বঙ্গ নিউজ ডটকমঃ টাঙ্গাইলের ঘাটাইল শহীদ সালাহউদ্দিন সেনানিবাসের ফিল্ড ফায়ারিং রেঞ্জে গতকাল বুধবার মর্টার শেল বিস্ফোরণে ছয়জন নিহত হয়েছেন। দুপুর ১২টার দিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) প্রশিক্ষণ চলাকালে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে। এতে নিহতদের মধ্যে দুজন সেনা সদস্য ও চারজন বিজিবি সদস্য। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন একজন মেজরসহ ১০ জন বিজিবি সদস্য। বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহম্মেদ গতকাল বিকেল পৌনে ৫টার দিকে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এই দুর্ঘটনা সম্পর্কে গতকাল বিকেল ৩টা ২৮ মিনিটে সর্বশেষ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠায়। ‘ঘাটাইল ফিল্ড ফায়ারিং রেঞ্জে দুর্ঘটনাবশত মর্টার শেল বিস্ফোরণ’ শীর্ষক ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘাটাইল ফিল্ড ফায়ারিং রেঞ্জে (ঘাটাইল সেনানিবাসের বাইরে) গতকাল দুপুর ১২টার দিকে মর্টার ফায়ারিংয়ের সময় দুর্ঘটনাবশত মর্টার শেল বিস্ফোরণে সেনাবাহিনীর দুজন এবং বিজিবির তিনজন সদস্য নিহত হন। নিহতরা হলেন সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার পারভেজ (২০ ইস্ট বেঙ্গল) ও সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মঞ্জুর (৪ ইস্ট বেঙ্গল) এবং বিজিবির সিপাহি আবু সুফিয়ান (৩ বিজিবি), সিপাহি একরাম (৩ বিজিবি) ও ল্যান্স করপোরাল মো. আলী (৩ বিজিবি)। গুরুতর আহত সাতজনকে ঢাকা সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়েছে।
তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র গত রাতে কালের কণ্ঠকে জানায়, ওই ঘটনায় আহত বিজিবি সদস্যের সংখ্যা মোট ১১। আহত বিজিবি কর্মকর্তার নাম এম এস মেজর ফরহাদুজ্জামান। এই কর্মকর্তাসহ সাতজন আহত বিজিবি সদস্যকে ঘটনার পরপরই হেলিকপ্টারযোগে এবং পরে অন্য চারজনকেও ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত পৌনে ১১টার দিকে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ নামে বিজিবির আরো একজন সদস্য মারা যান। গত রাতে বিজিবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিপাহি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ মারা যাওয়ার খবর জানিয়ে বলা হয়, আহত অন্যরা আশঙ্কামুক্ত।
সূত্র আরো জানায়, ঘাটাইল শহীদ সালাহউদ্দিন সেনানিবাসের ফিল্ড ফায়ারিং রেঞ্জটি হচ্ছে একটি ভারী অস্ত্রের ফায়ারিং রেঞ্জ। এখানে বিভিন্ন বাহিনীর ফায়ারিং প্রশিক্ষণ হয়ে থাকে। বিজিবির ফায়ারিং প্রশিক্ষণ চলছে ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে। দুর্ঘটনায় যে দুজন সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন তাঁরা সেখানে ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁদের একজনের কর্মস্থল ঘাটাইল সেনানিবাস। অন্যজন সাভার সেনানিবাসের। নিহত বিজিবি সদস্যদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য গতকালই ঢাকার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নেওয়া হয়। তাঁরা জয়পুরহাটের ৩ বিজিবি ব্যাটালিয়ন থেকে প্রশিক্ষণ নিতে এসেছিলেন।
এদিকে ঘাটাইল থানার ওসি ফজলুল কবির জানান, ঘাটাইল শহীদ সালাহউদ্দিন সেনানিবাসের ফায়ারিং রেঞ্জের মাইধারচালা এলাকায় গতকাল সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বিজিবি সদস্যদের প্রশিক্ষণ চলছিল। তাঁদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন সেনাবাহিনীর দুজন সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার। দুপুর ১২টার দিকে একটি মর্টার শেল হঠাৎ বিস্ফোরিত হয়। এতে সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার দুজন ও তিনজন বিজিবি সদস্য নিহত হন। এ ঘটনায় বিজিবির ১০ জন প্রশিক্ষণার্থীও আহত হন। তাঁরা হলেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, পলাশ, আনোয়ারুল ইসলাম, ফিরোজ মিয়া, রিয়াজুল ইসলাম, আলতাবুর রহমান, আব্দুল আজিজ, জাহিদুল ইসলাম, শাহজাহান ও আজহারুল ইসলাম। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার আগেই হতাহতদের সেখান থেকে নিয়ে যান সেনাবাহিনীর সদস্যরা। আহতদের বরাত দিয়ে ওসি আরো জানান, মর্টার শেল পুশ করতে গিয়ে এই বিস্ফোরণ ঘটে।
আহতদের মধ্যে সাতজনকে হেলিকপ্টারে ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে পাঠানো হয়। বাকিদের ঘাটাইল শহীদ সালাহউদ্দিন সেনানিবাসের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
টাঙ্গাইলের সহকারী পুলিশ সুপার (গোপালপুর সার্কেল) আবু হাসনাত জানান, বিজিবির প্রশিক্ষণের সময় ৮২ মিলিমিটার মর্টার শেল বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
প্রধানমন্ত্রীর শোক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘাটাইলে দুর্ঘটনায় এই প্রাণহানিতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে তিনি নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। প্রধানমন্ত্রী নিহতদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতিও গভীর সমবেদনা জানান এবং আহতদের উন্নত চিকিৎসা প্রদানের জন্য সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেন। পৃথক বার্তায় শোক জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ।
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের শোক : ঘাটাইল শহীদ সালাহউদ্দিন সেনানিবাসে প্রশিক্ষণকালীন দুর্ঘটনায় দুজন সেনা ও চারজন বিজিবি সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। গতকাল এক শোকবার্তায় তিনি এই মর্মান্তিক ও দুঃখজনক ঘটনায় নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। একই সঙ্গে তিনি আহতদের আশু সুস্থতা কামনা করেন।
মাগুরায় পারভেজের বাড়িতে মাতম : মাগুরা প্রতিনিধি জানান, ঘাটাইলে প্রশিক্ষণের সময় মর্টার শেল বিস্ফোরণে ওয়ারেন্ট অফিসার পারভেজ নিহত হওয়ার ঘটনায় মাগুরা শহরতলির বাড়িতে মাতম চলছে। তাঁর বাবার নাম হাফিজ খান। পারভেজ সাত ভাইবোনের মধ্যে সবার বড়। কর্মস্থল ২০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে তিনি স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে থাকতেন।
পারিবারিক সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি দল গতকাল পারভেজের বাড়িতে খোঁজখবর নিতে আসে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় তাঁর লাশ হেলিকপ্টারযোগে মাগুরায় আসার কথা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:১৭:৫৭ ৪০৫ বার পঠিত