বঙ্গ-নিউজ ডটকম:বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) প্রায় ৫৮ কোটি টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে এই পরিমাণ টাকা বকেয়া থাকলেও তা পরিশোধ করছে না। বরং প্রভাবশালী মহলের প্রভাব খাটিয়ে ‘বুক ফুলিয়ে’ চলছে তারা। আর চাপে পড়ে বকেয়া জিইয়ে রাখতে বাধ্য হচ্ছে বেবিচক।এমন পরিস্থিতিতে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে বেবিচক। দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে তাদের ফ্লাইট অপারেশন বন্ধ করে দেয়ার কথা ভাবছে তারা। এর আগে একই রকম কারণে জিএমজি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট অপারেশন বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।
বেবিচক সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন বিমানবন্দর ব্যবহারজনিত কারণে এরোনটিক্যাল ও ননএরোনটিক্যাল বাবদ ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কাছে বিপুল পরিমাণ অর্থ বকেয়া রয়েছে।
বিমান সংস্থাটির কাছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাওনা ৫১ কোটি ১৫ হাজার ২০৭ টাকা। এর মধ্যে এরোনটিক্যাল পাওনা ৪৫ কোটি ২৬ লাখ ৬২ হাজার ৬৩৬ টাকা। ননএরোনটিকাল পাওনা ৫ কোটি ৭৩ লাখ ৫২ হাজার ৫৭১ টাকা।
চট্টগ্রামের শাহআমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বকেয়া রয়েছে ৪ কোটি ৮০ লাখ ৭৪ হাজার ৭০৩ টাকা। এরোনটিক্যাল পাওনা ৩ কোটি ৯৬ লাখ ২৯ হাজার ৭৭৯ টাকা। ননএরোনটিকাল পাওনা ৮৪ লাখ ৪৪ হাজার ৯২৪ টাকা।
সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বকেয়া রয়েছে ১৯ লাখ ৬৭ হাজার ৬০৭ টাকা। কক্সবাজার বিমানবন্দরে বকেয়া ৩৬ লাখ ৫৫ হাজার ৫৬২ টাকা। সৈয়দপুর বিমানবন্দরে বকেয়া ১৭ লাখ ৮১ হাজার ২১ টাকা। রাজশাহীর শাহ মকদুম বিমানবন্দরে বকেয়া ১৭ লাখ ২৩ হাজার ৯৪১ টাকা। বরিশাল বিমানবন্দরে বকেয়া রয়েছে ৭ লাখ ১২ হাজার ৪৮৪ টাকা। এছাড়া যশোর বিমানবন্দরে বকেয়া রয়েছে ৮২ লাখ ৬০ হাজার ৭২৩ টাকা।
বেবিচক জানিয়েছে, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ বকেয়া পরিশোধ না করায় এটি অডিট অধিদপ্তর থেকে আপত্তি হিসেবে উত্থাপিত হয়েছে। পাওনা আদায়ে জোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। বকেয়া আদায় না হওয়া পর্যন্ত পরবর্তী নবায়ন স্থগিত রাখতে বলেছে অডিট অধিদপ্তর।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে দায়িত্বশীল কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, বেবিচক ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মাধ্যমে প্রভাব খাটিয়ে বকেয়া পরিশোধ করছে না ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ।
সিভিল এভিয়েশনের নিয়ম অনুযায়ী, এরোনটিক্যাল ও নন-এরোনটিক্যাল চার্জের বিল সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সকে পাঠানোর ১৫ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এক মাস পার হয়ে গেলে ৬ শতাংশ সারচার্জসহ তা পরিশোধ করতে হবে। যদি কোনো এয়ারলাইন্স নিয়মিত বকেয়া চার্জ প্রদান না করে, তবে বিমান সংস্থাটির এওসি বাতিল করে দেয়া হবে। অর্থ্যাৎ ওই এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট অপারেশন বন্ধ করে দেয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মাহমুদ হোসেন পরিবর্তনকে বলেন, “ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কাছে সিভিল এভিয়েশনের ৫৮ কোটি টাকার বেশী বকেয়া রয়েছে। যদি তারা তা দ্রুত পরিশোধ না করে তবে অভ্যন্তরীন রুটে তাদের ফ্লাইট অপারেশন বন্ধ করে দেয়া হবে।”
তিনি বলেন, “ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ বিদেশের সিভিল এভিয়েশনের পাওনা অর্থ সময় মত পরিশোধ করে, কিন্তু দেশের সিভিল এভিয়েশনের পাওনা দিতে চায় না। আমরা দেশের বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলোকে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে থাকি, কিন্তু তারা বকেয়া রেখে দিচ্ছে। তাই যদি তারা দ্রুত বকেয়া পরিশোধ না করে, তবে জিএমজির মতো তাদের ফ্লাইট অপারেশনও বন্ধ করে দেয়া হবে।”
এ ব্যাপারে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের মার্কেটিং সাপোর্ট ও জন-সংযোগ কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম পরিবর্তনকে বলেন, “আমরা বকেয়া পরিশোধ করে আসছি। যদি পরিশোধ না করা হয় তবে সিভিল এভিয়েশন ফ্লাইট অপারেশন করতে দিত না।”
এ পর্যন্ত কত টাকা বকেয়া পরিশোধ করা হয়েছে -জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, “আমি জানি না কত টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এটা রেভিনিউ সেকশন জানতে পারে।”
বাংলাদেশ সময়: ৮:৪৭:৫৮ ৫৭২ বার পঠিত