রাসেদুল হাসান লিটন(বঙ্গ-নিউজ)ঃআল-কায়েদার সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সম্পর্ক রয়েছে দাবি করে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসবাদী এই সংগঠনের দোসর।
রোববার জাতীয় সংসদে মাগরিবের বিরতির পর এক অনির্ধারিত আলোচনায় সাংসদ সেলিম বলেন, “আল-কায়দার সমর্থক গোষ্ঠী থাকলে খুঁজে বের করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।”বিএনপি-জামাত আল-কায়দার দোসর। বিএনপির এক নেতা বলেছে, বাংলাদেশ একটি বিশাল কারাগার। আল-জাওয়াহিরিও এই কথা বলেছে।”
সেলিম বলেন, “বিএনপি-জামাত, তালেবান, আল-কায়দা জঙ্গি সংগঠন। এরা যা কাজ করেছে তা জঙ্গি সংগঠনের কাজ। রক্ত দিয়ে হলেও কোনো অপশক্তিকে স্থান দেব না।”
গত শনিবার আল-কায়েদা নেতা জাওয়াহিরির নাম ও ছবিসহ এক অডিও বার্তায় বাংলাদেশ সৃষ্টির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে ‘ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্রের’ বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান জানানো হয়।
গত বছরের হেফাজতকাণ্ডের সূত্র ধরে এই বার্তায় রাজপথে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করার অভিযোগ আনা হয়েছে সরকারের বিরুদ্ধে। আর বাংলাদেশ সরকারকে অভিহিত করা হয়েছে ‘ইসলামবিরোধী, ধর্মনিরপেক্ষ সরকার’ হিসাবে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী টাইমকে উদ্ধৃত করে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, “২০০১-২০০৬ সালে যখন বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় ছিল তখন জাওয়াহিরি তিনবার বাংলাদেশে এসেছিল। সরকারি বদান্যতায় যে এটা হয়েছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই।”
তিনি বলেন, “এই জাওয়াহিরি তাদের (বিএনপি-জামায়ত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার) তত্ত্বাবধানে তিন তিনবার বাংলাদেশে এসেছিলো।
“জাওয়াহিরির বক্তব্য তখন এলো যখন লেডি লাদেন খালেদা জিয়া নির্বাচন বানচাল করার প্রতিরোধ করার কর্মসূচি ব্যর্থ হলো। এটা হলো মনোবল চাঙ্গা কর্মসূচির অংশ। বেগম সাহেব খেমা দেন। জাওয়াহিরি সাহেব গেরিলা আমরা, আপনারা না। ওই ভাষণ পর্যন্ত, এটা বাংলাদেশ, রাজাকাররা হারবে, গেরিলারা জিতবে”, বলেন মতিয়া চৌধুরী।
খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের সময় উনি ছিলেন পাক সেনাদের আতিথেয়তায়। আর উনার ছেলে আর্মির ব্যাটম্যানদের কোলে আদর পেয়ে মানুষ হয়েছেন।”
এরআগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, “মুসলিম দেশ যেখানে সেখানেই আল- কায়েদা আক্রমণ করেছে। মসুলমানদের তারা টার্গেট করেছে। তারা কিসের ইসলাম প্রচার করতে চায়? বিএনপি-জামায়াত যখন ক্ষমতায় ছিল তারা আল-কায়েদার কাজ করেছে।”
নাসিম বলেন, “কারা এই হুমকি দিয়েছে বের করতে হবে। শুনেছি এটা নাকি বাংলায় ড্রাফট করা হয়েছে। এটা বের না করতে পারলে মানুষের মধ্যে আতঙ্কে থাকবে।
“তথ্য প্রযুক্তির যুগে এটা বের করা যাবে। ওই আল-কায়েদা দিয়েছে নাকি বাংলাদেশের আল- কায়েদা দিয়েছে। কোনো হুমকি দিয়ে, ধামকি দিয়ে আমাদের উৎখাত করা যাবে না।”
জামায়াত, শিবির ও হেফাজতে ইসলামকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান নজিবুল বশার মাইজভাণ্ডারী।
তিনি বলেন, “শিগগিরই জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করতে হবে। যেখানে জামায়াত-শিবির ও হেফাজত দাঁড়াবে সেখানে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।”
জাতীয় সংসদে শেখ সেলিম বলেন, “বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র। এর আগে জামাত-শিবির আর বিএনপি যা বলেছে, জাওয়াহিরি তাই বলেছে।
“ধর্মের নামে এ ধরনের যেন বাড়াবাড়ি না করে সেজন্য হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি। তিনি বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্র বানাতে চান। বাংলাদেশের মানুষ সুখে আছে তা সহ্য হয় না। ধর্মকে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ হাসিলে হামলা চালিয়েছে,” আল-কায়েদার বর্তমান প্রধানকে উদ্দেশ্য করে বলেন সরকারি দলের এই সাংসদ।
সাইদীর যুদ্ধাপরাধ মামলার রায়ের পর যে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে পুলিশের গুলিতে ‘ধর্মপ্রাণ’ মুসলমানদের মারা হয়েছে বলে খালেদা জিয়া দাবি করেন।
এ প্রসঙ্গ তুলে শেখ সেলিম বলেন, “জাওয়াহিরিই এই কথা বলেছে। এই ম্যাসেজ জাওয়াহিরির কাছে খালেদা জিয়া পৌঁছে দিয়েছে। খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধী ও ট্রাইব্যুনালের বিষয়ে যা বলেছে, জাওয়াহিরিই তাই বলেছে।”
মতিঝিলে গত ৫ মে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কোরআন শরীফ পুড়িয়ে এম কে আনোয়ার অপপ্রচার চালায়।পরের দিন তাদের টার্গেট ছিল, বাংলাদেশ ব্যাংক লুট করবে, সচিবালয়ে হামলা করবে। এমন একটা অবস্থা করবে- শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে। এদের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া কিছুই বলেন নাই। দলের লোকদের তাদের পাশে দাঁড়াতে বলেন।”
আল-কায়েদার বার্তা নিয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের মইন উদ্দিন খান বাদল বলেন, “জাওয়াহিরি যে টোনে কথা বলেছেন, বিএনপি-জামাতের কথা যদি হুবহু মিলে যায় তাহলে কি বুঝবো?
“স্টেটলেস জাওয়াহিরিকে নিয়ে যারা নাচানাচি করছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনি তো দশ ট্রাক অস্ত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকছেন। আপনার সিগনেচার সেখানে দেখা যাচ্ছে। আপনার সন্তান দুবাইতে সন্ত্রাসীদের সাথে মিটিং করছেন। আপনি তো জানতেন এসব।”
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “যে শক্তি বিশ্বব্যাপী অশুভ প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত, কী কারণে আপনি যুক্ত হতে চাইছেন?
“এই সংসদে দাঁড়িয়ে আমি প্রশ্ন তুলতে চাই, গণতন্ত্রের নেকাবে যারা গণবিরোধী সন্ত্রাসী তৎপরতা চালায়, বিচারের সম্মুখীন হলেই মানবাধিকারের আশ্রয় নেয়-এই সংসদকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এদের বিরুদ্ধে আপনার অবস্থান কোথায়?”
ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, “আজকে আল-কয়েদা প্রধান বিবৃতি দিয়েছে বলে ধরে নেয় উচিত হবে না, তারা এখন বাংলাদেশে যুক্ত হয়েছে। ২০০১ সালের পর মাদ্রাসায় মাদ্রাসায় আল-কায়েদার সামরিক ট্রেনিংয়ের ভিডিও দেখানো হয়েছিল।”
“বিএনপি-জামাত যেদিন ক্ষমতায় এসেছে সেদিন থেকে আল- কায়েদার সঙ্গে যুক্ত। যেদিন পাকিস্তান পার্লামেন্টে যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় নিয়ে কথা হয়েছে সেদিনই প্রমাণ হয়েছে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হচ্ছে।”
আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের পর পাকিস্তান পার্লামেন্টে প্রস্তাব পাসের নিন্দা প্রস্তাব আনার দাবি করে ফজলে হোসেন বাদশা।
‘জাওয়াহিরির বিবৃতির বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান নেয়া উচিত’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৩৩:৫৮ ৩৯৫ বার পঠিত