় ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মোকাবিলা করতে আছে ক্রাইসিস রেসপন্স টিম। দুটি দলই বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।’
কুইক রেসপন্স টিম এবং ক্রাইসিস রেসপন্স টিম যে কেবল মুখের কথা নয়, সে ভরসা দিতেই ফেসবুকে দুটি দলের ছবিই আপলোড করা আছে। অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত ক্রাইসিস রেসপন্স টিমের

ছবি দেখে কোনো হলিউডি সিনেমার দৃশ্য ভেবে ভুল করতে পারেন। ছবির নিচেই এহতেশাম হক নামের একজন যেমন মন্তব্য করেছেন, ‘আমার ছোট ভাই ছবি দেখে জিজ্ঞেস করছে, এই পুলিশ কি উড়তে পারে?’ জবাবে মাসরুফ লিখেছেন, ‘হা হা হা হা! আপনার ছোট ভাইসহ আপনাকে আমার অফিসে চায়ের দাওয়াত দিচ্ছি।’ গুরুতর বিপদে না পড়লে যেখানে লোকে থানায় পা মাড়াতে চান না, সেখানে কিনা চা খাওয়ার দাওয়াত! অনেকেই এসব দেখে দ্বিধায় পড়ে যান।

হ্যাঁ, দ্বিধায় পড়েছিলেন দীপা রহমানও। তবু ফেসবুকে এতসব দেখে সাহস করে তিনি ফোন করেছিলেন মাসরুফের নম্বরে। তারপর? ‘মাসরুফ আমাকে থানায় গিয়ে একটা জিডি করতে বললেন। ভেবেছিলাম, এটা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। কিন্তু এত দ্রুত জিডির কাজ হয়ে গেল, আমি তো অবাক! থানা থেকে এমন অভ্যর্থনা পাব, আশা করিনি। মাসরুফই পরামর্শ দিলেন, হুমকিদাতা যদি দেখা করতে চায়, তাহলে আমি যেন দেখা করি। সেখানে আমার সঙ্গে সাদা পোশাকে পুলিশ থাকবে। এরপর দ্রুত তিনি নানা রকম পদক্ষেপ নিয়েছেন। এখন আমার ফোনে আর কোনো হুমকি আসছে না।’

শুধু দীপাই নন, আরও অনেকেই উপকৃত হয়েছেন, জানা গেল মাসরুফের কথায়। ‘আগে মাদক ব্যবসায়ীদের অনেক তথ্যই সঠিকভাবে আমাদের কাছে পৌঁছাত না। এখন নির্ভয়ে মানুষ ফেসবুকের মাধ্যমে এসব আমাকে জানাতে পারেন। আমরাও দ্রুত ব্যবস্থা নিই।’ শুধু সমস্যাই নয়, ফেসবুকের মাধ্যমে বিভিন্ন সুপরামর্শও সানন্দে গ্রহণ করছেন মাসরুফ ও নিশারুল আরিফ। যেমন, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের পরামর্শে উত্তরায় চালু হয়েছে ‘ডিজিটাল সেফ জোন’। একটি নির্দিষ্ট স্থানে ৩৬০ ডিগ্রি ক্যামেরা বসিয়ে সেটিকে ডিজিটাল সেফ জোন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ক্যামেরার চারদিকে ৪০০ মিটার জায়গা সর্বক্ষণ পুলিশের পর্যবেক্ষণে থাকে। যেকোনো ব্যক্তি আক্রান্ত অবস্থায় ডিজিটাল সেফ জোনের ভেতর ঢুকে হাত উঁচু করলেই যত দ্রুত সম্ভব সেখানে পুলিশ পৌঁছে যাবে।

মাসরুফের লক্ষ্য, সারা দেশের পুলিশের জন্য উত্তরাকে একটি মডেল হিসেবে তুলে ধরা। পুলিশি সহায়তা পেতে সাধারণের জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ যে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন চালু করেছে, সেটির যাত্রা শুরু এই উত্তরা থেকেই। ইতিমধ্যেই ফেসবুকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি পেজ চালু হয়েছে। যেকোনো তথ্য, সমস্যা বা পরামর্শ সরাসরি এই পেজের মাধ্যমে জানানো যাবে।
https://www.facebook.com/ dmp.dhaka

বাংলাদেশ সময়: ১৭:৩০:২৭   ৪৫১ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি’র আরও খবর


ব্যবহৃত ল্যাপটপ ওয়ারেন্টিসহ বিক্রি করছে Device mama
ইতিহাসে প্রথম, ল্যাবে তৈরি রক্ত মানুষের দেহে !
শক্তিশালী প্রসেসরে নতুন স্মার্টফোন বাজারে আনছে মটোরোলা
যবিপ্রবির ৯ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সনদ জাল- আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ
ভারত ৩৬টি স্যাটেলাইট স্থাপন করল একসঙ্গে !!
মোবাইল ব্যাংকিং এখন গ্রাহক সংখ্যা ১৮ কোটি ছাড়িয়ে গেছে এবং দৈনিক লেনদেনও ৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে
চাঁদের উদ্দেশে নাসার রকেট উড়াল দেবে
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন ছাড়বে রাশিয়া
“Whatsapp” এ কল রেকর্ড করবেন যেভাবে ?
তাইওয়ান সীমান্তে চীনা যুদ্ধবিমান; ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফর

আর্কাইভ