রাসেদুল হাসান লিটন(বঙ্গ-নিউজ)ঃআত্মসমর্পণের পর আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেন ও চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তারকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম তাজুল ইসলাম রোববার এই দুইজনের জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের ওই কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ১১২ জন নিহত এবং দুই শতাধিক শ্রমিক আহত ও দগ্ধ হন। গত ২২ ডিসেম্বর দেলোয়ার ও মাহমুদাসহ ১৩ জনকে আসামি করে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
ঢাকার হাকিম আদালতের অতিরিক্ত পিপি আনোয়ারুল কবির বাবুল জানান, দেলোয়ার ও তার স্ত্রী মাহমুদা রোববার সকালে আদালতে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করেন এবং জামিনের আবেদন জমা দেন।
তাদের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন এটিএম গোলাম গাউস, ফরহাদ হোসেনসহ পাঁচ আইনজীবী।
গোলাম গাউস শুনানিতে বলেন, অপরাধজনক প্রাণনাশ ও আগুন বা বিস্ফোরক দিয়ে অনিষ্ট করার অভিযোগ এই আসামিদের ক্ষেত্রে খাটে না, কারণ নিজেদের এতোবড় ক্ষতি করার কোনো ইচ্ছা বা পরিকল্পনা তাদের ছিল না।
“তাছাড়া তাজরীন কারখানায় আসামিদের নিয়োগ করা উচ্চ বেতনভোগী দশজন কর্মকর্তা কর্মচারী ছিলেন। প্রতিদিন কারখানা পরিদর্শন করা এ দুই আসামির পক্ষে সম্ভব ছিল না।”
এই আইনজীবী দাবি করেন, তাজরীন ভবনের কাঠামোগত কোনো ত্রুটি ছিল না। আগুন থেকে রক্ষার সব আয়োজনও ছিল। এ বিষয়ে আসামিদের কোনো অবহেলা ছিল না।
দেলোয়ার ও মাহমুদার আইনজীবীরা যুক্তি দেন, তাদের অন্য পোশাক কারখানায় ব্রাজিল ফুটবল বিশ্বকাপের জন্য জার্সি বানানোর কাজ চলছে। এখন তারা কারাবন্দি হলে সেই কাজ বাতিল হতে পারে, তাতে দেশেরও ক্ষতি হবে।
আসামিপক্ষের যুক্তির বিরোধিতা করেন আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত পিপি আনোয়ারুল কবির বাবুল।
তারা বলেন, আসামিদের অবহেলার কারণেই তাজরীন কারখানায় এতো বিপুল প্রাণহানী ঘটে।
দেলোয়ার ও তার স্ত্রী এজলাসে ঢোকার সময় কয়েকজন গার্মেন্ট শ্রমিককে আসামিদের ফাঁসি দবিতে শ্লোগান দিতে দেখা যায়। শুনানি শেষে ওই দম্পতির সাত বছর বয়সী ছেলে এজলাসে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে।
তাজরীন মালিক ও তার স্ত্রীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশের পর কারা হাসপাতালে রেখে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার আবেদনের শুনানি হয়। বিচারক এ বিষয়ে কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলেন।
তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডের পরদিন আশুলিয়া থানার উপ পরিদর্শক খায়রুল ইসলাম অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে। ওই মামলায় নাশকতার পাশাপাশি অবহেলাজনিত মৃত্যুর ( দণ্ডবিধির ৩০৪ ক) ধারা যুক্ত করা হয়। গত বছর ২ জানুয়ারি সিআইডি এ মামলার তদন্ত শুরু করে।
ঘটনার পর শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, আগুন লাগার পরও কারখানার ছয়টি ফ্লোরের কয়েকটিতে দরজা আটকে রাখা হয়েছিল, শ্রমিকদের নিচে নামতে দেয়া হয়নি। এছাড়া ওই কারখানা নির্মাণের ক্ষেত্রে ইমারত বিধি অনুসরণ না করা এবং অবহেলারও প্রমাণ পাওয়া যায়।
এরপর গত ২২ ডিসেম্বর ১৩ জনকে আসামি করে পুলিশ যে অভিযোগপত্র দেয়, তাতে দণ্ডবিধির ৩০৪ ও ৩০৪ (ক) ধারা অনুযায়ী ‘অপরাধজনক নরহত্যা’ ও ‘অবহেলার কারণে মৃত্যুর’ অভিযোগ আনা হয়।
প্রথম ধারায় আসামিদের সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও দ্বিতীয় ধারায় সর্বোচ্চ পাঁচ বছর জেল হতে পারে।
অভিযোগপত্রের ১৩ আসামির মধ্যে প্রকৌশলী এম মাহাবুবু মোর্শেদ, ফ্যাক্টরি ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক, কোয়ালিটি ম্যানেজার শহীদুজ্জামান দুলাল ও প্রোডাকশন ম্যানেজার মোবারক হোসেন মঞ্জু পলাতক।
তাজরীনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা দুলাল, স্টোর ম্যানেজার হামিদুল ইসলাম লাভলু, সিকিউরিটি সুপারভাইজার আল আমীন, নিরাপত্তারক্ষী রানা ওরফে আনারুল, স্টোর ইনচার্জ (সুতা) আল আমীন ও লোডার শামীম মিয়া জামিনে রয়েছেন।
আর কারখানার সিকিউরিটি ইনচার্জ আনিসুর রহমান রয়েছেন কারাগারে। রোববার তার জামিন আবেদনও আদাতাল নাকচ করে দিয়েছে, ফলে কারাগারেই থাকছে হচ্ছে আনিসকে।
রাষ্ট্রপক্ষে মোট ১০৪ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে এ মামলায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:৫১:০৪ ৩৬১ বার পঠিত