রাসেদুল হাসান লিটন(বঙ্গ-নিউজ)ঃবাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ‘সম্পর্ক গভীর’ বলে অভিযোগ করেছেন পশ্চিম বঙ্গ বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু।
রোববার কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড মাঠে এক সমাবেশে বিমান বলেন, “মমতা ব্যানার্জি বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক দল জামায়াতকে মদদ দিচ্ছে, যাদেরকে খোদ বাংলাদেশের গণ মানুষই প্রত্যাখ্যান করেছে ”
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের তিস্তা চুক্তি ও সীমান্ত ইস্যু নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতার অবস্থান নিয়ে সমালোচনা করেন তিনি, “তিনি (মমতা) তাদেরকে এখানে আশ্রয়- প্রশ্রয় দিচ্ছেন। ধর্মীয় মৌলবাদী শক্তির উত্থানে তিনি মদদ দিচ্ছেন। তিনি একটি ভয়াবহ খেলায় মেতে উঠেছেন।”
বাংলাদেশের সাতক্ষীরায় যখন জামায়াতের ‘সন্ত্রাসী’দের ধরতে পুলিশ ও আইনশৃংখলা বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে, তখন পশ্চিম বঙ্গের বশিরহাটের তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থিত সাংসদ তাদের আশ্রয় দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন বিমান।
“আপনাদের কি মনে হয়, তিনি (মমতা) কেন তিস্তা পানি বন্টন চুক্তিতে সায় দিচ্ছেন না, কেন তিনি সীমান্ত চুক্তির ব্যাপারেও আপত্তি করছেন? এর কারণ হচ্ছে তিনি জামায়াতকে খুশি করতে চান এবং হাসিনাকে বিপদে ফেলতে চান।”
গত সপ্তাহে ভারতের রাজ্যসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে যাকে পাঠানো হয়েছে তিনি জামায়াতের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে দাবি করেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান।
“তৃণমূলের ওই নেতা(আহমেদ হাসান)জামায়াতের সমর্থক পত্রিকা নয়াদিগন্তের প্রতিবেদক ছিলেন।”
পশ্চিম বঙ্গের ‘তৃণমূল কংগ্রেস ও জামায়াতে ইসলামীর আঁতাতের’ বিস্তারিত সব তথ্যই বামফ্রন্টের কাছে রয়েছে বলে দাবি করেন বিমান বসু।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকার যে ‘সেক্যুলার’ রাজনীতি করছে আমরা বামপন্থিরা তা দৃঢ়ভাবে সমর্থন করি। এটা আমাদের বোধগম্য নয়, একজন বাঙালি নেতা (মমতা ব্যানার্জিকে ইঙ্গিত করে) যে কিনা নিজেকে সেক্যুলারিজমে শ্রদ্ধাশীল বলে দাবি করেন, তিনি জামায়াতকে সমর্থন করেন কিভাবে?”
বাংলাদেশের সঙ্গে সচেতনভাবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য পশ্চিমবঙ্গের জনগণ মমতাকে কখনো ক্ষমা করবে না বলেও মন্তব্য করেন বিমান।
মমতা ব্যানার্জির সরকারকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রশংসার বিষয়ে বিমান বসু বলেন, “তারা মমতার সামনে ‘মুলো’ ঝুলিয়েছে।”
“ক্ষমতার জন্য মমতা যদি যদি ভারতে হিন্দু মৌলবাদী ও বাংলাদেশে মুসলমান মৌলবাদী সংগঠনগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখেন তাহলে কি আপনারা অবাক হবেন?”, প্রশ্ন রাখেন বিমান।
তিনি বলেন, “মমতার উত্থানে মার্কিনিদের হাত রয়েছে। তারা এটা করেছে প্রথমত পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থীদের বিপদে ফেলতে এবং তারপর বাংলাদেশে ‘হাসিনা’ সরকারকে ‘বিরক্ত’ করতে।
“এখন এই খেলা সবাই বোঝে।”
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ‘নষ্ট’ করার পেছনে মমতার হাত রয়েছে বলে সপ্তাহখানেক আগেই অভিযোগ করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের আরেক প্রবীণ বামপন্থী নেতা ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্য।
ভারতে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত সালমান বশির সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে দেখা করে তাকে পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানান।
এ প্রেক্ষিতেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্য মমতাকে দুষে বলেন,”আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে চাই। তবে তা বাংলাদেশকে হারানোর বদলে নয়। আমাদের কাছে পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ অনেক গুরুত্বপূর্ণ।”
সেসময় পশ্চিম বঙ্গের দীর্ঘদিনের মুখ্যমন্ত্রী ও বামফ্রন্টের সাবেক নেতা জ্যোতি বসুর আমলে ১৯৯৭ সালের বাংলাদেশ-ভারত ‘গঙ্গা পানিবন্টন চুক্তির’ উদাহরণ টানেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্য।
তিনি বলেন, “ওই চুক্তিটি করা হয়েছিলো আমাদের সম্পর্ক দৃঢ় করার জন্য। আমাদেরকে বাংলাদেশের প্রকৃত প্রয়োজনটা বুঝতে হবে। কিন্তু এখন সবই ক্ষুণ্ন হচ্ছে।”
বাংলাদেশ সময়: ২২:৪৩:০৪ ৩৯২ বার পঠিত