রাসেদুল হাসান লিটন(বঙ্গ-নিউজ)ঃয়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশ হত্যা করে নিষিদ্ধ জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) তিন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার ছয় ঘণ্টার মাথায় একজনকে টাঙ্গাইল থেকে আটক করেছে পুলিশ।
বাকি দুই জঙ্গিসহ পুলিশের গাড়িতে হামলাকারীরা যাতে পালাতে না পারে, সেজন্য সীমান্তে জারি করা হয়েছে রেড অ্যালার্ট। তিন জঙ্গিকে ধরিয়ে দিতে ইতোমধ্যে ২ লাখ টাকা করে পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছে।টাঙ্গাইলের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম জানান, রোববার বিকালে মির্জাপুরের তক্তারচালা এলাকায় পায়ে হেঁটে যাওয়ার সময় সন্দেহ হওয়ায় দুইজনকে আটক করা হয়।
তাদের মধ্যে একজন নিজেকে রায়হান ও অন্যজন রাসেল হিসাবে পরিচয় দেয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে দ্বিতীয় জন স্বীকার করে, সেই জেএমবি সদস্য রাকিবুল হাসান ওরফে হাফিজ মাহামুদ (৩৫)।
ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার বলেন, “তার গলা, হাতে ও পায়ে ডাণ্ডাবেরির দাগ ছিল। এর সঙ্গে সদ্য দাড়ি কামানো চেহারা দেখেই আমাদের সন্দেহ হয়।”
গ্রেপ্তার রায়হানের বাড়ি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলায়। তিনিও আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এর আগে টাঙ্গাইলের সখীপুর থেকে জাকারিয়া ওরফে মিলন (২৮) নামে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ছিনতাই হওয়া তিন জঙ্গিকে বহনকারী গাড়ির চালক বলে জানিয়েছে পুলিশ।
রোবাবর সকাল ১০টার দিকে ময়মনসিংয়ের ত্রিশালে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে বোমা মেরে ও গুলি করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জেএমবি নেতা সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি (৩৮), রাকিবুল হাসান ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত মিজান ওরফে জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমারু মিজানকে (৩৫) ছিনিয়ে নেয়া হয়।
এ সময় প্রিজন ভ্যানে থাকা পুলিশ কনস্টেবল আতিকুল ইসলাম (৩০) নিহত হন, আহত হন আরো দুইজন পুলিশ সদস্য।
একটি মামলায় হাজিরার জন্য জেএমবির ওই তিন সদস্যকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ময়মনসিংহের আদালতে নেয়া হচ্ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এর কয়েক ঘণ্টা পর ময়মনসিংহ থেকে টাঙ্গাইল হয়ে পালানোর সময় হামলাকারী দলের একজন পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন।
টাঙ্গাইলের সখীপুর থানার ওসি মোখলেছুর রহমান জানান, কালো রঙের একটি মাইক্রোবাস সখীপুরের পৌর এলাকার কাছে প্রশিকা এলাকায় একটি অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয়।
“ওই গাড়িতে পলাতক তিন জঙ্গি ছিল। দুর্ঘটনার পর আসামিরা দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। আমরা সেখান থেকে গাড়ি চালক জাকারিয়াকে একটি পিস্তল, পাঁচ রাউন্ড গুলি ও ছয়টি ককটেলসহ গ্রেপ্তার করি।”
ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এস এম মাহাফুজুল হক নুরুজ্জামান বলেন, “জাকারিয়া ওরফে মিলনের বাড়ি চাঁপাইনবাবঞ্জে।চার বছর আগে সে জেল থেকে জামিনে ছাড়া পায়। তার বিরুদ্ধে জেএমবি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। সকালের ঘটনায় সে জড়িত ছিল বলে আমরা প্রমাণ পেয়েছি।”
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বিকালে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “বাকিরা যাতে পালাতে না পারে, সেজন্য সীমান্তে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। তাদের ধরতে আমরা সর্বশক্তি নিয়োগ করেছি। আশা করি শিগগিরই সবাইকে আটক করা সম্ভব হবে।”
এ ধরনের আসামিদের আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে আগামীতে নিরাপত্তা বাড়ানো হবে বলেও জানান তিনি।
পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এস এম মাহাফুজুল হক নুরুজ্জামান বলেন, ছিনতাই হওয়া জেএমবি সদস্যকে ধরিয়ে দিতে পারলে প্রত্যেকের জন্য ২ লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।
“ত্রিশালের ঘটনার পর ময়মনসিংহ ও আশেপাশের সব জেলায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মাঠে রয়েছেন।”
এ ঘটনায় অতিরিক্ত সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরীকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ডিআইজি (ঢাকা রেঞ্জ) এস এম মাহাফুজুল হক নুরুজ্জামান, ডিআইজি প্রিজন (সদর দপ্তর) টিপু সুলতান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব খায়রুল কবির মেনন এই কমিটিতে সদস্য হিসাবে আছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ইফতেখারুল ইসলাম খান বঙ্গ-নিউজ ডটকমকে বলেন, কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯:৪৮:০৬ ৪২৯ বার পঠিত