(খোকন)-বঙ্গ-নিউজ ডটকম: শহিদ কপূরের চুল থাকবে কি থাকবে না- তা নিয়ে অন্যের মাথাব্যথার কোনও কারণ থাকতে পারে কি? কিন্তু ঠিক গতকাল থেকে সারা দেশে রীতিমতো চুলবুলানি শুরু হয়েছে শহিদের বালকান্ড নিয়ে। বিশাল ভরদ্বাজের ‘হায়দার’ ছবির জন্য এই যে মাথা মুড়িয়ে ফেললেন নায়ক, তা নিয়ে দেশের বাজারে এখন চরম হুলুস্থুলু! ট্যুইটের পর ট্যুইটের ঝড়ও বয়ে যাচ্ছে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে- ‘না শহিদ, তুমি ন্যাড়া হয়ো না’! কে নেই এহেন ট্যুইটের তালিকায়! নামজাদা নায়িকা থেকে শুরু করে অনাম্নী অঙ্গনা, সব্বাই মাথা কুটে মরছেন শহিদের এই সিদ্ধান্তে। মাহি গিল তো স্পষ্টই কাকুতি-মিনতি করেছেন। ভাবটা এমন, যদি চুলই না থাকল, তবে আর রইলটা কী!
কিন্তু শহিদ-ই বা কী করেন! চরিত্রের প্রয়োজন হলে কত কী-ই না করে থাকেন নায়ক-নায়িকারা, তা নিয়ে এমএমএস-ও ছড়িয়ে পড়ে, আর এ তো সামান্য চুলের গোছা! তা বলে একদমই যে দোনামোনা ছিল না নায়কের মনে- এমনটাও কিন্তু নয়। বরং যে দিন থেকে উইলিয়ম শেক্সপিয়রের ‘হ্যামলেট’ অবলম্বনে বিশাল ভরদ্বাজের ‘হায়দার’ হতে রাজি হয়ে গিয়েছেন নায়ক, সেই দিন থেকেই হ্যামলেটের দ্বিধাদ্বন্দ্ব গ্রাস করেছে তাঁকেও। তিনিও ভুগছিলেন হ্যামলেটের মতোই দোলাচলে- ‘টু বি অর নট টু বি’! চুল রাখব না কুল রাখব! বাবা পঙ্কজ কপূর তো অভিনয়ের স্বার্থে কত কিছু করেছেন, এবারে যদি সেই বংশগরিমায় কলঙ্কের মরচে পড়ে? তাছাড়া বাবা কপূর একদা অভিনয় করেছিলেন ওই বিশাল ভরদ্বাজ আর শেক্সপিয়রের ‘ম্যাকবেথ’-এর মিলিজুলি ‘মকবুল’-এ; এবার যদি ছেলে কপূর হ্যামলেট থেকে হায়দার হতে না-ই পারল, তবে আর বাপ কা বেটা ফর্মুলা কেমনে থাকে?
শেষমেশ অবিশ্যি কুলটা-ই থাকল! ট্যুইটারে উপচে পড়ল নায়কের মনের রোদন-ধ্বনি। ‘এখন হায়দারের স্ক্রিপ্টের বাকিটুকু ঝালিয়ে নিচ্ছি। বেশ নার্ভাস লাগছে; আর উত্তেজিতও! আর তো মোটে চারটে দিন রয়েছে হাতে, মাথার চুলে হাত বোলানোর জন্য’! ব্যস, আর কী! খোদ নায়কের যখন এমন মনের বেদন, তখন ভক্তরা তো ধুয়ো তুলবেই। ট্যুইটারেও তাই শুরু হল ‘ডোন্টগোবল্ডশহিদ’ ট্রেন্ড। হাসবেন না, এটাই এখন এই দেশের সেরা ট্রেন্ড ট্যুইটারে। যে যা পারছেন, লিখে চলেছেন এই বালকান্ডের ইতিহাস। মেয়েরা বেশিরভাগই দুঃখিত আর ছেলেরা তাঁদের দুঃখ দেখে ঈর্ষাজর্জর! এমন তুলকালাম অবস্থার মধ্যেই অবশেষে সেই দিন এসে গেল। সেন্সরের কাঁচি যেমন সিনেমাকে গ্রাস করে, সেভাবেই ২৯ জানুয়ারি শহিদের চুলে পড়ল নাপিতের হাত। তারপর? ‘চপ চপ ডে’, এটুকুই শুধুমাত্র ট্যুইট করে জানিয়েছেন নায়ক।
এই জায়গায় এসে রীতিমতন বিতর্কও তৈরি হয়েছে নায়কের মস্তক-মুণ্ডন নিয়ে। ব্যাপারটা শুধুই থেমে নেই ভক্তদের অনুরোধ-উপরোধে। এক দলের বক্তব্য, অভিনেতার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের কোনও মানেই হয় না! আসলে কিছু দিন আগেও তো শহিদের বাজার ভাল যাচ্ছিল না, এখন যদি ন্যাড়া হয়ে সেই পর্ব ফের দোরে কড়া নাড়ে? সেই ভয়ে যদি পিছিয়ে যান নায়ক? তখন তো শুধুই সেন্সর নয়, জনতার দাবিও নিয়ন্ত্রণ করবে ছায়াছবিকে- তৈরি হচ্ছে এমন একটা আক্ষেপের জায়গা। অন্য দলের বক্তব্য, অভিনেতার মাথা ন্যাড়া করা, তা সে শাবানা আজমি-নন্দিতা দাশ হোক বা শহিদ- কী যায় আসে? আরও তো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটছে চারপাশে মাথা ঘামানোর জন্য।
সে যাই হোক, প্রতিবেদকের বক্তব্য একটু ভিন্ন। ডেনমার্কের রাজপুত্র কি আদৌ মুণ্ডিত মস্তক ছিলেন? অবশ্য এও ঠিক, বিশাল ভরদ্বাজের ভারতীয় ওথেলো ওমকারাতেও একটি মুণ্ডিত-মস্তক চরিত্র ছিল। হয়তো এ নিতান্তই পরিচালকের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ; হয়তো নয়। এই ‘টু বি অর নট টু বি’-র জবাব তাহলে কোথায়?
বাংলাদেশ সময়: ১৮:৩৪:৫৭ ৪৪৮ বার পঠিত