বঙ্গ-নিউজঃ সংসদ নির্বাচনের দেড় মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম পর্বে জয়ের পাল্লা ভারী করেছে বিএনপি।
বুধবার অনুষ্ঠিত ৯৭টি উপজেলা পরিষদে নির্বাচনের ৯৫টির ফলাফল পাওয়া গেছে, এর মধ্যে ৪৪টিতে চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন বিএনপি নেতারা।
বিএনপির পাশাপাশি তাদের জোট শরিক জামায়াতে ইসলামীর নেতারা ১২টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বসতে যাচ্ছেন। ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদেও তাদের কয়েকজন জয়ী হয়েছেন।
৯৫টির মধ্যে ৩৩টিতে চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের নেতারা। তাদের এক সময়ের জোটসঙ্গী ও বর্তমান সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির একজন নেতা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে সদরসহ দুটি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন ইউপিডিএফ নেতারা। একটিতে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন জনসংহতি সমিতির (এম এন লারমা গ্রুপ) নেতা।
বাকি দুই উপজেলা রংপুরের তারাগঞ্জ ও গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন নির্দলীয় প্রার্থীরা।
বরিশালের বাকেরগঞ্জ এবং সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় দুটি করে কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত হওয়ায় এই দুই উপজেলায় ফলাফল ঘোষণা হয়নি।
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে উপজেলা নির্বাচন দলীয়ভাবে করার আনুষ্ঠানিক সুযোগ না থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলো আঁটঘাট বেঁধেই এই নির্বাচনে অংশ নেয়।
দশম সংসদ নির্বাচন বয়কট করে আইনসভার বাইরে চলে যাওয়া বিএনপি এই নির্বাচনকে যেমন গুরুত্ব দিচ্ছে, তেমনি গুরুত্ব দিয়ে আসছে আওয়ামী লীগও।
দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা শুরু থেকে প্রতিটি উপজেলায় একক প্রার্থী দেয়ার ওপর জোর দিলেও তার প্রতিফলন দেখা যায়নি মাঠে।
অধিকাংশ উপজেলায় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা প্রার্থী হন, যা দল সমর্থিত প্রার্থীর পরাজয়ে ভূমিকা রেখেছে বলে স্থানীয় নেতারা মনে করছেন।
নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিএনপি জাতীয় নির্বাচন বয়কট করলেও স্থানীয় সরকারের ভোট হিসেবে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও জয়জয়কার ছিল বিএনপির।
এবারো বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে দলের যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে সকাল থেকেই সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখা যায়।
ভোটগ্রহণের মধ্যেই জালিয়াতির অভিযোগ এনে ছয় জেলার আট উপজেলায় বৃহস্পতিবার স্থানীয় বিএনপির ডাকা হরতালের সিদ্ধান্ত জানান তিনি।
নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভবপর নয়।
আর এর প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিএনপির সব অভিযোগই ‘ভিত্তিহীন’।
প্রায় গোলযোগহীন এই নির্বাচন নিয়ে সন্তোষ জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তারা বলছে, ভোটার উপস্থিতি গত উপজেলা নির্বাচনের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম হলেও ভোটের সার্বিক দিক নিয়ে তারা সন্তুষ্ট।
বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেছেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে করা হলেই কেবল পদক্ষেপ নেয়া হবে।
ব্যালট বাক্স ছিনতাই, ব্যালট পেপার পুড়িয়ে দেয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে ৯৭ উপজেলার সাড়ে ৬ হাজার কেন্দ্রের মধ্যে ১০টিতে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে।
ছয় ধাপে অনুষ্ঠেয় চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনের প্রথম পর্বে ধাপে তিন পদে (চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান) মোট ১ হাজার ২৭৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
এর মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান পদে সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে একজন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে শরীয়তপুরের জাজিরা এবং বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলায় একক প্রার্থী থাকায় তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
এই পর্বের পর দ্বিতীয় ধাপে ১১৭ উপজেলায় ২৭ ফেব্রুয়ারি, তৃতীয় ধাপে ৮৩ উপজেলায় ১৫ মার্চ, চতুর্থ ধাপে ৯২ উপজেলায় ২৩ মার্চ ভোট হবে।
পঞ্চম ধাপের অর্ধশতাধিক উপজেলার তফসিল বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হবে। বাকি উপজেলাগুলোতে ষষ্ঠ ধাপে ভোট হবে মে মাসে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:২৫:৫৮ ৩৬০ বার পঠিত