রাসেদুল হাসান লিটন(বঙ্গ-নিউজ)ঃযুদ্ধাপরাধের মামলায় অভিযুক্ত কারাবন্দি জামায়াত নেতা একেএম ইউসুফ হৃদরোগে মারা গেছেন।
একাত্তরে খুলনায় রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠা করে প্রায় ৭০০ জনকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে জামায়াতের এই নায়েবে আমিরের বিরুদ্ধে।ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক ফরমান আলী জানান, গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে রোববার বেলা ১১টার দিকে ইউসুফকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়। সেখানে ভর্তির কিছুক্ষণ পর তিনি মারা যান।
মুক্তিযুদ্ধের সময় এদেশে পাকিস্তানিদের গঠন করা কথিত মালেক সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য ইউসুফ এক সময় জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্বও পালন করেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।
তিনি হৃদরোগ ও বার্ধ্যক্যজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন বলে তার আইনজীবী তাজুল ইসলাম জানান।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক আবদুল মজিদ ভূঁইয়া জানান, ‘হার্ট অ্যাটাকের’ পর ইউসুফকে হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে নেয়া হয়। সেখানেই তিনি মারা যান।
উপ কারা মহাপরিদর্শক গোলাম হায়দারজানান, এর আগে ইউসুফের বাইপাস সার্জারি করা হয়েছিল। সকাল সোয়া ৮টার দিকে কাশিমপুর কারাগারে বমি করলে চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়।
“বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালে আনার পর তিনি আমাদের লোকজনের সঙ্গে কথাও বলেছেন। মৃত্যুর আগে তিনি আত্মীয়দের খবর দিতে বলেন।”
ইউসুফের ছেলে একে এম মাহাবুব বলেন, “হাসপাতালে নেয়ার পর বাবা মারা গেছেন। এখন আর কথা বলতে পারছি না।”
তবে এই জামায়াত নেতার আইনজীবী শিশির মুনীর হাসপাতালেবলেন”কারা কর্তৃপক্ষ নিয়ম অনুযায়ী ময়নাতদন্ত করতে চেয়েছিল। তবে যেহেতু এটা স্বাভাবিক মৃত্যু, সেহেতু আমরা ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তরের জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেছি।”
ইউসুফের জামাতা আব্দুল ওহাব বলেন, ট্রাইব্যুনারের অনুমতি পেলে ধানমণ্ডি ১০ এ গোলাপ ভিলায় নিজের বাড়িতে তার লাশ নেয়া হবে। সেখানে প্রথম জানাজা শেষে দাফনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
হাসপাতালে তার শ্বশুর যথাযথ চিকিৎসা পাননি বলে মনে করেন ডা. আব্দুল ওহাব।
“সকালে হাসপাতালে আনার পর যতোটুকু চিকিৎসা পাওয়ার কথা ছিল তা হয়নি,” বলেন তিনি।
তার এ অভিযোগ নাকচ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক আবদুল মজিদ ভূঁইয়া বলেন, “একজন হার্ট অ্যাটাকের রোগীকে হাসপাতালে আনার পর যা যা করা দরকার তার সবকিছুই নিশ্চিত করা হয়েছিল।”
একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ১৩টি অভিযোগে গত বছর ১ অগাস্ট এ কে এম ইউসুফের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এ মামলার কার্যক্রম ইতোমধ্যে অনেকটা এগিয়েছিল। ১২ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের জন্য দিন রেখেছিলেন বিচারক।
গতবছর ১২ মে প্রসিকিউশনের অভিযোগ আমলে নিয়ে ইউসুফের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওইদিনই তাকে ধানমণ্ডির বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের অভিযোগ, একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে হত্যা-লুণ্ঠনে সহায়তা দেয়ার জন্য গঠিত সশস্ত্র বাহিনীর ‘রাজাকার’ নামটি ইউসুফই চালু করেন।
ওই সময় কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির নির্দেশে ইউসুফ নিজে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়ে প্রথমে বৃহত্তর খুলনা জেলায় (খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট) শান্তি কমিটি গঠন করেন। পরে মহকুমা, থানা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে জামায়াত ও মুসলিম লীগের সদস্যসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে শান্তি কমিটি গঠন করেন তিনি।
বিভিন্ন এলাকা থেকে ৯৬ জনকে নিয়ে তিনি খুলনার আনসার ও ভিডিপি ক্যাম্পে সশস্ত্র রাজাকার বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেন। ওই অঞ্চলের শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের নেতৃত্ব দেন বলেও ইউসুফের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ইউসুফের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশ, পরামর্শ ও প্ররোচনায় একাত্তরে খুলনার বিভিন্ন এলাকায় গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী নানা অপরাধ সংঘটিত হয়।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দালাল আইনে ইউসুফের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলেও আইনটি বাতিল হলে তিনি ছাড়া পান।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:৩৩:৫৭ ৪৬১ বার পঠিত