রাসেদুল হাসান লিটন(বঙ্গ-নিউজ)ঃতেত্রিশ বছর আগের আলোচিত মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর হত্যা মামলার রায় জানা যাবে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি।
দফায় দফায় পিছিয়ে যাওয়া এ মামলার যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে বুধবার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ হোসনে আরা আক্তার রায়ের এই দিন ঠিক করে দেন।
এ মামলার প্রধান আসামি সাবেক সেনা শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন, বর্তমানে যিনি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত।
যুক্তিতর্কের শুনানিতে উপস্থিত হতে সরকারি প্রটোকলের গাড়িতে চড়ে বেলা ১১টার দিকে আদালতে আসেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ। ছোট ভাই জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিএম কাদেরকে এ সময় তার সঙ্গে দেখা যায়।
মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত বাকি চার আসামির মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত মেজর কাজী এমদাদুল হক ও অবসরপ্রাপ্ত লেফটেনেন্ট কর্নেল মোস্তফা কামাল উদ্দিন ভূইয়াও যুক্তিতর্কের শুনানিতে আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
বাকি দুই আসামি অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আবদুল লতিফ ও অবসরপ্রাপ্ত লেফটেনেন্ট কর্নেল শামসুর রহমান শামসের বিরুদ্ধে এ মামলার কার্যক্রম হাই কোর্টের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে।
এ মামলার পাঁচ আসামিই উচ্চ আদালতের জামিনে রয়েছেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের (অস্থায়ী) এজলাসে এই বিচার চলছে।
১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় চট্টগ্রামে একদল সৈন্যের গুলিতে নিহত হন জিয়াউর রহমান। ওই ঘটনার পর পুলিশের হাতে আটক হন জেনারেল মঞ্জুর। পুলিশ হেফাজত থেকে ১ জুন চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নেয়ার পর তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
এর ১৪ বছর পর ১৯৯৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন মঞ্জুরের ভাই। ওই বছরই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তখনকার সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দ অভিযোগপত্র দেন এবং বিচার শুরু করে আদালত।
তবে সরকারবদল এবং দফায় দফায় রাষ্ট্রপক্ষের সময়ের আবেদনে মামলার বিচারকাজ শেষ পর্যায়ে আসতে লেগে যায় আরো ১৮ বছর।
মামলার শুনানির সময় আত্মপক্ষ সমর্থনে এরশাদ বলেন, জেনারেল মঞ্জুরকে জীবিত অথবা মৃত ধরিয়ে দেয়ার জন্য তৎকালীন সরকার রেডিও টিভিতে ৫ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। তবে ওই ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।
“ধরা পড়ার পর মেজর মঞ্জুরকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে আনার পথে বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা তাকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে এবং পরে নিরাপত্তা প্রহরীর সঙ্গে গুলি বিনিময় হয়। একপর্যায়ে আবুল মঞ্জুর গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। পরে হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান।”
তখনকার স্বরাষ্ট্র সচিব মাহবুবুজ্জামান এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেয়া জবানবন্দিতে বলেন, তখনকার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের নির্দেশে পুলিশ আবুল মঞ্জুরকে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে।
২০১২ সালের ২ অক্টোবর নাজিমউদ্দিন রোডের বিশেষ এজলাসে ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত দায়রা জজের কাছে আত্মপক্ষ সমর্থন করে লিখিত বক্তব্য দাখিল করেন এরশাদ। মামলার অপর আসামি অবসরপ্রাপ্ত মেজর কাজী এমদাদুল হকও আদালতে লিখিত বক্তব্য দেন।
তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল কাহার আকন্দসহ রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২৮ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয় এ মামলায়। তখনকার সেনা প্রধান আবু সালেহ মো. নাসিম এবং তৎকালীন মহানগর হাকিম আবুল হাসেমও ছিলেন সাক্ষীদের মধ্যে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:১৭:৫০ ৩৬৪ বার পঠিত